সকাল,
স্বকাল
(দুই তরঙ্গ)
নিজের মতো নিজের ভিটেটিকেও
অচেনা মনেহয় কছুদিনের অসাক্ষাতে যেমন হয়েছিল সেবার বড়মামা এসেছিল যে বছর আর বাবুর স্ট্রোক
হওয়ার খবর এসেছিল দুপুরে তন্দ্রাদিদিদের বাড়িতে ১১৮ ফোন নাম্বার নাম্বার প্লিজ কল বুকিং
এর যুগ পাড়ায় প্রায় একমাত্র টেলিফোন আশ্চর্য রহস্যময় ফেলুদার কাছে ফোন আসে ক্রিং ক্রিং
বেজে ওঠে দীপক চ্যাটার্জি র টেলিফোন ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দেয় দীপক আর রিসিভারে
কান রেখে দীপকের সহকারী রতনলাল শোনে ফোনের অন্যপ্রান্তে লালবাজার থানার ওসি মিস্টার
গুপ্ত খুন বিভৎস খুন মুখার্জি ভিলাতে ছোট কাকু জানায় গতকাল রাতেই ঘটেছে ঘটনা বাবু ফিরছিলেন
গান শেখানোর কাজ সেড়ে ঘরে ফিরেই মাস্টারবাবু আপনাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন শীতের রাত্রেও
ঘামছেন এভাবে ও কিছুনা টায়ার্ড লাগছে বলতে বলিতেই সকালে মেডিকেল কলেজে আনার পরে ফোন
ছোটকাকুর বাবা সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছিল ক্লাস থ্রি ফোরের কথা বাবা বাড়ি থাকবেনা
অতি মস্তি সংবাদ আমদের দুই ভাইয়ের বাবু বাবার জন্মদাতা পিতা নন তখনো ঠিক বুঝতাম না
তবে বিয়ে না করলে ছেলেমেয়ে হয়না জানতাম আর বাবু চিরকুমার এই খটকা উত্তর আদতে বাবু বাবার
বাবার মামা গান পাগল পরের জায়গা পরের জমি কানে বাজে কানে বাজে এপারে মুখর হল কেকা ওই
একা মোর গানের তরী তখন মেডিকেল কলেজের জেনারেল ওয়ার্ডে বাবা আর ছোটকাকু রাত জাগছে পালা
করে বাবার ক্যামোথেরাপির সময় মাত্র একরাতই আমি জেগেছি হাসপাতালে মা আর ভাই জেগেছে আর
খবর এসেছে সেই ১১৮ টেলিফোনেই স্ট্রোক হয়েছে বাবুর মা থম ধরেগেছে অতশত না বুঝে বাবু
সেড়ে উঠবেন তবে সময় লাগবে বাবার থাকতে হবে আরো কিছুদিন ৫৬ কিমি দূরের আরেক শহরে তদ্দিন
আনন্দ আমাদের আর বড়মামা বিলাত থাকেন এসেছেন অনেক বছর পরে তাই ঘরে তালা দিয়ে মার সঙ্গে
দুইভাই সেই ৫৬ কিমি রেলে পাড়ি দিয়ে ইস্টিশন তারাপুর থেকে রিক্সায় মামাবাড়ি মামাদের
বাড়ি যদিও নয় লম্বা গলীর প্রান্তে পাতকুয়ার ডানদিকে লম্বা গলী ধরে যেতে যেতে মার একপায়ের
চটি কিকরে হারাল কেজানে মেডিকেল কলেজে মাকে নিয়ে বড়মামা দেখে এল বাবুকে বাবার সঙ্গে
দেখা আমাদেরো মেডিকেল কলেজে অন্যরকম বাবাকে দেখলাম না কামানো দাড়ি রোগা ছোটকাকুর চাকরি
মেডিকেল কলেজেই ছোটকাকুর সঙ্গে পলস রেস্টুরেন্টে আমরা দুইভাই একটা ড্রাম বাজানো চাবিপুতুল
বায়না ধরে আমার বড়মামা ক্রিকেটের স্টাম্প, বল, ব্যাট আর সব মাসীদের মধ্যে ফুলমাসীই
শুধু বই নীহার রঞ্জন গুপ্তর কিশোর অমনিবাস রাজকুমার আর একটা গল্প নিঝুমপুর নিঝুমপুর
দিয়ে আরম্ভ আর সুমথনাথ ঘোষেরও কিশোর রচনা আইভ্যান হো বাংলায় তাই ফুলমাসিকে এরপরে আর
না দেখলেও আমার ফেভারিট মা ধরে পড়লো বড়মামাকে বাড়ি আমার তোমাকে দেখে যেতে হবেই,দাদা,
অনেকপরে বুঝেছি পূর্ব বাঙলা থেকে তাড়া খাওয়া আসামে আসামীদের হাতে খেদা খাওয়া বাঙালবাঙালীদের
বাড়ি মানে ঠিক কি অবসেশন বাসে চেপে আসা হল কিমি ৫৬ পারহয়ে মা বমি কইরস বাসে করলো আমিরাও
নেমে রিক্সা নিয়ে বাপীদের বাড়ি থেকে চাবি বাপীও আছে ওই ফোটোতে বড়মামার তোলা নিজেই ওয়াশ
করে পাঠাত বড়মামা কেরোসিন স্টোভে রান্না নেই কেরোসিন প্লাস্টিকের ঝাড়িকেন হাতে মা বড়মামা
আবার বাপীদের বাড়ি এই বাড়ি আমাদের দখলে প্রায় দশদিনের অনুপস্থিতির অসাক্ষাতের পর আহা
এই বাড়ি এই আমাদের তবু কেমন যেন অচেনা অচেনা অভিমানী অভিমানী লাজুক লাজুক ধুলোর আস্তরণ
এখানে ওখানে পড়ার টেবিলে ইন্দ্রজাল কমিক্সে পুজা সংখ্যা আনন্দমেলায় ঘাস গজিয়েছে সিঁড়ি
ঘিরে আগে গজানো ঘাস লম্বা হয়েছে মাথায় বেড়ায় বেড়ায় রিফুজি লতা হাতে দা নিয়ে বাবা সাফ
করত ধূলার আস্তর রিফুজি লতার পাতাতেও শেফালীর রোগা ডালপালাতে পাতাতেও লাগিয়েছিলেন
দিদিভাই এই শেফালী চারা গৃহপ্রবেশ হওয়ামাত্র নিজের হাতে এমনই শেফালিগাছ ছিল সেখানে
বাবা খুব ভালবাসতেন শেফালী মানে আদিবাড়িতে বাংলাদেশে বাবা মানে ঠাকুর্দা আমার বাবার
গাছগুলি তখন অবশ্য নিতান্ত শিশু নাহলেও কিশোর বড়জোর যুবক অর্জুনগাছেরা পেছনের দিকে
চারজন নদীর পারে দুইজন দাঁড়িয়ে যে দুইজন ঝুঁকেগেছে নদীর দিকে তারা আমার গাছবাড়ি অরণ্যদেব
আমি তাদের পাতা গজিয়ে আমার বৃক্ষাসনটি ঢাকা পরেছে তবু যাওয়ার উপায় নেই ঘাস বেড়ে জংলা
গমনপথে অরণ্যদেরবের পাকঘরের কিনার ঘেঁষে চিলতে বারান্দা ইঁট বসানো সিমেন্ট তখনো পড়েনি
গায়ে পাকঘরেও বাঁশের বেড়া কোঠার দেওয়াল আর মাথার উপরের চালটুকু হলেই উঠে আসব বাবা বলতো
রোজউ প্র্য বাড়ি যখন তৈরি হচ্ছে যা হোক একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই বাবু বলতেন আসলেই কাজ
দেখতে লম্বা চশমা পরনে পাকা চুল ব্যাক ব্রাশ ক্যাপস্টেন সিগারেট কামানো মুখ এখন হাসপাতালে
আমাদের চিনতে পেরেছেন কিনা কেজানে ভাবি নাহলে দু চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল কেন অবিরাম এখন
ভেবে মনেহয় চিনেছিলেন হয়তো পাকঘরের কিনার ধরে পিছবাড়িতে বাঁশঝাড়ের তলা থেকে আমার নদী
আমার গাছবাড়ি শীত শীত আদতে ছিল হেমন্ত পরে টের পেয়েছি তাই আরো ধূসর আরো শূন্য মনে হচ্ছিল
সব মড়ে আসা রোদে পড়ে আসা বেলায় কারেন্টের লাইনও কাটা দেখেছিল মা আলো জ্বালাতে গিয়ে
সন্ধ্যাবেলা মনে এলো অনেক বছর পরে ভারিকিনোতে নিজগৃহে ফিরে আসা সন্ধ্যাবেলা লারার সঙ্গে
জিভাগোর পড়তে পড়তে আবার লন্ঠনের আলোতে রাত্রি আগেও তবু সেদিন অন্যরকম বড়মামা আর মা
গল্পে মত্ত আর আমাদের স্বাধীনতা অন্ধকারে যদিও ছোট বাড়ি এখন বুঝি তখন মনে হতো
বিপুল যেন ভারিকিনোই তবু এখনো অত রহস্য আর নেই কোথাও যা ছোটোবাড়ির আনাচে কানাচে রোদ
পড়ে আসছে বড়মামা দাঁড় করালো মাকে মাকে ঘিরে আমরা বাপীও আছে ওই ফোটোতে গেটের পাশে রাস্তায়
বাড়িটাও যাতে আসে ফোটোতে সামনের বারান্দায় দুটি রোগা সিমেন্ট খুঁটি চূনকাম হয়েছিল অনেক
পরে দুই ধাপ সিঁড়ি শেফালীগাছ ফোটোটাতে যেন উঠে এসেছিল হেমন্তের হাহার সঙে অনেকদিন
পর খালি বাড়িতে ফেরার অভিমান অপরিচয়।
বাড়িটা কেন আজো রইলোনা ওই রকম?
আমি ওই বাড়িটিই ফিরে চাই।