প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Sunday, November 10, 2019

"আর কি কখনো কবে... "

"আর কি কখনো কবে... "

এইতো বিকাল নামছে। নভেম্বর মাসের বিকাল। এখুনি
সিদ্ধার্থ আসবে। গেটের আওয়াজ পাওয়া যাবে। মা'কে
বলব 'মা, দুকাপ চা'। তারপর বিকালের রোদ পিঠে করে
দুজনে বেরিয়ে পড়ব, সাইকেলে কিংবা পায়ে হেঁটে। 'কাকু'র
দোকান থেকে চারমিনার ধারে কিনে মোড় পারহলে
আদিত্যস্যারের বাড়ি, রূপসী বাংলার মতো
ছায়াঘন, রহস্যে শানিত। ( এখানে থাকেনা কেউ বহুদিন
হলো। স্যারের অসুস্থ ছেলে কিজানি সে বেঁচে আছে কিনা।
স্যারকেও দেখিনি যে কতো যুগ হল। অথচ ইস্কুলজন্মে,
কোনো এক যুগে স্যার ছিলেন অনেকেরই হিরো) পারহয়ে
সিগারেট জ্বালাবো সাবধানে। নভেম্বররোদ পিঠে আমাদের
যাওয়ার কিনারে নটীখালও কুশিয়ারা থেকে বয়ে যাবে
লঙ্গাই'এর টানে। আসবে বাঁশের পুল, ডানদিকে ( বাঁশের পুলটি
কবে রাতারাতি সিমেন্টের ব্রীজ হয়েগেছে। রাতারাতি পরবাসী 
হয়েগেছি আমরাও কবে)। পারহলে বনমালী রোড। মস্তান
হীরাপান্না আর সুপারি-নারকোল গাছ, টিলা আর গোরস্থান
হয়ে বনমালী রোডও শেষে লঙ্গাই নদীতে মিশেছে। হাতের
ডাইনে রেখে তাকে আমরা যাবো সোজা হেঁটে হাসপাতাল
রোডে। হাসপাতাল রোড ঠিক নয়, একে লোকে পাগলা পট্টি
বলে - কেজানে কবের কোন সাধক, প্রেমিক কিংবা পাগলের
স্মরণে, সম্মানে। ( ননী পাগলা, যিশুপাগলা বলা হতো যাঁকে –
ঝোলা ব্যাগে বাইবেল ও যিশুবাণী নিয়ে শহরের পথে ঘুরে ঘুরে
পাঠ করে শোনানো ব্যতীত যাঁর আর অন্য কোনো পাগলামি
দেখিনি কখনো তাঁর বাস পাগলা পট্টিতে কিন্তু ছিলনা কখনো।)
পাগলাপট্টির মোড়ে পৌঁছতে পৌঁছতে নভেম্বররোদ মরেগিয়ে
সন্ধ্যা হচ্ছে। অদূরেই রাজ্যহীন মহারাজ আর পত্নীহীন
স্বামীদের রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়মিত নামতাহেন 'খন্ডন  ভব বন্ধন' 
চলছে তারস্বরে, সুরে ও বেসুরে। তিষ্টুদা তখনো হয়ত বদলি নিয়ে
পাকাপাকি আসেনি এখানে। সম্ভবত শনিরবিবারে আসতো 
– পরিস্কার মনে নেই। তবে 'স্বস্তিকা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে' আমাদের 
আড্ডা,নিয়মিত, তিষ্টুদাদের বাড়ি আরেক কাপ চা খাওয়ার পরে। 
নভেম্বর মাসের রাত্রি এতক্ষণে ডালপালা মেলেছে শহরে। অদূরেই
কুশিয়ারা। স্বস্তিকাতে খদ্দের বলতে আমরা তিনজন ছাড়া
মালিকের পাত্র মিত্র দু চারজন হবে। মুখোমুখি শূন্য  কোর্টবাড়ি। 
মামলা লড়তে যারা আসে – সকালে দুপুরে – তাদের শিঙারা, চা
স্বস্তিকার আদত ব্যবসায়। সন্ধ্যাহতে তাই শুনশান। তাই স্বস্তিকাতে
আমাদের এ নিভৃত আসর। বিল নিয়ে ভাবনা নেই। তিষ্টুদা
আছে। রীতিমতো চাকরি করে ক’বছর ধরে। নকশালবাড়ি
থেকে ঘুরে কথা রোজই কবিতা পেরিয়ে পৌঁছে যায় গানে। সিদ্ধার্থ
ভালো গায়। তিষ্টুদারো কন্ঠ সুরেলা। গাওয়ার আবেগে আমি যে
বেসুরো এই সত্য ভুলেগিয়ে মিলাই আমিও কন্ঠ 'শংখচিলে', 'হেঁই
সামালো ধানে'। মনেহয় সোনার ফসলে মানুষের স্বর্ণযুগ
প্রকৃতই আসে। ( যদিও রাজীব-জ্যোতি-জয়শ্রীরামে কালনেমির
লংকাভাগে আগেই নেমেছে)। ঘড়ির অবাধ্য কাঁটা সাড়েদশ
পার হয়েগেলে আমাদের ঘরেফেরা পালা হেঁটে হেঁটে, মৃদুস্বরে
গান গেয়ে গেয়ে। হাটমেন্ট রোড ধরে।  সরল খাঁর দিঘি
পারহয়ে। 'আপনারা এলে ভালো লাগে'। কয়েকদিন
না আসার পরে স্বস্তিকার মালিকজন একদিন বলেছিল আর
একদিন চা বানানো বালকটি এসে দিঘল স্বপ্নচোখ মেলে
বসেছিল সারাক্ষণ আমাদের পাশের টেবিলে। দেখি
ক্যালেন্ডারে নভেম্বর কবেই আবার এসেগেছে। অপেক্ষায়
বসে আছি। সিদ্ধার্থ কখন আসবে। তিষ্টুদা কি বাড়িতে
এসেছে? ছুটি নিয়ে এই শনিবারে?

সপ্তর্ষি বিশ্বাস
১০/১১/২০১৯

ঘুম ঘর