প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, September 14, 2019

সকাল,স্বকাল ।। এক তরঙ্গ।।

  সকাল,স্বকাল
(এক তরঙ্গ)  
সেদিনও সকালবেলা বেরিয়ে গিয়েছিলাম সাইকেলে যথারীতি  সাইকেলে বেরিয়েছিলাম তার অর্থ এই সমস্তই টেস্ট পরীক্ষার পরের ঘটনা কেননা আমি সাইকেল চালাতে শিখেছিলাম মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরের সকালে কূটন আর ভব এসেছিল ওদের সাইকেল নিয়ে সকালে ওই সকালগুলি আর হবেনা কোনোদিন কোনোখানে এই গ্রহে অন্ততঃ সকালগুলি ছিল নতুন খাতার প্রথম পাতের মতো সদ্য মোছা শেলেটে দেওয়া প্রথম আঁচড়ের মতো নরম,সবুজ,সিক্ত যেন সব ঋতুই শরৎ যেন সব রাত্রিই ঝড়ের রাতের অভিসার তখন লরী যেতো এই রাস্তায় ধূলো আর ধোঁয়া ছড়িয়ে রাস্তা আর রাস্তার চালচিত্র মুহুর্তে ধূসর হয়েগেলেও কে যেন পরমুহূর্তেই সেই সব ধূলো ধোঁয়া মুছে তুলে আনতো নরম, সবুজ, লাজুক কচি কলাপাতাহেন সকালকে আবার।
 এই রাস্তায় আর লরী যায়না বহুযুগ তবু এই রাস্তা এখন ধূসর অনেক দিন সকাল সকাল ভোর ভোর উঠেও দেখেছি এই রাস্তা এই শহর এখন ধূসর ধূসর আস্তরণ এমন কি কচি কলাপাতার গায়েও এমন কি বিষ্টি হলেও ধুয়ে যায়না এই আস্তরণ তাই মাঝে মাঝে মনেহয় আদতে না'ত এই রাস্তা না'ত এই শহর কোনোদিন ছিল সবুজ কোনোদিন ছিল ধূসর আমাদের সেই সময়ের চোখের আলোই দিয়েছিল ওই সবুজ যা সময় দান করেছিল আমাদের যা সময়ই আবার ফিরিয়ে নিল।
সেদিনও সকালবেলা সাইকেলে গিয়েছিলাম দেবব্রত  সোম স্যারের বাড়িতে ন'টা না বাজতে তড়িঘড়ি সাইকেল নিয়ে চলেও এসেছিলাম যথাস্থানে মানে সরল খাঁ'র দিঘিগামী রাস্তার মোড়ে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েও পরেছিলাম সব সোম, বুধ, শুক্র  সাড়ে নটার মতো হাওয়াও দিচ্ছিল আতা ঝরে ঘুরে ঘুরে উড়ে নামছিল বাঁষঝাড়ের থেকে সকাল সাড়ে ন'টার মতো মোম, মৌমিতা, মহুয়া, সুতপারা ব্যাগ কাঁধে চলেও যাচ্ছিল দিলীপ পাল স্যারের বাড়ি পড়া শেষ করে যেতে যেতে অপাঙ্গে দেখেও নিচ্ছিল আমাকে অন্যদিনের সকাল সাড়ে ন'টার মতোই সাড়ে ন’টায় এসেই থেমে গিয়েছিল ঘড়ির কাঁটাও আমার বাঁ হাতে দিদিভাই দিয়েছিলেন উপনয়নের সময় দিদিভাই মারা গিয়েছিলেন আমার মাধ্যমিকের আগে না পরে এখন আর ঠিক মনেপড়ছে না উপনয়নটি হয়েছিল নবম শ্রেণিতে তিন না'কি চারদিন লেখাপড়াহীন দুইভাই বন্দী দলে দলে বন্ধুদের আনাগোনা দলে দলে কিসমে কিসমে আড্ডা কিরিটি অমনিবাস, ঝিন্দের বন্দী, রাত্রির যাত্রী, ভস্তকের চেকভ বন্ধুদের দেওয়া বইগুলি ছাড়া মনে আছে ওই হাতঘড়ি দিদিভাইর দেওয়া যা এখন থেমে আছে সাড়ে ন'টায় থেমে আছে একটি মেয়ের অপেক্ষায় যার নাম কংকা, কংকাবতী ত্রৈলোক্যনাথের, জীবনানন্দের, বুদ্ধদেব বসুর আহা, মোরে প্রেম দিতে চাও প্রেমে মোর ভুলাইবে মন তুমি নারী কঙ্কাবতী  প্রেম কোথা পাবে সকাল সাড়ে ন’টা উতলা হল ওই পথে ওই দিন কংকাবতীর না আসায়।
এলেই বা কি করতে তুমি
করতাম কিছু একটা
তবে করলেনা যে কিছু গত ছমাস ধরে এই মোড়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া
কেন আমি কি তাকে চিঠি লিখিনি
লিখেছ তোমার লুকানো ডায়েরির পাতায়
বিবেকের সঙ্গে এইসব দ্বিধালাপ চালাতে চালাতে আবার সাইকেলে চাপা সাড়ে দশটা হয়ে গেছে  এগারোটার মধ্যেনা ফিরলে বাবার জেরা মা'র জেরবার তিন মাস কমে দুমাস দুমাস থেকে এখন দেড়মাসের দূরত্বে মাধ্যমিক  পরীক্ষা অথচ এখনো খুঁজে পাওয়া গেলোনা  ওই রোগা চোখে হাইপাওয়ার চশমা  মেয়েটির বাসার হদিশ এই ছোট্ট সবুজ আমাদের শহরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে শুধু জানাগেলো সে'ও ছাত্রী দিলীপ পাল স্যারের দিলীপ পাল স্যার কিংবদন্তী সুশান্ত  পাল স্যারও অংকে আর বিজ্ঞানে আমরা ছেলেদের ব্যাচ পড়ি বিকালে মেয়েদের ব্যাচ সকালে উপনয়নের সময় মিস করা কিছু বুঝতে গেলাম একদিন সকালের ব্যাচে ততোদিনে খড়কুটো পড়া শেষ পড়া শেষ শেষের কবিতা ফেয়ারওয়েল টু আর্মস বিষবৃক্ষ অর্থম অনর্থমে ব্যোমকেশ  সত্যবতীর প্রথম দেখা কেঁপে উঠল পনেরো ষোলো বয়সের অস্তিত্বের কেন্দ্র পরিধি ব্যাস মেয়ে ব্যাচেও ছেলেরা পড়তো কয়েকজন নাম কি রে ওই চশমা পরা মেয়েটা ওর ভাল নাম সুপর্ণা ডাকনাম কংকা মেয়ে ইস্কুলের ফার্স্টগার্ল রূপকথার মতো মনেহয় এখনো মনেহয় কর্ণের রথের চাকার মত আংটির মতো শকুন্তলার আছে আমার কচিকলাপাতা দিনগুলি এই ধূসরের অতলে মাছের পেটের অন্ধকারে মনেহয় যেন আমিই একদিন জেলে হয়ে খুঁজে পাব ওই মাছটিকে ডুবুরি হয়ে
তুলে আনব রথচক্র ওই তলিয়ে যাওয়া বাড়িফেরা পথে চমকে উঠব আবিষ্কার করে কংকাবতীতে হেঁটে হেঁটে মিলিয়ে যেতে আমাদের পাড়ারই এক নতুন হওয়া বাড়িতে।




ঘুম ঘর