"রাতের
রেলগাড়ি"
যেন সিগারেটের ছ্যাঁকায় একটি বৃত্ত নির্মীত হল
কুয়াশামশারির মসৃনে।সঙ্গে সঙ্গে তার মর্মচোখ দেখলো এমনই একটি রেলগাড়ির প্রবেশ,
স্টেশনমঞ্চে, যেখানে সে বালক, যেখানে পিতা তার অভিভাবক,মাতা,তার সহোদরকে কোলে নিয়ে
উদ্গ্রীব,যেখানে আবহ ভোরের।আকাঙ্ক্ষা গন্তব্যের। সে টেরপেলো পিছুটান। এই সমস্তই
পিছুটান।সে হাসলো। এইসব মনেপড়া, এই সব গন্তব্য। মনে মনে হাসলো। মুখে কোনো ছায়া
পরলো কি'না কেজানে। এই সমস্ত টান, পিছুটান ছিঁড়ে দিতেই তো ওই আসছে রাতের
ট্রেনগাড়ি। রেলগাড়ি।মেলগাড়ি।এই গাড়ির গন্তব্য থাকলেও প্রতীক্ষমান তার তো কোনো
গন্তব্য নেই। এই ইস্টিশানে এই গাড়ি থামেনা।থামবেনা।যমদূতের বীরত্বে এই শূন্য
প্ল্যাটফর্ম কাঁপিয়ে দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে দিয়ে চলেযাবে। হয়তো পরের সকালে কোনো
ঝাড়ুদার, কোনো যাত্রী, কোনো রেলবাবু খুঁজেপাবে তার এই দেহটিকে অথবা মৃতদেহটিকে। হয়তো
হৈ চৈ হবে, থানাপুলিশ হবে। হয়তো কিছুই হবেনা। যাই হোক্ আর যা'ই না হোক্ তাতে তার
কি আসে যায়? আর মাত্র কয়েকটি সেকেন্ড তাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে দাঁতে দাঁত
চেপে। আর মাত্র কয়েকটি সেকেন্ড - তেরো,বারো,এগারো,দশ -"আচ্ছা,ধলেশ্বরীর লাস্ট
লোকালটা কি এই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে?" - নির্জন প্ল্যাটফর্মের প্রায় অন্ধকার
প্রান্তে কে? কে তাকে প্রশ্ন করে? প্রশ্ন করে গন্তব্য বিষয়ে?স্নায়ুর নিজস্ব নিয়মে
তার চোখ যায় প্রশ্নকর্তার দিকে। সে, না'কি তার চোখ, দেখে,প্রশ্নকর্তাকে,যে,হয়,
মানুষ। নিতান্তই নশ্বর একটি গৃহপালিত দ্বিপদ। যদিও প্রশ্নের উত্তরে তার মর্ম বলেঃ
"আমি জানিনা। আমি আর কোনো গন্তব্যের খবর জানিনা" তথাপি সমস্ত পিছুটান
নিজহাতে কেটে দেওয়ার পূর্ব মুহুর্তে কোনো নশ্বর প্রাণীকেই, প্রাণকেই, আশাহত করতে
চায়না সে। যদিও মুহুর্ত গুলি মুহুর্মুহু ছুটেযাচ্ছে জিরো আওয়ারের দিকে তথাপি সে
নিশ্চিত বোধ করে যে, নশ্বরটিকে উত্তর দিয়েও সে ছুঁতে পারবে জিরো আওয়ারকে।সে বলে
... কি বলে? বলে না'কি কেবলি ঠোঁট নড়ে তার? বাক্যগুলি ডুবেযায় রাত্রিমেলের
গমনঝাপটায়। ... তার উত্তরে তৃপ্ত নশ্বর, গৃহপালিত দ্বিপদটি যখন তার সঠিক
প্ল্যাটফর্ম অভিমুখে যেতে পা বাড়ায়, সে, তখুনি,দেখে,কুয়াশামশারি ছিঁড়ে দেখে, তার
রাত্রিমেল্ তার জিরো আওয়ারকে পার হয়ে মিশেযাচ্ছে অন্য কুয়াশায়, আরেক অন্ধকারে।