ঈশ্বরের ব্যক্তিগত
নোটবই থেকে
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
মহাকবি রিল্কের
প্রতি
অন্তিম শিক্ষক তুমি, তুমি হও প্রথম শিক্ষিকা
গর্ভপাঠকালশেষে । নিরালোক আলোকবর্তিকা
তুমিই আদিমতম উদ্গীরণ ও কৃষ্ণগহ্বর
পার হয়ে বিস্মৃতিকে লিখে দাও সব নির্দেশিকা।
-অবধানে অপারগ আমি হে, অধম, সাধ
লিখেযাব গুহাগাত্রে ক্ষুদ্রপাদটীকা...
উড়ন্ত দেবদূতপর্ব
‘শঙ্খচিল,
শালিকের বেশে’
করোনা নির্মাণ কোনো
স্মৃতিস্তম্ভ অথবা তোরণ
তার তরে।
তার তরে
প্রতিটি গোলাপ
ফুটুক আর ঝরেযাক চুপে
মানচিত্রে, প্রতিটি শহরে।
কোনো এক হেমন্তের শেষে
সমূহ গোলাপ গেলে ভেসে
গোলাপের চেয়ে কিছু বেশী আয়ু নিয়ে
থাকবে সে এসে
আমাদের খোড়ো ঘরে –
‘শঙ্খচিল, শালিকের বেশে’।
[স্মরণঃ কিশোরী আমনকর]
অস্তিত্বের
তেমাথার মোড়ে
আমাদের ভগ্নস্মৃতি, খন্ডঅস্তিত্বের তেমাথার মোড়ে কোনো কম্পাস,
পেন্ডুলাম নাই।
কেবল কুয়াশা আছে। তাই
সম্ভাবনা নাই
আমর্মবিদারী কোনো
উত্তরের অথবা প্রশ্নের।
অথচ শব্দই সত্য । পলাতক সব ঈশ্বরের
শেষ সত্য । না’কি নৈঃশব্দের
দ্বারাই সূচিত সেই প্রথম সাঁতার
স্মৃতির গহিন জলে
পূর্ণ অস্তিত্বের? ...
বাসনা ও নানান জিগীষা
পাহাড়, পর্বত, মেঘ, বলাকা ও সমুদ্রের মতো
আমরাও চাইনা কি ভারহীন উড়েযাওয়া
আকাশের মর্ম অবধি?
-অথচ গলায় কলসি, বাসনা ও নানান জিগীষা
আমাদের ডানা ভেঙ্গে
চক্রবালে হাসে নিরবধি।
জানালা
বোধহীন দেওয়াল দুদিকে।
সার সার জানালার থেকে
রুগ্ন নানা আলো
পড়ে আছে মৃত রাত্রিপথে।
কত রাত?
বহু জানালাতো
এরই মধ্যে বন্ধ হয়েগেছে।
কবন্ধখচিত এই পথে
কিভাবে নির্ণয় করবে কোন্ জানালাতে
তোমার নিয়তি জেগে
কিংবা ঘুমে আছে?
কম্পাস
নিয়তির ছায়া আমি না’কি
নিয়তিই আমার ছায়াতে
কুঁড়ি থেকে মহীরূহ হয়
মুহুর্মুহু দিবসে ও রাতে?
-এই প্রশ্ন বল্লমের মতো
উড়ে যায়। কেঁপেওঠে ঘাস
চক্রবালে।
কাঁপাস্বরে বলেঃ
“নিয়তি কি তোমার কম্পাস?”
আমি হাসি। নিয়তিও হাসে।
শুয়ে থাকি নিয়তির পাশে।
স্বরলিপি
নৈঃশব্দই নিবিড় আশ্রয়
ঈশ্বরেরো। মন্ত্রপাঠ নয়।
নৈঃশব্দই সঠিক শীৎকার
রতিরঙ্গে দীপ্ত প্রেমিকার।
নৈঃশব্দের সূচীভেদ্যতায়
যে নূপুর চুপে বেজে যায়
প্রার্থনার হল্লা ভেদ করে
সে গহনে তোমাকে বাজায়।
পরের পত্রে তুমি, প্রিয়,
নৈঃশব্দের স্বরলিপি দিয়ো ...
অদ্য এই অনিঃশেষ রাতে
তোমার ‘ভাগ্য’ আর আমার ‘নিয়তি’
পাশা খেলছে বসে আজরাতে।
হারজিৎ সুনিশ্চিত কিছুই হচ্ছেনা -
সরাসরি সম্প্রচারে তবু রয়েছে সঞ্জয়।
ফিলিপ্সরেডিও নিয়ে চুপে
বসে আছি গাড়িবারান্দাতে।
তোমার ‘ভাগ্য’ ভর করে আমার ‘নিয়তি’ নিয়ে আমি
ছিনিমিনি খেলায় মেতেছি।
আমার ‘নিয়তি’র প্রতি অটুট বিশ্বাসে
তোমার ‘ভাগ্য’কে তুমি অবলীলাক্রমে
বাজি রেখে এসেছো মেলাতে।
তোমার ‘নিয়তি’ আর আমার ‘ভাগ্য’ তাই বুঝি
কপটপাশাতে মগ্ন
অদ্য এই অনিঃশেষ রাতে ...
অর্ফিয়ুসের স্বরলিপিপর্ব