একটি পথের দেবতা এবং দুইটি কিশোরঃ অপু বনাম জাঁ ক্রিস্তফ্
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
১।
এই বাক্য সমষ্টিতে শেষ হইতেছে গ্রন্থটিঃ ... And the little Puritan of fifteen heard the voice of his God: “Go, go and never rest.”
“But wither , Lord, Shall I go? Whatsoever I do, whithersoever I go, is not the end always the same? Is not the end of all things in that?”
“Go on to Death, you who must die! Go and suffer, you who must suffer! You do not live to be happy. You live to fulfill my law. Suffer; die. But be what you must be – a man.”
গ্রন্থটির স্থানে স্থানে আরো নানা রূপ নৈকট্যের ইঙ্গিতরেখা দেখিলেও এমত আত্নিয়তা আর দেখিনাই কোথাও ... কেননা এইখানে আসিয়া যেনবা বাধ্যতামূলক ভাবে মনেপড়ে আরেকটি মহাগ্রন্থের অন্তিম বাক্যগুলিঃ একা একা দাঁড়াইয়া হঠাৎ সে কাঁদিয়া আকূল হইল, উচ্ছসিত চোখের জল ঝর-ঝর করিয়া পড়িয়া তাহার সুন্দর কপাল ভাসাইয়া দিতেই চোখ মুছিতে হাত উঠাইয়া আকূল সুরে মনে মনে বলিল – আমাদের যেন নিশ্চিন্দিপুরে ফেরাহয় – ভগবান – তুমি এই কোরো, ঠিক যেন নিশ্চিন্দিপুর যাওয়া হয় – নৈলে বাঁচবোনা – পায়ে পড়ি তোমার –
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন – মূর্খ বালক, পথতো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে, ঠ্যাঙ্গাড়ে বীরু রায়ের বটতলায় কি ধলচিতের খেয়াঘাটের সীমানায়? তোমাদের সোনাডাঙ্গা মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতী পারহয়ে, পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ কাটিয়ে, বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে, পথ আমার চলে গেল, সামনে, সামনে, শুধুই সামনে ... দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডী এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশে ...
দিন রাত্রি পারহয়ে, জন্ম মরণ পার হয়ে, মাস বর্ষ মন্বন্তর, মহাযুগ পারহয়ে চলেযায় ... তোমাদের মর্মর জীবন-স্বপ্ন শ্যাওলা-ছাতার দলে ভ’রে আসে, পথ আমার তখনো ফুরোয় না ... চলে ... চলে ... চলে ... এগিয়েই চলে ...
অনির্বাণ তার বীণা শোনে শুধু অনন্ত কাল আর অনন্ত আকাশ ...
সে পথের বিচিত্র আনন্দ-যাত্রার অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া ক’রে এনেছি! ...
চল এগিয়ে যাই।
যদিও দুইটি গ্রন্থেরি ইহারা অন্তিম পংক্তিমালা তথাপি উভয়েরি মর্মে নিহিত আরেক আরম্ভের ইঙ্গিত ... যদিও John Christopher এর দেবতা অল্পবক্তা, যেনবা একটু কঠোরও (অন্ততঃYou live to fulfill my law. এই বাক্যে ) আর অপুর দেবতা তাহারি মতন কিংবা বাংলার, বাংগালীর প্রাণের দেবতারি মতন নিজেও যেন সজল, করুণ ... তথাপি অন্তিম প্রস্তাবে ইঁহারা যে এক’ই তাহা অনুভব করিতে বেগ পাইতে হয়না সামান্যতমও ... Romain Rolland (১৮৬৬-১৯৪৪) যদিও ফরাসী তথাপি যেহেতু ভারতাত্মার আশীর্বাদ ধন্য ফলতঃ তাঁহার মননে, চিন্তনে ভারতাত্মার বাণীই যে আকার লইবে ইহা তে আশ্চর্যের কিছুই নাই ... যাহা আশ্চর্যের তাহা এই, যে, Romain Rolland মূলতঃ নাট্যকার হইলেও John Christopher উপন্যাসে, অন্ততঃ এই প্রথম খন্ডে যাহা The Dawn এবং The Morning ( The Death of Jean Mitchel, Otto, Minna) পরিচ্ছেদের সমষ্টি, তাহা মূলতঃ narrative ই, dialogue প্রায় অনুপস্থিত ... সেই তুলনায় ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ (১৮৯৪ - ১৯৫০)’এর ‘পথের পাঁচালী’তে সংলাপের ভূমিকা ও পরিসর দুই’ই বৃহতত্তর ...
অপুর’ সীমাহীন যাত্রাপথের যে অংশটুকু পথের পাঁচালী’র অন্তর্ভুক্ত তাহার শেষে অপুর বয়ঃক্রম ষ্পষ্ট লিখিত না থাকিলেও আন্দাজ করাযায় হইবে চৌদ্দ বা পনেরো ... John Christopher প্রথম খন্ডের অন্তিমে ক্রিষ্টোফারের বয়ঃক্রম যে পনেরো তাহা লেখক বলিয়াই দিয়াছেন ... দুইটি উপন্যাসেরি অন্তিমে দাঁড়াইলে দেখাযায় দুইটি কিশোরই পারাইয়া আসিয়াছে অভাব, পিতৃবিয়োগ, প্রেম ও তাহার ব্যর্থতা ( এই সকল কারনেই হয়তো বঙ্গীয় ‘বুদ্ধিজীবি’রা একদা John Christopher উপন্যাসকে বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’র বা ‘অপরাজিত’র বা ‘অপু’ চরিতের জন্মদাতা ঠাইরাইয়া ছিলেন ... এই বিষয়ে এই মুহুর্তে আর তর্কে বিতর্কে না যাইয়া আমি কেবল এই বিষয়ে Cine Central, 1984 সংখ্যায় প্রকাশিত সত্যজিৎ রায়ের মতামত, Andrew Robinson এর সত্যজিৎ-জীবনী ‘The Inner Eye’ হইতে উদ্ধৃত করিয়াই ক্ষান্ত হইতেছিঃ Bengalis once said that Romain Rolland’s Jean Christophehad influenced Pather Panchali – and yet Bibhutibhusan Banerjee had apparently not even heard of Rolland’s famous novel.) ...
যেহেতু অপু এবং ক্রিষ্টোফার দুই দেশের, দুই সময়ের বাসিন্দা ফলতঃ অভাব, পিতৃবিয়োগ, প্রেম – ইত্যাকার জাগতিক চিহ্নও, ঐ কিশোর দ্বয়ের জীবনে দুই রকম। প্রথমতঃ অপুর পিতা হরিহর রায়ের সহিত ক্রিষ্টোফারের পিতা Melchoir এর তুলনা চলিতে পারেনা কেননা অন্তঃকরনে Melchoir যাহাই হইক বহিরঙ্গে সে মদ্যপ, উগ্র ... সে ক্রিষ্টোফারকে প্রহার করে ( এইস্থানে, এই চরিত্রটির সহিত যেনবা প্রেমাংকুর আতর্থী’র ‘মহাস্থবির জাতক’ এর স্থবিরের পিতার উগ্রতা মনেপড়ে ...) পক্ষান্তরে হরিহর রায়ের মর্মের সাধ-স্বপ্ন মূলতঃ অপুকে ঘিড়িয়াই ... সর্বজয়া’র স্বপ্নে অপু খাইয়া পরিয়া থাকিতেছে ইহাই যথেষ্ট হইলেও হরিহর পুত্রকে ঘিড়িয়া যে স্বপ্ন দেখিত তাহাতে অপুকে সে করিয়া তুলিতে চাহিত একজন পূর্ণাংগ মানুষ ... দেহ হইতেও অপুর মনের বিকাশে হরিহর ছিল সদা ব্যগ্র ... ফলতঃ অপুর মর্মে পিতৃ বিয়োগের ছায়ার স্বরূপের সহিত ক্রিষ্টোফারের বিয়োগের ছায়ার স্বরূপ ভিন্নতর। এতদ্বতীত পিতার অনাচারী স্বভাব হেতু ক্রিষ্টোফারকে টাকা-পয়সার সংসার চিনিতে হইয়াছিল পিতৃবিয়োগের ঢের আগেই, এমনকি সে হইয়াছিল উপার্জনক্ষম’ও ... কিন্তু অপুর ক্ষেত্রে তাহা হয়নাই ... সর্বজয়া আগ্লাইয়া রাখিয়াছিল অপুকে, পিতৃ বিয়োগের পূর্বেও যেমন, পশ্চাতেও তেমনি ... কিন্তু ক্রিষ্টোফারকে আগ্লাইয়া রাখা যাইনাই সেই বাল্যকালাবধি ...একমাত্র ঠাকুর্দা মাইকেল’ই কিছুদূর সক্ষম ছিলেন ক্রিষ্টোফারকে আগ্লাইতে। বরং পিতৃ বিয়োগের পরে Euler’দের গৃহে ভাড়াটে হইয়া আসিবার আগে-পরে দেখাযায় ক্রিষ্টোফারই আগ্লাইতেছে মাতা Louisa’ কে ( ২য় খন্ড) ...
অপু এবং ক্রিষ্টোফারের অভিজ্ঞতার আরেক দুস্তরতা ‘প্রেম’ এই ধারনাকে ঘিড়িয়া। প্রথম পর্বের অন্তিমে ক্রিষ্টোফার জানিয়াছে Minna কে। অর্জন করিয়াছে চুম্বন। কিন্তু অপুর জীবনে, লীলা’কে ভালোলাগা ভিন্ন, একই গেলাসের দুধ চুমুক দিয়া পানকরা ভিন্ন ... লীলাকে কেন্দ্র করিয়া এক হৃদয়ের এক নামহীন উতলতা ভিন্ন অপু জানেনাই প্রেমের ব্যবহারিক দিকগুলি ... লীলা’র সহিত মীনা’র তুলনাও অচল কেননা লীলা ( এবং তাহার মাতা) ‘এরিষ্টক্রেট’ হওয়া সত্ত্বেও ঐ দলভুক্ত নন। পক্ষান্তরে মীনা ( এবং তাহার মাতা) জার্মান এরিষ্টক্রেসি’র আদর্শ উদাহরন ... ইহাদের মিলটুকু ইহাদের নায়কের তুলনায় উর্দ্ধতন অবস্থানেই শুধু ...
ক্রিষ্টোফারের দুর্গা দিদি ছিলনা। ছিল দুই কণিষ্ঠ ভ্রাতা যাহাদের যন্ত্রণায় সে ছিল অতিষ্ঠ। পরবর্তীতে বান্ধব ‘Otto’র সংশ্রব তাহার জীবনে খুলিয়া দিয়াছিল আরেক দিগন্ত । অপুর জীবনাকাশ হইতে দুর্গা এই দিগন্তটিকে কাড়িয়া লয়াছিল মৃত্যু। ক্রিষ্টোফারের ‘ওটো’কে কাড়িয়া লইল আর্থ-সামাজিক দূরত্বের বাস্তবতা । ওটো শহরে চলিয়াগেল উচ্চ শিক্ষার্থ ... অপু রহিয়া গেল সেই মফস্বলেই ...
ক্রিষ্টোফারের দুর্গা দিদি ছিলনা। তবে ছিল Uncle Gottfried: He found consolation in wandering with Uncle Gottfried when he was in the neighborhood. He became more and more friendly with him, and sympathized with his independent temper. He understood so well now Gottfried's delight in tramping the roads without a tie in the world! Often they used to go out together in the evening into the country, straight on, aimlessly, and as Gottfried always forgot the time, they used to come back very late, and then were scolded. Gottfried knew that it was wrong, but Jean-Christophe used to implore, and he could not himself resist the pleasure of it. About midnight he would stand in front of the house and whistle, an agreed signal. Jean-Christophe would be in his bed fully dressed. He would slip out with his shoes in his hand, and, holding his breath, creep with all the artful skill of a savage to the kitchen window, which opened on to the road. He would climb on to the table; Gottfried would take him on his shoulders, and then off they would go, happy as truants.
Sometimes they would go and seek out Jeremy the fisherman, a friend of Gottfried's, and then they would slip out in his boat under the moon. The water dropping from the oars gave out little arpeggios, then chromatic scales. A milky vapor hung tremulous over the surface of the waters. The stars quivered. The cocks called to each other from either bank, and sometimes in the depths of the sky they heard the trilling of larks ascending from earth, deceived by the light of the moon. They were silent. Gottfried hummed a tune. Jeremy told strange tales of the lives of the beasts--tales that gained in mystery from the curt and enigmatic manner of their telling. The moon hid herself behind the woods. They skirted the black mass of the hills. The darkness of the water and the sky mingled. There was never a ripple on the water. Sounds died down. The boat glided through the night. Was she gliding? Was she moving? Was she still?... The reeds parted with a sound like the rustling of silk. The boat grounded noiselessly. They climbed out on to the bank, and returned on foot. They would not return until dawn. They followed the river-bank. Clouds of silver ablets, green as ears of corn, or blue as jewels, teemed in the first light of day. They swarmed like the serpents of Medusa's head, and flung themselves greedily at the bread thrown to them; they plunged for it as it sank, and turned in spirals, and then darted away in a flash, like a ray of light. The river took on rosy and purple hues of reflection. The birds woke one after another. The truants hurried back. Just as carefully as when they had set out, they returned to the room, with its thick atmosphere, and Jean-Christophe, worn out, fell into bed, and slept at once, with his body sweet-smelling with the smell of the fields.
এই Uncle Gottfried কখনোবা দুর্গা কখনোবা শ্রীকান্তের ইন্দ্রনাথ। প্রপিতামহ মাইকেল ভিন্ন ক্রিষ্টোফারের একমাত্র প্রকৃত বান্ধব ... ইহাদের পক্ষান্তরে বাঙ্গালী অপুর দুর্গা ভিন্নও ছিল রাণুদিদি, ছিল নীলু ...
অপু’র যাহা ছিলনা তাহা হইল সেই পিতামহ মাইকেল। এমন নিবিড়, মায়াবী একটি চরিত্র আমি আর দেখিয়াছি কি কোথাও? ইয়ুরি জিভাগো’র মাতামহের চরিত্রে তেমন কিছু লক্ষন থাকিলেও মাইকেল যেন এক শাল বৃক্ষ ...প্রিয় পুত্র, যে তাঁহারি ন্যায় সঙ্গীতে, বাদ্যে পারদর্শী, সে যখন লুইসা নামের এক সামান্য পরচারিকাকে বিবাহ করিয়া বসিল, মাইকেলের সাধ-স্বপ্ন অনেকদূর ভাঙ্গিল ঠিক, তথাপি সে সক্ষম হইল, বলিতে, ষ্পষ্ট, সেই পুত্রপবধূকেই ...
She calmed herself for the child's sake, and tried to smile.
"I was wrong to tell you that."
The old man shook his head as he looked at her.
"My poor child, it was not much of a present that I gave you."
"It's my own fault," she said. "He ought not to have married me. He is sorry for what he did."
"What, do you mean that he regrets?..."
"You know. You were angry yourself because I became his wife."
"We won't talk about that. It is true I was vexed. A young man like that—I can say so without hurting you--a young man whom I had carefully brought up, a distinguished musician, a real artist--might have looked higher than you, who had nothing and were of a lower class, and not even of the same trade. For more than a hundred years no Krafft has ever married a woman who was not a musician! But, you know, I bear you no grudge, and am fond of you, and have been ever since I learned to know you. Besides, there's no going back on a choice once it's made; there's nothing left but to do one's duty honestly."
এই পর্বে, এই কথোপকথন পাঠান্তে, আমার মর্মে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশলাভের পরবর্তি পর্বের অর্জুণকে মনে হওয়া কি খুবই কাকতালীয়?
John Christopher এ বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকরুন নাই। নাই তাঁহার অসহায় অভিমান, ভালবাসা, লোভ ... নাই, কেননা, মনেহয়, ইন্দির ঠাকরুণ, দুর্গা ইহারা বাঙ্গালীরি শুধু ... ফারাসী রোমা রোলা’ও তাই ভারতাত্মার আশীর্বাদ সত্ত্বেও রচিতে অক্ষম হন ঐ চরিত্র দুইটিকে ... বরং গোর্কী’র আত্নজীবনী’র প্রথম পর্বে, গোর্কী’র প্রপিতামহীকে যেন মনেপড়ে ইন্দির ঠাকরুন’ এর আবহে ...
২।
যদিও ‘পথের পাঁচালী’ অন্তিম অপুরি কাহিনী তথাপি এই উপন্যাসটির জন্ম অপুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হয়না, আবার এই মাহা কাহিনীর আরেক কুশীলব দুর্গার সহিত আমাদের প্রথম সাক্ষাতে দুর্গা একটি বালিকা। সেই হেতু ‘পথের পাঁচালী’ কে আমার মনেহয়, চলন ভঙ্গিতে, বহু বেশী মহাকাব্যিক কেননা মহাভারত যদিও কৌরব-পান্ডব যুদ্ধতেও আবর্তিত তথাপি মহাভারতের গতিপথে ক্রমে হয় ইহাদের জন্ম ... পক্ষান্তরে John Christopher এর আরম্ভ John Christopher এর জন্মেইঃ From behind the house rises the murmuring of the river. All day long the rain has been beating against the window-panes; a stream of water trickles down the window at the corner where it is broken. The yellowish light of the day dies down. The room is dim and dull.
The new-born child stirs in his cradle. Although the old man left his sabots at the door when he entered, his footsteps make the floor creak. The child begins to whine. The mother leans out of her bed to comfort it; and the grandfather gropes to light the lamp, so that the child shall not be frightened by the night when he awakes. The flame of the lamp lights up old Jean Michel's red face, with its rough white beard and morose expression and quick eyes. He goes near the cradle. His cloak smells wet, and as he walks he drags his large blue list slippers, Louisa signs to him not to go too near. She is fair, almost white; her features are drawn; her gentle, stupid face is marked with red in patches; her lips are pale and' swollen, and they are parted in a timid smile; her eyes devour the child--and her eyes are blue and vague; the pupils are small, but there is an infinite tenderness in them.
The child wakes and cries, and his eyes are troubled. Oh! how terrible! The darkness, the sudden flash of the lamp, the hallucinations of a mind as yet hardly detached from chaos, the stifling, roaring night in which it is enveloped, the illimitable gloom from which, like blinding shafts of light, there emerge acute sensations, sorrows, phantoms--those enormous faces leaning over him, those eyes that pierce through him, penetrating, are beyond his comprehension!... He has not the strength to cry out; terror holds him otionless, with eyes and mouth wide open and he rattles in his throat. His large head, that seems to have swollen up, is wrinkled with the grotesque and lamentable grimaces that he makes; the skin of his face and hands is brown and purple, and spotted with yellow....
এক্ষণে মনে আসে আরো দুইখানি উপন্যাসের আরম্ভের কথা। ‘Portrait of the artist as a young man’ এবং ‘Doctor Zhivago’। ভাবে ও ভাষায় ‘Portrait of the artist as a young man’ সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের হইলেও ইহারো আরম্ভ সদ্যোজাত শিশুর প্রথম অনুভবের জন্মেই। ভাষা এবং ভঙ্গীতে ‘Doctor Zhivago’ John Christopher এর বহুদূর সমগোত্রীয়। বিভূতি’র ‘পথের পাঁচালী’ ইহাদেরি পাশাপাশি বহিয়া যাইতে যাইতে অকস্মাৎই যেন পারাইয়া যায় ইহাদিগকেঃ ... মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে কর্ণের চরিত্র বড় ভাল লাগে তাহার কাছে। ইহার কারণ কর্ণের উপর তাহার কেমন একটা মমতা হয়। রথের চাকা মাটিতে পুঁতিয়া গিয়াছে – দুইহাতে প্রাণপণে সেই চাকা মাটি হইতে টানিয়া তুলিবার চেষ্টা করিতেছেন – সেই নিরস্ত্র অসহায়, বিপন্ন কর্ণের অনুরোধ মিনতি উপেক্ষা করিয়া অর্জুন তীর ছুঁড়িয়া মারিয়া ফেলিলেন! মায়ের মুখে এই অংশ শুনিতে শুনিতে দুঃখে অপুর শিশু হৃদয় পূর্ণ হইয়া উঠিত, চোখের জল বাগ মানিত না – চোখ ছাপাইয়া তাহার নরম তুলতুলে গাল বাহিয়া গড়াইয়া পড়িত – সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুঃখে চোখে জল পডার যে আনন্দ, তাহা তাহার মনোরাজ্যে নব অনুভুতির সজীবত্ব লইয়া পরিচিত হইতে লাগিল। জীবন পথের যে দিক মানুষের চোখের জলে, দীনতায়, মৃত্যুতে আশাহত, ব্যর্থতায়, বেদনায় করুণ – পুরোনো বইখানার ছেঁড়া পাতার ভরপুর গন্ধে , মায়ের মুখের মিষ্ট সুরে, রৌদ্রমাখা দুপুরের মায়া-অঙ্গুলী-নির্দেশে, তাহার শিশুদৃষ্টি অস্পষ্ট ভাবে সে পথের সন্ধান পাইত ...
কি সেই পথ? সেই পথই তো সোনাডাঙ্গা মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতী পারহয়ে, পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ কাটিয়ে, বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে, চলে গেল, সামনে, সামনে, শুধুই সামনে ... দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডী এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশে ... সেই পথটির সন্ধান অপুর মর্মে ছিল জন্মাবধি ... তাই অপু তাহাই যাহাকে ইংরেজিতে বলে visionary ... তাই অন্তিমে অপুকে John Christopher এর মতো John Christopher হইতে St. Christopher হইতে হয়না ... তথাপি সে ধাইয়া যাইতে সক্ষম হয় মহাজীবনের মহাসঙ্গমে ...
এই vision কি ছিলোনা দুর্গারো মর্মে? ... ‘এক একদিন, তাহার এক রকম মনের ভাব হয়; সেদিন সে কিছুতেই গন্ডিতে আট্কাইয়া থাকিতে পারেনা – কে তাহাকে পথে পথে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরাইয়া লইয়া বেড়ায়। আজ যেন হাওয়াটা কেমন সুন্দর, সকালটা না গরম না ঠান্ডা, কেমন মিষ্ট গন্ধ পাওয়া যায় নেবু ফুলের – যেন কি একটা মনে আসে, কি তাহা সে বলিতে পারেনা ...’ আমার মনে পড়িয়া যায়, একটি রবীন্দ্রগীতিকা, যথারীতিঃ
আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন্ খ্যাপা সে !
ওরে, আকাশ জুড়ে মোহন সুরে কী যে বাজে কোন্ বাতাসে॥
গেল রে, গেল বেলা, পাগলের কেমন খেলা–
ডেকে সে আকুল করে, দেয় না ধরা।
তারে কানন গিরি খুঁজে ফিরি, কেঁদে মরি কোন্ হুতাশে॥
ওরে, আকাশ জুড়ে মোহন সুরে কী যে বাজে কোন্ বাতাসে॥
গেল রে, গেল বেলা, পাগলের কেমন খেলা–
ডেকে সে আকুল করে, দেয় না ধরা।
তারে কানন গিরি খুঁজে ফিরি, কেঁদে মরি কোন্ হুতাশে॥
আপন মৃত্যুকেও কি ঐভাবে জানিতে পারিয়াছিল দুর্গা? যদি না’ই পারিবে তবে সে এমন হইবে কেন তাহারঃ কি জানি কেন আজকাল তাহার মনেহয় একটা কিছু তাহার জীবনে শীঘ্র ঘটিবে। এমন একতা কিছু জীবনে শীঘ্রই আসিতেছে যাহা আর কখনো আসেনা। দিন-রাতে, খেলা-ধূলার, কাজ কর্মের ফাঁকে ফাঁকে একথা তাহার প্রায়ই মনেহয় ... ঠিক সে বুঝিতে পারেনা তাহা কি, বা কেমন করিয়া সেটার আসিবার কথা মনে উঠে, তবুও মনেহয়, কেবলি মনেহয়, তাহা আসিতেছে ... আসিতেছে... শীঘ্রই আসিতেছে ...
ঐ অনুভবগুলি’ই vision আর তাহারি মূল্যে অপু-দুর্গা পারাইয়া গিয়াছে ক্রিষ্টোফারকে, জিভাগোকে ...
৩।
তথাপি ক্রিষ্টোফারও পথিক সেই একই পথেরি। সেই একই পথের একই দেবতা তাহাকেও সেই তিলক পরাইয়াই করিয়া দিয়াছেন ঘরছাড়া যে তিলক অপুর,যে তিলক জিতুর ... অপু প্রথমে ছাড়িল নিশ্চিন্দিপুর, অতঃপর মনসাপোঁতা ... ক্রিষ্টোফার ছাড়িল তাহার জন্মের গৃহটি ... মা’কে লইয়া আসিল আরেক পল্লীতে ... তারপর? তারপর সে চলিবে, আরো চলিবে ... পাঠক ... আসুন অধ্যয়ন করি তাহার সেই গমন ... ঐ শুনুন পথের দেবতা তাহাকেও বলিতেছেন ... পথের বিচিত্র আনন্দ-যাত্রার অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া ক’রে এনেছি! ...
চল এগিয়ে যাই।
১০/৬/২০১১