হে মৃত্যু..., হে রবীন্দ্রনাথ...
১।
মৃত্যুকে
নিয়ে ভাবি।
আজ নয়৷ কাল
নয়, সদ্য ঘটে যাওয়া পিতৃবিয়োগের বা নানা সময়ে নানা প্রিয়জন বিয়োগের পরেও নয় কিংবা সেই
সব আবহেও নয়, মৃত্যু আমার ভাবনা শোণিতে কীটানুর মতো ঢুকে পড়েছে, মনেহয়, জীবনে প্রথমবার,
প্রথম রবীন্দ্রগানটি, সেটি কি মনেনেই, শোনামাত্র। তার পর থেকে রবীন্দ্রগানের আবহে মৃত্যু
কিম্বা মৃত্যুর আবহে রবীন্দ্রনাথ -- আমার পথচলা।
... পথচলা,
তবে যেহেতু আমার পথ, আশৈশব নিরীশ্বর, অবলীল, ফলে রবীন্দ্রনাথের -- 'মত্যুরে লব অমৃত
করি তোমার চরণে ছোঁয়ায়ে'র "তুমি" টি হয়ে একদা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং, পরে, ক্রমে, সেখানে
এসে পরেছে মহাবিশ্ব... বহুবিশ্ব... মাল্টিভার্স।...
রবীন্দ্রনাথের "তুমি", রবীন্দ্রনাথের "জীবনদেবতা" -- রবীন্দ্রনাথের
গহনে ঠিক কি তার সন্ধানে, গবেষণায় আমার কোনো আগ্রহ নেই কেননা আমাকে জীবনের, যাপনের
নানান পর্য্যায়ে, বাঁকে, অনুভব করতে হয়েছে
যে, অন্তিমে কবি-মর্মের কেন্দ্রটি অনুদঘাটিতই থেকে যায়, থেকে যাওয়া হয় সমীচীনও। পরিবর্তে
রিলকের 'দেবদূত' এর যে রূপ, যে অরূপ -- যে পাঠকের মর্মে উন্মোচিত করে যতদূর চক্রবাল
ততোদূরই বিস্তারিত দেবদূতের, স্বর্গবেশ্যার, মর্তগণিকার কেশদাম। অতএব রবীন্দ্রনাথের
'তুমি', তাঁর 'জীবনদেবতা' -- তাঁর নিজের মর্মবিশ্বে ঠিক কি তারচেয়ে আমার উদ্যম, জেনে
নিতে, আমার গহনে তার স্বরূপটি ঠিক কোন দ্বান্দ্বিকতায় প্রতিভাত।
আমার মর্মে
'মৃত্যু' একটি যতি। পরিপূর্ণ যতি। তার পরপারে আর কেউ নেই। কিছু নেই। আমার 'মৃত্যু'
কোনো 'মুক্তি' নয়। 'শেষ'। এক অমোঘ তবু... অথবা অমোঘ তাই... এক নিষ্ঠুর, নির্মম যবনিকা।...
'জন্ম' এবং 'জীবন' ও নয় কোনো 'আশীর্বাদ'। বরং এই পংক্তিগুলি...
"And I have
seen the eternal Footman hold my coat, and snicker,
And in short, I
was afraid'
অথবা, এতোদূর
ধূসরউজ্জ্বল হয়তো নয় সতত, হয়তো সামান্য সবুজে
ছোপানো, তথাপি দ্বিধাঃ
"মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে
কখন এসেছি,
না এলেই ভালো হ’তো অনুভব ক’রে;
এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো সে-সব বুঝেছি
শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে"...
আমার জীবনের,
যাপনের ধারনার নিকটতম। 'জীবনদেবতা'র আশীর্বাদধন্য রবীন্দ্রনাথের জীবনধারনার সঙ্গে জীবনানন্দীয়
জীবনবীক্ষার আপাত দূরত্ব সত্ত্বেও 'এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো'র টানে এসেপড়ে, পড়েনা কি,
' যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই '?.. তথাপি নেহাৎই 'যাপনের' মূল্যে ,জীবনের,
মুহুর্মুহু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াকে টের পাওয়ার মুহুর্তগুলিতে এ'ও টের পেতে হয়েছে, যে, ' 'যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই ' এই অনুভুতিও,
আদতে, সর্বাত্মক নয়। মূলতঃ 'জীবনদেবতা'জনও মন্দির-গীর্জা-মশজিদের দেবতার চেয়ে গভীরতর
হলেও তাঁর 'আশীর্বাদের' বিস্তার আদতে একটি বা দুইটি অর্থনৈতিক 'শ্রেণী'র মধ্যেই লভ্য -- অবশ্যই মননের 'জমিন', সে সব শ্রেণীরো যাদের সুজলা, তাদেরই মর্মে
ফলে এই ফল, ফসল। অর্থনৈতিক 'শ্রেণী'সীমার বাইরেও মানবজমিনে আবাদ হয় লালনহেন 'সোনা'র।
সত্য। তবে দিন আনা আর দিন খাওয়া কিম্বা দিনগত না-খাওয়ার খাতে তার চেয়ে ঢের ঢের ঢের
বেশী 'মানব' আমরণ টেরই পেতে পারেনা যে তারাও 'মানুষ'। অতএব এই বিশ্ব যতোদিন শ্রেণীবিভক্ত,
ততোদিন 'রামপ্রসাদী সোনা' কিম্বা রবীন্দ্রনাথের 'জীবনদেবতা'ও শ্রেণীরই মননাকাশের মেঘ-ফসল।
তবু মৃত্যুকে
নিয়ে ভাবি। ভাবি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে। ভাবি মৃত্যুর অনুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রগান
নিয়ে। ... এই 'ভাবা'র কোনো সামাজিক, কোনো বৃহত্তর অর্থ এই মুহুর্তের শ্রেণীবিভক্ত বিশ্বে
নেই জেনেও ভাবি। ভাবি নিজের আনন্দে, ভাবনার আনন্দে।
২।
'মৃত্যু'
আমার কাছে শেষ। অতএব 'মৃত্যু' আমার কাছে কোনো 'রহস্য' নয়, 'রোমান্টিকতা' নয়। মৃত্যুকে
এইভাবে মেনে নেওয়াই জীবের, জীবনের কঠিনতম সাধনা, জটিলতম বিবেচনা। রবীন্দ্রগান, আমার
মর্মে, ওই কথাটিকেই যেন বলেযান ফিরে ফিরে, সুরে সুরে...
"গোধূলিলগনে
পাখি ফিরে আসে নীড়ে/ ধানে ভরা তরীখানি ঘাটে এসে ভিড়ে" ... এই মৃত্যু। দিনের ওড়াওড়ি
শেষে নীড়ে ফেরা। যাপিত মুহুর্তের ধান-বোঝাই করে নিয়ে টের পাওয়া, বলে ওঠা "দু হাত
দিয়ে বিশ্বেরে ছুঁই শিশুর মতো হেসে ..." ... মনেহয় এই গান "মুখপানে চেয়ে
দেখি" এই প্রশ্নেই দ্বিধাকম্পিতঃ "আজো কি খোঁজার শেষে ফের নি আপন দেশে"
... তুমি কি আজো টের পাওনি, যে মৃত্যু একটি 'শেষ'? তুমি কি আজো 'মৃত্যু'র আবডালে খুঁজে
বেড়াচ্ছো কোনো অসম্ভব রহস্যকে? এই অনর্থক খুঁজে বেড়ানোর মূল্যে তুমি কি বিনষ্ট করে
ফেলছো তোমার জীবিত-মুহুর্তগুলি? ওই সকল জীবিত মুহুর্তগুলিকেই তো 'আসন' করে আমি পেতে
রেখেছিলাম ..."মালিকা রেখেছি গাঁথি", তোমার অনর্থক সন্ধান, সেই পরশপাথরলোভী
খ্যাপা'র মতন, তোমার জীবন্ত মুহুর্তগুলিকেও কি দিল "বিফল" করে? "তাহা
ভাবি খনে খনে" আর তাই যখনি তোমার "মুখপানে চেয়ে দেখি" আমার "ভয়
হয় মনে" ... কেননা আমি তো দেখেছি "ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া
মিলায়ে যায়/ হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায়" আর এই "দেখা"
আমাকে জানিয়েছে, জানিয়ে চলেছে মুহুর্মুহু যে 'মৃত্যু'ই আমার শেষ। অতএব 'মৃত্যু' আমার
কাছে কোনো 'রহস্য' নয়, 'রোমান্টিকতা' নয়। তাইতো আমি বুঝিনা 'মৃত্যু'কে ঘিরে তোদের এই
'বিষাদভাবনা'। মৃত্যুর পরপারে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই, কোনো দেবলোক, প্রেতলোক নেই কেননা
'দেবতা' বলেই কিছু নেই কেননা এই 'বিশ্ব' নয় একমাত্র বিশ্ব, এই ব্রহ্মান্ড নয় একমাত্র
ব্রহ্মান্ড যাতে কোনো 'ঈশ্বর' প্রাণের সৃষ্টি করেছেন কোনো 'বিশেষ' উদ্দেশ্যে। মুহুর্মুহু,
নেহাৎই আকস্মিকতায় নির্মীত হচ্ছে সংখ্যাতীত 'বাব্ল ইউনিভার্স' আর তাদের অনেক অনেক
গ্রহেই রয়েগেছে 'প্রাণ'-সম্ভাবনা। সুতরাং এই যে জীবন তা নেহাৎই আপতিক, আকস্মিক। তাই
জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই মহা-মুহুর্ত। প্রতিটি লহমা'ই তাই উৎসব। 'মৃত্যু' তো শেষ। তাকে
রহস্য-মহিমায় আবৃত করে মরণোত্তরের ভাবনায় আপনাকে বিচলিত নাকরে চল্ কেবলই হাসি, কেবলই
গাই ... 'সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন'হেন "হাসিয়া খেলিয়া" তারপর মরিতে চাই
...
এ'ই শুনি
আমি। রবীন্দ্রগানে। এই শুনেছিলাম আমি প্রথম শোনা কিন্তু ভুলে যাওয়া রবীন্দ্রগানে। গানের
কথায়, গানের সুরে।
মনেপড়ে এক
সন্ধ্যা। ইস্কুল-কালের শেষ প্রান্তের। বারান্দার নিচের সিঁড়িতে বসে আছি। বাবা কিছুদিন
আগেই কিনে এনেছে ফিলিপ্স কোম্পানীর একটি টেপ রেকর্ডার। তাতে বাজছে ক্যাসেটের-গান, দেবব্রত
বিশ্বাস গাইছেনঃ "চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনি চলিয়া যাব শেষ হলে খেলা"।
সামনে বাঁশের নিচু বাউন্ডারি বেড়া। পার হয়ে রাস্তা। রাস্তা ধরে সোজা চললে অনতি দূরেই
পাহাড়িয়া নদী লঙ্গাই। রাস্তার পরপারে শ্রীভূমি পাঠশালার মাঠ। তার আবহে আম-নিম-সুপুরী-নারকোলের
স্যিলুয়েট। আকাশে একটি দুটি তারা। বার বার ফিরে আসে ওই সন্ধ্যাটি। ফিরে আসে ওই অভিমানী
কিন্তু প্রত্যয়ী বাক্যগুলিঃ "চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনি চলিয়া যাব শেষ
হলে খেলা"। ... এই তো মৃত্যু। খেলার শেষে চলে যাওয়া। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েও চিহ্নিত
হওয়া, না কোনো ঈশ্বরীয় মহিমায়, ম্যাজিকে নয় -- পদার্থবিদ্যার, রসায়ন, জীববিদ্যার বস্তুসত্যে।
... গতকাল রাত্রে বৃষ্টি হয়েছে প্রবল। ওই বৃষ্টিতে ভেসে ছড়িয়ে পড়েনি নি আমার সদ্য প্রয়াত
পিতার বিভূতি, এই শহরে? তারপর দিনের বেলা, সূর্যের তাপে, জলের বাষ্পশরীরের সঙ্গে উড়ে
যায়নি কি কিছু দূর? ঝরে যায়নিকি কোনো অজানা, অচেনা পথে, মাঠে? সেখান থেকে আবার যাবেনা'কি
উড়ে আরো দূরের, আরোও অজানার দিকে? ... বাবা নয়, বাবার বিভূতি ... সমস্ত শ্মশান, কবরের
থেকে এই ভাবেই, মৃতজন এইভাবেই যানা কি ছড়িয়ে? এই বিস্তারের মর্মে কোনো ঈশ্বর নেই, দেবতা
নেই। যে আছে সে জীবনের দেবতা। জীবন-দেবতা, যে জপ-তপ-ধ্যান-যোগ-মন্দির-মশজিদ-গীর্জা
সমস্তের অতীত, যে এক বিস্তার যাকে কখনো টের পেয়েছি অন্ধকারের ধুধুতে, মাঠে শুয়ে আকাশের
দিকে চেয়ে থেকে, যার সন্ধান কামু'র "এডাল্টারিয়াস ওম্যান" পেয়েছে তারাভরা
আকাশের দিকে চেয়ে থেকে অবলীল আত্মরতিতে আর ওই মহাজাগতিক আত্মরতিই তাকে দিয়েছে
"এডাল্টারিয়াস" অভিধা। ... "এক মাঝরাত্তিরে বাবা এসে বাড়ির সমস্ত লাইট
ফাইট জ্বালিয়ে এক তুলকালাম বাধালেন। জেগে উঠে জিজ্ঞেস করে জানলাম হাসপাতালে আমার বোনের
একটি বাচ্চা হয়েছে" কাফকা লিখেছেন তাঁর দিনলিপিতেঃ "ভাবলাম, হায়, এমতো আনন্দিত
হওয়ার কথা তো বাচ্চার জন্ম খবরে নয় বরং একটি মানুষ যখন চলেযায়, একটি নিটোল, পূর্ণাঙ্গ
জীবন কাটিয়ে, তখনই হওয়া উচিত..." ... এই যে একটি নিটোল, পূর্ণাঙ্গ জীবন কাটিয়ে
'চলে যাওয়া' সেই তো প্রত্যয়ঃ "চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনি চলিয়া যাব
শেষ হলে খেলা"। তারপর? তারপর "আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুনো নব পথিকেরই
গানে নূতনের বানী"। ... 'আমার' নয়, 'নূতনের' বানী। কেননা 'আমি' ত আর নেই। আমি
ছিলাম আর ওই যে 'ছিলাম' তার মূল্য, সত্য মূল্য এইটুকুই "আঁখি তব ছলোছলো"
... "এই বহু মানি ..." কেননা 'আমি' জানি যে সত্য এইঃ "বরষ ফুরায়ে যাবে,
ভুলে যাবে জানি"। ... মনেপড়ে "রুদ্ধ গৃহ"... "এ জগতে অবিশ্রাম
জীবনের প্রবাহ মৃত্যুকে হু হু করিয়া ভাসাইয়া লইয়া যায়, মৃত কোথাও টিঁকিয়া থাকিতে পারে
না। এই ভয়ে সমাধিভবন কৃপণের মতো মৃতকে চোরের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য পাষাণপ্রাচীরের
মধ্যে লুকাইয়া রাখে, ভয় তাহার উপরে দিবারাত্র পাহারা দিতে থাকে। মৃত্যুকেই লোকে চোর
বলিয়া নিন্দা করে, কিন্তু জীবনও যে চকিতের মধ্যে মৃত্যুকে চুরি করিয়া আপনার বহুবিস্তৃত
পরিবারের মধ্যে বাঁটিয়া দেয়, সে কথার কেহ উল্লেখ করে না..."
৩।
ফিরে যাই
সেই সন্ধ্যায়। ইস্কুল-কালের শেষ প্রান্তের। বারান্দার নিচের সিঁড়িতে বসে আছি। বাবা
কিছুদিন আগেই কিনে এনেছে ফিলিপ্স কোম্পানীর একটি টেপ রেকর্ডার। তাতে বাজছে ক্যাসেটের-গান,
দেবব্রত বিশ্বাস গাইছেনঃ "চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনি চলিয়া যাব শেষ
হলে খেলা"। সামনে বাঁশের নিচু বাউন্ডারি বেড়া। পার হয়ে রাস্তা। রাস্তা ধরে সোজা
চললে অনতি দূরেই পাহাড়িয়া নদী লঙ্গাই। রাস্তার পরপারে শ্রীভূমি পাঠশালার মাঠ। তার আবহে
আম-নিম-সুপুরী-নারকোলের স্যিলুয়েট। আকাশে একটি দুটি তারা। ... আমরা ছিলাম কিশোর, মা-বাবা
ছিল যৌবনের সীমানা ছুঁয়ে, ছিল ছোটো খাল, 'নটীখাল', বহমতী। আজ আমরা অতিক্রম করে এসেছি যৌবনের সীমা। বহতা নটীখালের মুখে
পড়েছে বাঁধ। বাবা সদ্য বিগত। মা অশীতিপর। তবু সেই সন্ধ্যাটি আসে, আসবে ঘুরে ফিরে। ফিরে
আসবে বাবার স্মৃতি, এই বাড়িটির হয়েওঠার কাহন, বাবার দিয়ে যাওয়া "বসন্তের গান"।
কখনো "আঁখি ছলো ছলো"। কিন্তু বাবাকে আর পাওয়া যাবেনা। তাই 'তারার পানে চেয়ে
চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে"। এই সত্য। মৃত্যুর সত্য। সেদিন আর কোনো কিশোর-কিশোরী,
এমনি আর কোনো সন্ধ্যার বারান্দায় বসে চেয়ে দেখবে সামনে বাঁশের নিচু বাউন্ডারি বেড়া।
পার হয়ে রাস্তা। রাস্তা ধরে সোজা চললে অনতি দূরেই পাহাড়িয়া নদী লঙ্গাই। রাস্তার পরপারে
শ্রীভূমি পাঠশালার মাঠ। তার আবহে আম-নিম-সুপুরী-নারকোলের স্যিলুয়েট। আকাশে একটি দুটি
তারা। শুনবে সিডি'তে কিংবা গান-শোনা এপ্ এ গানঃ"চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা,
তখনি চলিয়া যাব শেষ হলে খেলা" ... এরাই সেই 'নব পথিক' , এদের কন্ঠেই "নূতনের
বানী"। "নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে" ... এ'ই মৃত্যু, এ'ই সত্য। আর কিছু নয়। অন্তত আমার
কাছে। মৃত্যু' আমার কাছে কোনো 'রহস্য' নয়, 'রোমান্টিকতা' নয়। মৃত্যুকে এইভাবে মেনে
নেওয়াই জীবের, জীবনের কঠিনতম সাধনা, জটিলতম বিবেচনা। রবীন্দ্রগান, আমার মর্মে, ওই কথাটিকেই
যেন বলেযান ফিরে ফিরে, সুরে সুরে...