প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Tuesday, June 15, 2021

আমাদের জামার আস্তিনে ...

 আমাদের জামার আস্তিনে ...



যে ক'দিন দিন নেই রাত নেই ছবি আঁকা হয়েছিল আমাদের

আমার আর সন্দীপনদা'র সেই কয়েকটি দিন

বহু দূরে ভেসে চলে গেছে

তারা আর ফিরবে না । ফিরবেনা সন্দীপনদা'র জলরং রাজহাঁস গুলি

যেগুলিকে আঁকা হয়ে গেলে নাম খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়ার আগেই

হেমন্তর কন্ঠ থেকে শোনা গেল দৈববাণীহেন

 "বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও" ...

 দুটি হাঁস রাজহাঁস, উড়ে যাবে , অথবা সাঁতারে ভেসে

চলে যাবে নিজে নিজে চক্রবাল পথে । তার মধ্যে দু'এক মুহূর্ত শুধু

জলরঙে

তুলিতে কালিতে ...

 

সতেরো বা আঠারোতে আমি, সন্দীপন দা কুড়ি কি একুশ

পৃথিবীরো বয়স তখন খুব বেশী ছিল না নিশ্চিত

নতুবা মুহুর্মুহু নিয়তি কি ভোল পাল্টাতো

সহপাঠিনীর হাই পাওয়ার চশমা ঢাকা চোখে

এত অবলীল?  পাওয়া কি যেতোনা  টের

ব্যবধান -- নিয়তির সঙ্গে নিমিত্তের?

 

ক্যানভাস, রং-তুলি, কালি আর

চালচিত্রে লীলা মজুমদার

হলুদ পাখির ডানা, হলদে দুপুর

 ধুলোর আস্তর লেপে চলে যায় বড় বড় ট্রাক।

অদূরে পরীক্ষা নাড়ে দরজার জং ধরা কড়া --

অনন্যোপায় হয়ে আওয়াজ বাড়াতে হয় হেমন্তর

 "বন্ধু তোমার পথের সাথী"র

সন্দীপনদার গান-কোঠাটিতে।

 

সন্দীপনদার গান-কোঠাটির জানালার পাশে রজনীগন্ধার ঝাড়।

"দীপ নিবে গেছে মম" গান ঢেকে দেয় পরীক্ষার কড়ানাড়া,মা'বাবার

উপদেশ,বকাঝকা, হিতাকাঙ্ক্ষী  অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের

সস্নেহ ভর্ৎসনা

সব। শুধু থাকে কোঠাখানি আর

হেমন্ত-দুপুর জুড়ে এঁকে যাওয়া

এঁকে তুলতে চাওয়া

কাকে যেন, কি যেন বা

এঁকে তুলতে হবে কলেজ ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনী হলে

কাকে যেন স্তব্ধ করে দিতে হবে এইসব ছবি দিয়ে ...

সব ছবি দিয়ে নয় একটি বা দুইটি ছবির

সামনে কেউ সবিশেষ থমকে দাঁড়ালে

পূর্ণ হবে সব পথশ্রম

 

সতেরো বা আঠারোতে আমি, সন্দীপন দা কুড়ি কি একুশ

পৃথিবীরো বয়স তখন খুব বেশী ছিল না নিশ্চিত

অতএব দুইটি মেয়েকে নিয়তির জায়গা দিতে

সহজেই পারা গিয়েছিল, গ্রহান্তর দেওয়া গিয়েছিল

ভাঙ্গাচোরা তাদের আবহে।

 অতঃপর পৃথিবীর আবর্তনে এরা

কবেই  'নিমিত্ত' মাত্র  হয়ে গেছে...

নিমিত্ত হয়েছে চুপে আমাদের ক'টি দুপুরের

দুইজন যাযাবর হাঁসপাখি আর

জলরঙে এঁকে তোলা অনেক ছবির।

-- এই শুধু । এর চেয়ে বেশি কিছু

এর চেয়ে কম কিছু নয়।

ছবিগুলি ক্যানভাস থেকে ক্রমে ক্রমে মর্মদেওয়ালে আঁকা হলে

ঢেকে গেছে  মুখ-চোখ গুলি

ক্রমে ক্রমে

ধূলিতে বালিতে।  পৃথিবীর বয়সও লহমায়

কুড়ি, বাইশ, পঁচিশ ছাড়িয়ে

হঠাৎই পেঁচার মতো বৃদ্ধা হয়ে গেছে আর

আমাদের ছবিআঁকার দ্বিপ্রহর গুলি কুশিয়ারা জলে ভেসে

পলি হয়ে উঠেছে কোথাও...

আর জলে নেমে গেলে পরে বাঁধের শরীরে জেগে থাকা জলচিহ্নহেন

হলুদ পাখির ডানা, হলদে দুপুর আর

 "বন্ধু তোমার পথের সাথীকে" গানটি এখনো

  আমাদের  জামার আস্তিনে

লেপ্টে লেগে আছে।










ঘুম ঘর