প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Friday, June 1, 2018

হার্মাদশহর ও ভায়োলা



হার্মাদশহর ও ভায়োলা

১।
তারপর একদিন বাস্তবিকই ফিরে এলো আকাঙ্ক্ষিত সেই নৌবহর।
হৈ হৈ রব উঠলো হেমন্তের সন্ধ্যাবেলা হার্মাদশহরে -

জাহাজপঞ্জরগত অস্থাবর এবং স্থাবরে যদিও শোণিতচিহ্ন সজাগ, তথাপি
দাসীবাঁদী, পাটরানী, বান্দা-খোজারা
ঝিকমিক করে উঠলো ইস্পাতবর্শার মতো দেবালয়ে, হারেমে, প্রাসাদে।
কচি কলাপাতহেন সুসজ্জিত পথে নামলো
সবুজ শিশুরা।

নিষিদ্ধ জলধি থেকে চুল ধরে তুলে আনা  সুগঠিত নিতম্বগুলিতে
উল্কি এঁকে দেওয়া হলো হার্মাদবিধিতে।

উৎসবের রাত্রি ফিরলো একদিন বাস্তবিকই হার্মাদশহরে।


২।
হার্মাদ এ শহরে তোমরা ভাইবোন - ভায়োলা ও সিবাস্টিয়ান
বেড়াতে এসেছো না'কি এ হার্মাদ শহরে কোথাও
তোমাদের পিতৃপরুষের অস্থি,স্মৃতি,করোটি এখনো
প্রতীক্ষায় নিদ্রারত পথিপার্শ্বে মাইলফলকহেন?
বাজেপোড়া কোনো বৃক্ষ আজো
সে সকল মীথ্‌,মিথ্যা,অন্যথায়
ইতিহাস জানে?

হার্মাদশহর ঘিরে উৎসবের রাত্রি ফিরে এলে
সূত্র সন্ধানে আমি একা পথে নামি
ছদ্মবেশে, সবার আড়ালে ...

 
৩।
যে ভাষায় কথা বলে এরা
ভায়োলা জানেনা সেই ভাষা। প্রার্থনার ভঙ্গিগত
যান্ত্রিকতা নিয়ে তবু দেখো কি সহজে ভায়োলা বসেছে
দাসীবাঁদী, পাটরানী, গণিকা ও খোজাদের পাশে।
সামনে আগুন জ্বলছে। রবাবের তালে
সিংহলী নারীর ত্রিবলী
দুলে উঠছে। ঢেউ লাগছে নিবিড় বদ্বীপে।
আগুনের গোলক দাপিয়ে
বামন ও পিগমীর দল উগড়ে দিচ্ছে রঙিন আগুন।
হার্মাদশহরজোড়া উৎসবের নিশীথশীৎকারে
ভায়োলা একলা আছে
গোরস্থানে জেগেথাকা শেষতম প্রদীপের মতো।

সাবধানী মার্জারিনীহেন আমি এই ভিড়ের যোনিতে
ঢুকেগিয়ে হাত রাখি - অতি ধীরে - ভায়োলার কাঁধে -


৪।
"কে আজ  এসেছে দেখো ভুল করে আমাদের ঘরে"
মাদারির মতো গাঢ় চমকে-দেওয়া স্বরে
বাক্যটি বলামাত্র টেরপাই এ দুর্গের সকলেই
দলবেঁধে চলেগেছে রাত্রি উদযাপনে -
যেখানে আগুন ঘিরে রবাবের তালে
দুলে যাচ্ছে সিংহলী নারীর ত্রিবলী -
অথচ ভায়োলা আজই
আমাদের বিষণ্ণ এ দুর্গে এসেছে ...


৫।
বিষাদদুর্গে একা ভায়োলা পরীর মতো ওড়ে
অবলীল তার চলা দেখে
মনেহয় এই দুর্গে কোনোজন্মে ভায়োলা এসেছে -
যেন সেই গতজন্মগত ছবিগুলি পাখির ডানার মতো তার ঘাগ্‌রা থেকে
লবণ বাতাস লেগে সারারাত ঝরে...
তূলোর পুতুল দিয়ে খেলাকরে কখনো ভায়োলা,
কখনোবা কথা ভাবে পালঙ্কের এক কোনে
দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে ...
পাকঘর লন্ডভন্ড করে আমি খুঁজে নিয়ে আসি
করোটির পানপাত্র গুলি। ভায়োলাকে সঙ্গ দিতে নিজে নিজে বলিঃ
"শেষবার এগুলিতে ঢেলে মদ খাওয়া হয়েছিল
কবে জানোনাকি"? - ভায়োলা বলেনা কিছু। ধীরে উঠে গিয়ে
ঝরোখার থেকে চেয়ে দেখে
যেখানে আগুন ঘিরে রবাবের তালে
দুলে যাচ্ছে সিংহলী নারীর ত্রিবলী।
ভায়োলারও ঢেউ ওঠে বুঝি?
ঢেউ জাগে নিবিড় বদ্বীপে?

৬।
সে অনেক অতীতের কথা। এ হার্মাদশহরে তখনো
ভায়োলা আসেনি। সে বছর পরাক্রান্ত শীতে
বল্গাহরিণমুন্ড বর্শামুখে গেঁথে
একজন সুপুরুষ বৃদ্ধ এসেছিল
কুয়াশায়, হার্মাদশহরে।
সরল খাঁর দিঘিটির ধারে অস্থায়ী তাঁবু পেতেছিল
নিজহাতে, নিজ পরিশ্রমে।
যদিও বাদামি টুপি আর ওভারকোটে
আপনাকে আগাগোড়া ঢেকে রাখতো,তবু
নিষিদ্ধ জলধি থেকে চুল ধরে তুলে আনা  সুগঠিত বহু নিতম্বিনী
দেখেছে বৃদ্ধের বুকে, বাহুতে ও পিঠে
নানাবিধ উল্কি করা আছে।
"নিজস্ব কাহিনী আছে, প্রাণ আছে প্রতিটি উল্কির" -
যে রাতে নেশার ঘোরে বলে ফেলেছিল
পরদিন থেকে আর
কেউ তাকে দেখেনি এ হার্মাদশহরে।
হরিণের মুন্ড গাঁথা সুঠাম বর্শা তার অস্থায়ী তাঁবুর কিনারে
প্রহরায় ও প্রতীক্ষায় থেকে বহু যুগ
একরাত্রে সুপুরুষ শাল হয়েগেছে।

ভায়োলার সাথে তার কোনোরূপ যোগ আছে কি'না
আমি তা জানিনা।
এ সকল মীথ, মিথ্যা কিংবা ইতিহাস
ভায়োলা কি জানে?

ভায়োলা, ভায়োলা, বল, কেন তুমি এসেছ এখানে?

৭।
এ হার্মাদশহর ঘিরে কোনোও পরিখা নেই। শুধু
সমুদ্র সাপের মতো ঘিরে আছে একে।
এ শহরে প্রত্যেক ঘরে ব্যক্তিগত হারেম রয়েছে,
ভাগাড় রয়েছে এক পাহাড়ের নিচে, দেবদূত ও দেবীরাও
থাকে সেখানেই। পাহাড়ের শীর্ষ থেকে কিছু মাইল নেমে
বিষাদদুর্গ আজো আছে কোনোমতে।
বিষাদকিশোরীদের মতো দেখি ভায়োলাও
তার ত্বক, নখ, স্তন, কেশদাম ও ডানা খুলেফেলে
বিশাদকূয়ার জলে স্নান করে একা।
ভায়োলার স্নানঘ্রানে নিশুত রাত্রেও
গাংচিল উড়ে আসে দ্বীপান্তর থেকে -
হার্মাদদ্বীপে অকস্মাৎ ভায়োলার নাম ধরে
কেউ ওঠে ডেকে -


৮।
উৎসবের রাত্রি ফিরলো একদিন বাস্তবিকই হার্মাদশহরে।
নিষিদ্ধ জলধি থেকে চুল ধরে তুলে আনা  সুগঠিত নিতম্বগুলিতে
উল্কি এঁকে দেওয়া হলো হার্মাদবিধিতে।
জলজ সম্পদ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা হলো, তুমুল বচসা হলো,
খুনোখুনি হলো। অতঃপর সব গৃহের সব হারেম খুলে
সক্কলে বেড়িয়ে এসে শীৎকালে সূচনা করলো রাত্রিউৎসবের।
হঠাৎই ভিড়ের মধ্যে কে যেন খেয়াল করলো
ভায়োলা এ ভিড়ে নেই আর! "তাহলে কোথায় গেলো?
এতক্ষণ তো এখানেই ছিল - ছিল ওই নিগ্রোনীর পাশেই কোথাও"
"তাহলে কোথায় গেলো"? - সিবাস্টিয়ানও বল্লো নিয়ম মাফিক।
আমার জিজ্ঞাসা অন্য -এ শহরে ভায়োলা যে কেন এসেছিল
আমি তা জানতে চাই গহনে সঠিক -
কেননা ভায়োলা জানে সত্যের নির্মাণে আমি আজন্ম অক্ষম
ফলতঃ ঈর্ষাজাত সারমেয়টিকে ধর্মকুক্কুর বলে সঙ্গে নিয়ে আমি
যাবোনা বাজারে একা যুধিষ্ঠিরহেন।
ভায়োলা, ভায়োলা, বল, এ হার্মাদদ্বীপে তুমি এসেছিলে কেন?
ভায়োলা তোমার ডানা, নাভি ও ত্রিবলী
বিষাদকুয়ার পাশে রয়েছে এখনো ...
চলে যাওয়া সে'তো অবলীল। ভায়োলা, ভায়োলা, বলো,
এসেছিলে কেন?
 
৯।
যে পথে ভায়োলা যায়
               হাওয়ায় হাওয়ায়
                     ঘ্রাণরেখা আঁকা থাকে তার
ফলতঃ অনেক ঘ্রাণই
               ভায়োলার ভেবে
                     অনেক বিষাদকুয়া খতিয়ে দেখেছি
দেখেছি আস্বাদ করে
                নিষিদ্ধ জলধি থেকে চুল ধরে তুলে আনা  
                                                সুগঠিত নিতম্বগুলিতে
হার্মাদবিধিমতে
           উল্কিও এঁকেছি বহু
                  ত্রিবলী ও নিবিড় বদ্বীপে
তথাপি পাইনি আর
                ভায়োলার খোঁজ এই
                       লবণাক্ত হার্মাদদ্বীপে

ভায়োলা তুমিতো জানো
সত্য-নির্মাণে আমি আজন্ম অক্ষম
ফলতঃ ঈর্ষাজাত সারমেয়টিকে ধর্মকুক্কুর বলে সঙ্গে নিয়ে আমি
যাইনি তোমার খোঁজে যুধিষ্ঠিরহেন।
ভায়োলা, ভায়োলা, বল, এ হার্মাদদ্বীপে তুমি এসেছিলে কেন?
ভায়োলা তোমার ডানা, নাভি ও ত্রিবলী
বিষাদকুয়ার পাশে রয়েছে এখনো ...
চলে যাওয়া সে'তো অবলীল। ভায়োলা, ভায়োলা, বলো,
এসেছিলে কেন?

রচনাকালঃ ২৩ শে ডিসেম্বর ২০১৭ -১লা জুন ২০১৮








ঘুম ঘর