প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, November 21, 2015

পাঠঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, পর্ব ‘কল্পতরু’




পাঠঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, পর্ব ‘কল্পতরু’


লিখছেন দেবেন্দ্রনাথ,যিনি,হন, প্রিন্স দ্বারকানাথপুত্র, রবীন্দ্র-পিতা, তাঁর আঠারো উনিশ বৎসর বয়সের কথাঃ ‘দিদিমার মৃত্যুর পর একদিন আমার বৈঠকখানায় বসিয়া আমি সকলকে বলিলাম, যে, ‘আজ আমি কল্পতরু হইলাম; আমার নিকটে আমার উপযুক্ত যে যাহা কিছু চাহিবে, তাহাকে আমি তাহাই দিব’। আমার নিকট কেহ কিছু চাহিলেন না, কেবল আমার জ্যেষ্ঠতাত পুত্র ব্রজবাবু বলিলেন যে, ‘আমাকে ঐ বড় দুইটা আয়না দি’ন্‌,ছবিগুলান্‌ দিন, ঐ জরির পোশাক দি’ন্‌’। আমি তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে সকলই দিলাম। তিনি পরদিন মুটে আনিয়া বৈঠকখানার সমস্ত জিনিস লইয়া গেলেন। ভাল ভাল ছবি ছিল, আর আর বহুমূল্য গৃহসজ্জা ছিল, সমস্তই তিনি লইয়া গেলেন’। -এই হঠাৎ-বৈরাগ্যের আবহ এক রাত্রে, গঙ্গাতীরে বসে, তাঁর মর্মে অহৈতুকি আনন্দের উদ্ভাস। ঐ অংশের বর্ণন অপূর্ব, অনবদ্য। অতঃপর ঈশ্বরাকাঙ্ক্ষা। অতঃপর ‘একদিন আমার বৈঠকখানায় বসিয়া আমি সকলকে বলিলাম…’, সূত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাঠ ঠাকুরের আত্মজীবনী, ৩য় পরিচ্ছেদ। - আমি ঐ বাক্যটি অনুধাবনে ব্যর্থ। বরং বাক্যটি যদি এই রকম হতঃ ‘একদিন কাঙ্গালিটোলায় গিয়া আমি সকলকে বলিলাম, যে, ‘আজ আমি কল্পতরু হইলাম; আমার নিকটে আমার উপযুক্ত যে যাহা কিছু চাহিবে, তাহাকে আমি তাহাই দিব’। অথবা “একদিন আমার বৈঠকখানায় বসিয়া আমার নিকটে যাহাই বহুমূল্য  সকলি বিক্রি করিয়া দিলাম এবং তদ্বারা একটি অনাথ আশ্রম স্থাপিবার নিমিত্ত এক ব্যক্তির রর সেই দায় ন্যস্ত করিলাম’ অথবা ‘বহুমূল্য  সকলি বিক্রি করিয়া দিলাম এবং কাঙ্গালিটোলায় গিয়া আমি সকলকে বলিলাম, যে, ‘আজ আমি কল্পতরু হইলাম; আমার নিকটে আমার উপযুক্ত যে যাহা কিছু চাহিবে, তাহাকে আমি তাহাই দিব’। - তাহলে আমি কিছুদূর অনুধাবনে ছিলাম সক্ষম।
সায় সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়ে – নির্ভার, নিরালম্ব হয়ে ঈশ্বরচিন্তায় নিষ্কন্টক নিবিষ্ট হওয়া-এ’ই যদি হয় ‘কল্পতরু’ হয়ে বৈঠকখানা আলোকিত করবার হেতু সে ক্ষেত্রে তাঁর বহুমূল্য ভূষিমাল তাঁর জ্যেষ্ঠতাত পুত্র  -মাল-দার কিংবা মাল-দার সাজবার চেষ্টা নিরত বা জুয়ায়,মেয়েবাজিতে নিঃস্ব –ব্রজবাবু নিলো না’কি তা দিয়ে কিছু কাঙ্গাল-কাঙ্গালী খেয়ে বাঁচলো, না’কি তাদের কাজকর্মের কিছু হিল্লে হলো – তা’তে কিছু আসে যায়না ‘কল্পতরু’টির। ঠিক। কিন্তু একটু খট্‌কা কি রয়েই যায়না? বৈঠকখানার এই কল্পতরু পর্ব আত্মজীবনীতে স্থান পায় কি মাত্রা, কোন্‌ মাত্রাটি বা মাত্রাগুলি যোগ করতে? তা’কি এ’ই নয়, যে, ‘দেখো, ঈশ্বরাকাঙ্খা করতে গেলে, সংসার একেবারে না ছাড়লেও চলে, তথাপি যথাসম্ভব নির্ভার, নির্ধন হয়া চাই আর তা জেনেই আমি চেষ্টা নিয়েছিলাম নির্ভার হওয়ার…’ – কিন্তু এই চেষ্টাটির মর্মে এক রকমের নাটুকেপনা কি নেই? ঈশ্বরচন্দ্র যে কতো ধন, কতো অর্থ কিভাবে বিলিয়ে গেছেন তার সবটা অদ্যাপি অজানা আর আত্মকথায় এইরূপ বর্ণন – হায়- যদি আরব্ধ আত্মচরিতটি শেষ করেও যেতেন তাতেও লিখতেন কি? জানিনা।
মোদ্দা,হয়,এই কথা্‌ যে, সূঁচের ভিতর দিয়ে মস্ত উটের গ’লে যাওয়া বুঝলে বুঝতেও পারি কিন্তু ঐ বড়লোকি সন্ন্যাস, উঁহু, এতাবৎ পারলাম না বুঝতে… পারলাম না বুঝতে বৈঠকখানায় উপবিষ্ট বড়লোক,আধা বড়লোক খিদমতগারদের সামনে  ‘আজ আমি কল্পতরু হইলাম’  না বলে, কোনো রাত্রে চুপচাপ গিয়ে সব বিলিয়ে, বিক্রি করে দিয়ে এলে কি ক্ষতিটা ছিল যে … সেটাও আত্মজীবনীতে লেখা যেতো অবশ্যই।

ঘুম ঘর