বোর্হেস
থেকে মহাভারত, ০৯-০৬-২০১৮
" I have known that
thing the Greeks knew not - uncertainity " লিখেছেন
বোর্হেস তাঁর The
Lottery in Babylon নামের গদ্যে। ১৯৪১ সালে।লিখেছেন এক বেবিলন
বাসিন্দার জবানীতে। অর্থাৎ ২৫০০ বা ৩০০০ হাজার খৃস্টপূর্বে গিয়ে তিনি তাঁর
চরিত্রকে দিয়ে উদ্যাপন করিয়েনিয়েছেন 'অনিশ্চিতি'র, অনিশ্চিতর। লটারী, যা হয়,
আদতে, জুয়া - সেই অনিশ্চিতির হাতধরে আপতন, সম্ভাবনা এবং ক্রমে সমাপতন এসেছে তাঁর
এই রচনায় যার শেষে বোর্হেস, তাঁর সেই ২৫০০
বা ৩০০০ হাজার খৃস্টপূর্বগত চরিত্রের মুখ দিয়েই বলিয়ে নিচ্ছেনঃ " Babylon is
nothing but an infinite game of chance"। বিজ্ঞান অনিশ্চিতির তত্ত্বের
দিপে পা বাড়িয়েছে সেই ১৯০৭ সাল থেকেই। সুতরাং ১৯৪১ সালে বোর্হেসের এই উচ্চারণ,
২০১৮ সালে, যখন Higgs boson বা
God
particle অবধি হেঁটে চলে এসেছে মানব,
তখন আর তেমন বিস্মিত করেনা, অন্ততঃ আমকে, নতুন করে।
বোর্হেসের
সমূহ রচনার মতোই Lottery in Babylon ও এক অসংখ্য মাত্রিক
রচনা।তবে রচনাটির অন্তর্গত অন্য সমস্ত মাত্রার থেকে, তাদের আবিষ্কারচেষ্টার থেকে
আমি ভাবিত হই, অন্ততঃ এই রচনার সাপেক্ষে, প্রায় অপ্রাসঙ্গিক একটি চিন্তায়। চিন্তাটি
আবর্তিত হয় মহাকাব্য আর জুয়াকে কেন্দ্র করে।
গ্রীক মহাকাব্য আর মহাবিয়োগের নাটকগুলির কথা
ভাবি। ভাবি সেখানে, চালচিত্রে, অনিশ্চিতি প্রায় প্রতি মুহুর্তের বাস্তবতা হলেও সেই
চালচিত্রের সম্মুখে যাঁরা কুশীলব তাঁরা কি অনিশ্চিতির শিকার? তাঁরা কি কম্পিত দ্বিধায়?
- ট্রয় অভিযানের সূচনা মুহুর্তেই দেখি সমুদ্র সহসা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ। তাতে পাঠকের
মর্মে যদিবা সংশয় জন্মায় তাতে কিন্তু কেঁপে ওঠেনা চরিত্রেরা। তারা সমাধান ঘটায়
সমস্যার। এগামেম্নন, অবশেষে নিজ শিশু সন্ততিকে বলী দিয়ে, তুষ্ট করে
সমুদ্রদেবতাকে, সূচনা করে যাত্রার।
[অনিশ্চিতির অনুভব বা আপতন-সমাপতনের থেকে একটু
সড়ে গিয়ে ভাবি হোমারের এগামেম্নন,
বাইবেলের আব্রাহাম, ইস্কাইলাসের এগামেমনন - কেউ ই কি সন্ততি হত্যার প্রস্তাবে তেমন
ভাবে কম্পিত যেমনটা হওয়া উচিত ছিল কোনো পিতার? রাম'কে নিজহাতে হত্যা তো দূরস্থান,
রামের বনবাস গমনের স্বেচ্ছা ঘোষনামাত্র দশরথ সংজ্ঞাহীন। ক্রমে মৃত। ধৃতরাষ্ট্র তো
অন্ধ, আদতে, সন্ততিস্নেহেই। মহাকাব্য,মহানাটকগুলির অন্তর্গত অপত্য স্নেহ-অস্নেহ
নিয়ে ভাবা যেতেই পারে বিস্তারিত অনুষঙ্গে, অন্যত্র...]
যে অর্থে হ্যামলেট অনিশ্চিতি আর আপতন-সমাপতনের
নিগূঢ়ার্থ সন্ধানে আমূল কম্পিত, যে অর্থে শেক্ষপীরের 'ট্রয়লাস্' গ্রীক্
মহাসাহিত্যের 'ট্রয়লাস' থেকে ভিন্ন - সেই আবছায়া-উপত্যকার কুয়াশার ভিতর থেকেই যেন
বলেন বোর্হেসঃ " I have known that
thing the Greeks knew not - uncertainity "
এখানে এসে আরেকটি কথা মনেহয়। অনিশ্চিতি এবং
আপাতন-সমাপতনের যে ক্রীড়া, যা মূলতঃ জুয়া, তা'ই কি নয় মহাকাব্য-মহাভারতের প্রায়
নিয়তিপুরুষ? অর্থাৎ গ্রীক মহাকাব্যের যুগের ঢের আগেথেকেই ভারতবর্ষ, বলা ভালো
এশিয়ায়, চিন্তা ও কল্পনার চক্রবালে, এসে পরেছিল এই ভাবনা, যে মানবজীবনে নিয়তি,
অদৃষ্ট, প্রকৃত প্রস্তাবে, আসে অনিশ্চিতি, আপতন-সমাপতন ইত্যাদির মিশ্র ও জটিল পথ
ধরে যেখানে গ্রীক মহাকাব্য ও পরবর্তীতে মহানাটকে 'অদৃষ্ট' মূলতঃ দেবতাদের স্পষ্ট
অভিশাপ অথবা ভবিষ্যৎবাণী।
এই সূত্রটির নিরিখে বেবিলনীয় সভ্যতার
উত্থান-পতনের কাহনের সঙ্গে এশীয় মানবের উত্থান-পতনের তুলনামূলক কোন আলোচনা কি
সম্ভব? সম্ভব কি তা থেকে তুলে আনা কোনো ইঙ্গিতের নির্যাস? কেজানে।
ভেবেছিলাম। তাই লিখে রাখলাম।
১২/জুন/২০১৮ মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়
"বড়দাদার সঙ্গে যত পারি আমরা কম কথা কইতুম।আর কোথায়ই বা কথা কইব?
কথা
জমবেই
কী
করে? সেই পুকুরঘাট, সেই জামতলা, সেই পেয়ারাতলা, যেখানে গেলেই আমাদের তিন ভাই-এর মন খুলে যেত, তেমন জায়গা এখানে কোথায়?" - অর্থাৎ তেমন চালচিত্র নাহলে তেমন কথা জাগেনা। যদিবা জাগেও, মর্মে, তথাপি বেজে ওঠেনা, কন্ঠে। আমি এখন জানি। আমি ক্রমে জেনেছি। শেখরদা, সিদ্ধার্থ, জোনাক, সন্দীপনদা - কাউকেই ফোন করতে ইচ্ছা হয়না। এমন কি মা-বাবা-ভাই'কেও না। ইচ্ছা হয়না, কেননা, কি কথা বলব? এখানে কোথায় "সেই পুকুরঘাট, সেই জামতলা, সেই পেয়ারাতলা"... সেই লঙ্গাই নামের নদী, সেই টিনের চালের ছোটো বাড়িটি আমাদের? সেই অন্ধকার অন্ধকার সড়ক, কিনারে কিনারে কচুগাছ, জোনাকি, আঁকাবাঁকা রাস্তা উঠে গেছে পাহাড় বেয়ে পারহয়ে আনারসের ক্ষেত, চা বাগান পারহয়ে ...
ফোনের ভিতর দিয়ে সেই আবহটুকুকে ছুঁতে চেয়ে দেখেছি - পারিনি। দেখেছি আমার আবহের নগর, ফ্ল্যাটবাড়ি, গোলমাল -ঢিল ছুঁড়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে আমার মর্ম-আবহ। ... ক্রমে, টের পেয়েছি, প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি সম্পর্কের, নিজ নিজ আবহ রয়েছে যাদের বাদ দিয়ে মানুষটি, সম্পর্কটি কখনো সম্পূর্ণ হয়না। আমার শ্বশুরমশাই'এর আবহে আ মি বাস্তবিকই দেখতে পেতাম
শিলচর শহরের, লিংক রোড পাড়ার সেই ছড়ানো বাড়িটাকে। তার গাছগাছালিকে। সেই তাঁকেই যখন
দেখলাম, সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে, এখানে, এই "নগর" এ, ফ্ল্যাটবাড়িতে
বাসিন্দা -তখন তিনি আমার - না'কি আমিই তাঁর - অপরিচিত হয়ে গেলাম?
কথাগুলি ছিল মর্মেই। কোথাও। এইভাবে প্রকাশিত হল,মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়'এর "পথ ভুল" নামের ছোটোগল্পটি
পাঠান্তে।
"পথ ভুল" ছোটোগল্প। তথাকথিত "ছোটোদের"
গল্প।মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় নামটিও সেই "পুকুরঘাট,
সেই জামতলা, সেই পেয়ারাতলা"র মতো হারিয়ে যাওয়া। "মোহনলাল অবনীন্দ্রনাথের জামাতা
সুসাহিত্যিক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র। ..." - মোহনলালের
স্মৃতিকথা "দক্ষিণের বারান্দা"র ভূমিকায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংক্ষেপে মোহনলালের জীবন-কথা শুনিয়েছেন।
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটকের একটি সংকলন, শৈলেন ঘোষের
সম্পাদনায় ২০০০ সালে প্রকাশ করেছিল "আ-ন-ন্দ"। যথারীতি রচনা পরিচিতি
তাতে নেই। এতাবৎ গ্রন্থটির আর কোনো সংস্করণ, মনে হয়না হয়েছে।
২১ জুন
২০১৮ - স্বধর্ম, বিধর্ম, না-ধর্ম
সপ্তর্ষি
বিশ্বাস
Ganster ছবিগুলি Godfather থেকে Goodfellas,
Meansteet, Scarface - ইত্যাদি, এদের অপূর্ব নির্মাণশৈলী ছাড়াও এদের মধ্যে যে আরেকটি
উপকরণ আমাকে এবং সম্ভবতঃ অন্য দর্শককেও, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে,ছবিগুলিরপ্রতি আকৃষ্ট
করে, তা এই, যে, এদের নিজের Clan বা গোষ্ঠির প্রতি এই 'মাফিয়া'
বা 'ডন' দের কর্তব্যবোধ এবং
ভালবাসা - ভালবাসা যা কর্তব্যবোধেরই নামান্তর। ভারতীয় ছবিতে সুধীর মিশ্রা'র 'ইস রাত কি সুবহ নেহি' থেকে রামগোপালের "সত্যা', কোম্পানী হয়ে অনুরাগ কাশ্যপের কিংবদন্তী
'গেংস অফ বাসিপুর'এ'ও ছায়াফেলে
এই বাস্তব।
- নিজ "গোষ্ঠী" যা শুধুমাত্র তাদের আত্মিয় পরিজন নয়, যা তাদের দলের নানা
স্তরে কাজ করা নানান মানুষ - তাদের প্রত্যেকের প্রতি এই
'মাফিয়া' দের দায়িত্ববোধ মাফিয়া নিয়ে ছবির,
বাস্তব মাফিয়া যাপনের সত্য।
নিজ
গোষ্ঠী বা clan এর সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্ত 'গড ফাদার'ভিটো
কর্লিয়নি থেকে থেকে হালের "মালিক ভাই" - কেউই পিছপা হয়না প্রতিপক্ষের ক্ষতি
সাধনে। তথাপি
তাদের কে যে নিতান্ত
"ক্রিমিন্যাল" বলেও মনে হয়না তার হেতুটি
হয়তো এই, যে, বর্ণাশ্রম ভারতে যেমন স্পষ্ট
ছিল অন্যত্র তা তেমন না হলেও বৃত্তির ভিত্তিতে গোষ্টী বা সমাজের স্তরভাগ সর্বত্র বাস্তব। ফলে কৃষ্ণ যখন অর্জুনকে "স্বধর্ম"
ও "পরধর্মের" কাহন
শোনায়, বলে , স্বধর্ম অবলম্বন করে নিধন
হওয়াও পরধর্ম গ্রহণের চেয়ে "বেহ্তর্"
- তখন কৃষ্ণ "ধর্ম" বলতে যা বোঝায় তা অর্জুনের ক্ষাত্রধর্ম এবং যা অবশ্যই বৃত্তি ভিত্তিক। অর্থাৎ এর সঙ্গে "ধর্ম"
শব্দের অন্তর্গত আধ্যাত্মিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে Clan "বৃত্তি"ই
শেষ কথা, তার রক্ষাই শেষকথা। অপর Clan এর পরাজয়, যেন তেন
প্রকারে, এখানে একমাত্র "মক্সদ্" বা "উশুল"
- যা অনাদিকালের "সৈন্য" নামধেয়দের মগজে খোদাই করে দেওয়া হচ্ছে আপ্তবাক্য বলে।- আর বৃত্তিভিত্তিক এই গোষ্ঠী চেতনা, যেহেতু, ঐতিহাসিক ভাবে, আমাদের শিরায়, রক্তে
বিধৃত হতে হতে, ক্রমে, আমাদের ডিএনএ'তে মিশে গেছে। কৃষ্ণ'র মুখ দিয়ে
তথাকালীন Clan অধিপতিরা কথাটি বলিয়ে
নিয়েছে খুবই কায়দায়, খুবই কাব্যিক ভাবে। ওই উচ্চারণে কোনো "ধর্ম" নেই যা
একটি ব্যক্তির অন্তর্গত নিজ ধর্ম, যে ধর্মের তাড়নায় সাময়িক হলেও অর্জুনের যুদ্ধে বিরাগ।
নিশ্চিত ওই বিরাগ, ওই প্রশ্ন তৎকালে কোনো একজন বা অনেকজনের মর্মে ও বাক্যে
উচ্চারিত হয়েছিল। হয়তোবা অনূদিত হয়েছিল কর্মেও। সুতরাং এর প্রতিপক্ষে ধর্মীয়
অকাট্যতার আমদানীর প্রয়োজনেই এই অর্হুন-বিষাদ এবং ক্রমে ওই বিষাদের পিন্ডি চটকিয়ে
অর্জুন ফের "বাহুবলী", "এক থা টাইগার" ...
বৃত্তিভিত্তিক
গোষ্ঠীর আচার কোনো ধর্ম নয়। ধর্ম এক একটি মানুষের নিতান্ত নিজস্ব তার নির্মীত নিজ
দেবতার আশ্রয়ে। সেই ধর্মও, নিতান্ত জড়বুদ্ধিভিন্ন কারোরই ধ্রুবসত্য নয়। নরহত্যার সপক্ষে যে রায় ছিল রাস্কলনিকভের
"স্বধর্ম" হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করবার পূর্বে ও পরেও তা'ই ক্রমে ভিন্ন
ধর্মে পরিণত হল তার অভিজ্ঞতার, অনুভুতির নিরিখে ( ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট্)।
লেভিনের স্বধর্ম টি ঠিক কি তারই নির্ধারনের চেষ্টা 'আনা কারেনিনা' উপন্যাসের একটি
মাত্রা, একটি চক্রবাল। আনা কারেনিনা বা ভ্রন্স্কি'র মর্মধর্ম আবহের চালচিত্রের
নিরিখে পরিবর্তিত হতে হতে অবশেষে আনা ঝাঁপায় রেলগাড়ির চাকার তলায় আর ভ্রন্স্কিও,
প্রায় আত্মহত্যারই নামান্তরে চলেযায় এমন এক যুদ্ধে যোগ দিতে যা উপন্যাসের
মধ্যপর্বেও ছিল তার মর্মধর্ম বিরোধী।
ইউরোপের
অস্তিত্ব্ববাদের যে মূলসূত্র আমি টের পেয়েছি - যা কিয়ার্কেগার্ড থেকে সার্ত্রে
পর্যন্ত বহমান তা বৃত্তিভিত্তির "স্বধর্ম" কে পার হয়ে, চার্চ, মশজিদ,
গীর্জা, আশ্রমের গোষ্ঠি'র 'দেবতা'কে পারহয়ে বলে একলা এক নিহিত ঈশ্বরের কথা - যা
প্রতিটি মানুষের নিরিখে ভিন্ন, প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহুর্তের নিরিখে ভিন্ন।
যা আমাকে এই বলে, যে, জড়বুদ্ধি দ্বিপদভিন্ন চিন্তার মূল্যে যারা জীবনকে, যাপন কে
টেরপায় আপন শোণিতে, তাদের কোনো ঘোষিত "ধর্ম", "স্বধর্ম",
প্রাতিষ্ঠানিক দেবতা, ঈশ্বর থাকতে পারেনা। ছিলওনা কদাপি।
২৪ জুন ২০১৮, শোঁশোঁ-ধ্বনিঃসুসু-ধ্বনি
এবং 'ঠাকুর' বনাম 'জয়েস্'
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর |
জেম্স্ জয়েস্ |
বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার, কে দেয় আমার বীণার
তারে এমন ঝঙ্কার ॥ নয়নে ঘুম নিল কেড়ে, উঠে বসি শয়ন ছেড়ে-- মেলে আঁখি চেয়ে
থাকি, পাই নে দেখা তার ॥ গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া প্রাণ উঠিল পুরে, জানি নে কোন্
বিপুল বাণী বাজে ব্যাকুল সুরে। কোন্ বেদনায় বুঝি না রে হৃদয় ভরা অশ্রুভারে, পরিয়ে দিতে চাই
কাহারে আপন কণ্ঠহার ॥ রাগ-ছায়া: বেহাগ রচনাস্থান: বোলপুর |
At that hour when all
things have repose, O lonely watcher of the skies, Do you hear the night wind and the sighs Of harps playing unto Love to unclose The pale gates of sunrise? When all things repose, do you alone Awake to hear the sweet harps play To Love before him on his way, And the night wind answering in antiphon Till night is overgone? Play on, invisible harps, unto Love, Whose way in heaven is aglow At that hour when soft lights come and
go, Soft sweet music in the air above And in the earth below. Chamber Music, 1907 *এই তথ্য অধুনা সকলেরই জ্ঞাত, যে, এই শব্দবন্ধের একটি অর্থঃ কক্ষাভ্যন্তরের মূত্র পাত্রে মূত্র ত্যাগের ধ্বনি।('
the sound of urine tinkling in a chamber pot') |
"গীতাঞ্জলি'র সূত্রপাত। বিবাহ। "মালিনী' অভিনয়। "গীতাঞ্জলি" প্রকাশ। "রাজা"। "জীবনস্মৃতি"। সূত্রঃ রবিজীবনি , প্রশান্তকুমার পাল, ৬ষ্ঠ খন্ড |
Elkin Mathews accepts Chamber Music,
Jan. (pub. May); Joyce quits Roman bank, Feb.; mugged on last night, losing
salary in cash; receives recriminatory letter from (his brother) JSJ; return
to Trieste with family, March; Dubliners rejected by several
publishers; Joyce writes on Ireland for Piccola della Serra (Trieste)
and gives 3 lectures at Università del Popolo; suffers rheumatic fever and
enters Ospedale Civico, mid-July; Lucia, a daughter, born 26 July, in charity
ward of same; Joyce completes “The Dead” during convalescence (6 Sept);
Mathews refuses to publish Dubliners; সূত্রঃ http://www.ricorso.net/rx/az-data/authors/j/Joyce_JA/apx/schema/Bio_chron.htm |
Chamber Music => |
1907 |
1910 |
< = Bishwa Jakhan Nidra Magan |
Age diff.= Tagore, Joyce |
b. Joyce => |
1882 |
1861 |
< = b. Tagore |
21 |
|
25 |
49 |
|
|
"চেম্বার মিউজিক",
"পোয়েম্স্ পেনিইচ্' আর 'গিয়াকোমো জয়েস্" - জয়েসের এই তিনটি
গ্রন্থই আমার প্রথম পাঠ একত্রে। পঞ্চবিংশতি বর্ষীয় মেধা ও মননের
সেই প্রায় স্বর্গীয় আনন্দের ফসল দশ-বারোটি কবিতিকার সমাহারে একটি দীর্ঘ কবিতা
যা "সাহিত্য" নামক পত্রে প্রকাশিত
তৎকালে। জয়েসকবিতা
পাঠের পূর্বেই অবশ্য জয়েসপরিচয় ঘটেগেছে "ডাব্লিনার্স",
"পোর্ট্রেট অফ দ্য আর্টিস্ট ..." পাঠে
এবং "ইউলিসিস" পাঠের অনেকগুলি
অপচেষ্টায়।
আমার "চেম্বার মিউজিক"
প্রথম পাঠের সময়কে ঘিরে আছে "কলকাতার জঙ্গলে"
চাকরির সন্ধানে ঘুড়েবেড়ানো, শস্তার মেসবাড়ির দোতলায়
একটি খাট,একটি জানালা, একটু পুকুর,দুপুররোদের কলেজ স্ট্রিট,হাতফেরতা বইএর ফুটপাথবিপণী,
কলেজ স্কোয়ারের পাউরুটি-ঘুগনী, দেবেন বিড়ি আর স্টেফান ডেডালাসহেন কবিযশোলিপ্সার হেউঢেউ। সেই প্রথম পাঠের
প্রথম অগ্নুৎপাতগুলির মধ্যে মর্মনদীগুলির গতিপথে যেটি এনেছিল সবচেয়ে বেশী বাঁক তার
দিকে ফিরে তাকাতে গিয়ে শিরায়, শোণিতে এখনো বেজে ওঠে এক রাত্রি। এক রাতবাতাস।
সোম থেকে শনি দিনভর
ঘুড়েবেড়াই অফিসপাড়ায় ফলতঃ পড়াশোনা, লেখালেখি সমস্তই রাত্রে। মেসবাড়ি ঘুমায় দোতলায়।
একতলায় ঘুমায় মেসের মালিকজনের পরিবার। মেসবাড়িটির ঠিক মুখোমুখি যে আধা বস্তি তা
কখনো ঘুমায়, কখনো আবার জেগে ওঠে মাতালের হল্লায়, মদ্দা-মাদীর খেউড়ে। আমার চিলতে খাটের
মাথায় জ্বলে চল্লিশ ওয়াট বাল্বের ভগ্ন ঊরু টেবিল ল্যাম্প। পাঠ। পাঠ করিঃ
At that hour when all things have repose,
O lonely watcher of the skies,
Do you hear the night wind and the sighs
Of harps playing unto Love to unclose
The pale gates of sunrise?
পাঠ
করি আর পাঠমাত্রই মর্মে বেজেওঠে গান। না, সে গান না'তো গীর্জার "চেম্বার
মিউওজিক" না'তো সুসু করবার কক্ষাভ্যন্তরের মূত্র পাত্রে মূত্র ত্যাগের ধ্বনির
সঙ্গীত। [ এই তথ্য অধুনা
সকলেরই জ্ঞাত, যে, এই শব্দবন্ধের একটি অর্থঃ
কক্ষাভ্যন্তরের মূত্র পাত্রে মূত্র ত্যাগের ধ্বনি।(' the sound of urine tinkling in a chamber pot') ]।মর্মে বেজেওঠেঃ
বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার,
কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার ॥
... "চেম্বার
মিউজিক" এর, আমার, প্রথম পাঠ, দ্বিতীয়,তৃতীয়, চতুর্থ পাঠ ঘটেযায় পর পর। সেই
পাঠগুলির "ইমোশন" এর "রিকালেকশন" ঠিক "ট্রেন্কুইলিটি"তে
হয়েছিল কি'না কেজানে তবে আরো একটি কবিতিকাগুচ্ছ রচিত হয়েছিল ঠিক। পরে সেই
কবিতিকাগুচ্ছকে বাতিল করেছি নিজেই। ফলতঃ সেই আমলের কবিতাজাব্দাখাতাতেই অদ্যাপি
তারা স্বাধীন বাসিন্দা। স্বাধীন কেননা মুদ্রণের নিমিত্ত "এডিটেট" হওয়ার,
মুদ্রণান্তে 'সমালোচিত" হওয়ার কোনো দায়ই নেই তাদের।
সেই বয়সকে, সেই প্রথম পাঠকে,সেই আমলের
কবিতাজাব্দাখাতাদের পার হয়ে এসেছি আজ ন্যূনাধিক পঁচিশ বৎসর তবু বার বার ফিরেগেছি, ফিরে যাই,
ফিরে যাবো, যেতেহবে জয়েসে। জয়েসের নানাগ্রন্থে, নানা গদ্যে,
নানা গদ্যাংশে, নানান কবিতায় - বার বার নানান প্রশ্ন নিয়ে, উত্তর-নিরুত্তর নিয়ে, নানান সহায়তে চেয়ে, ত্রাণ চেয়ে ...
এই ফিরে ফিরে তাঁর কাছে
যেতে যেতে আমার মর্মে
At that hour when all
things have repose,
O lonely watcher of the skies,
Do you hear the night wind and the sighs
Of harps playing unto Love to unclose
The pale gates of sunrise?
এই পংক্তিগুলির টানে
আরো নিবিড়ভাবে এসেছে, আজো আসে সেই গানঃ
বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার,
কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার ॥
যে রাত্রির কথা রবীন্দ্রনাথের এই
গানে, যে রাত্রির ভিতর দিয়ে শোঁশো বয়েযায় জয়েসের রাতবাতাস সে রাত্রি, আমার মর্মে,
নয় কোনো বিশেষ রাত। এ যেন মহাপ্রলয়ের পরে সৃষ্টির গর্ভগৃহের সূচীভেদ্যতা।
নৈঃশন্দ-আন্দোলিত অন্ধকার যা "আলোর অধিক"... সেই অনন্ত অন্ধকারের গহনে
কে বীণা বাজায়? কে শোনে এই বীণার তান? কে
এই "
lonely
watcher of the skies"? মনে আসে "রাজা"র
সুরঙ্গমা-সুদর্শনা, মনে আসে "শাপমোচন"এর কমলিকা। মনে আসে Amalia Popper, যিনিই সম্ভবতঃ "গিয়াকোমো জয়েসের" অধিষ্টাত্রী দেবীঃ
"A love poem which is never recited, it is Joyce's attempt at the
sentimental education of a dark lady, his farewell to a phase of his life, and
at the same time his discovery of a new form of imaginative expression." - যদিও জয়েসজীবনে এমালিয়াকাল এসেছিল
চেম্বারযুগের ঢের পরে তথাপিও কি এক সংশ্রব যেন টেরপাই... Dark love, dark
longing. No more.Darkness....
ঠিক যেমন "বিশ্ব যখন নিদ্রাগমন" এর গহনের যে বীণা বাদক
অথবা বাদিনী তার ব্রহ্মান্ডবিস্তৃত না-উপস্থিতির আড়ালে কখনো, অনর্থকই,যেন দেখতে
পাই, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো'কে - যাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিনিময় আরম্ভ হয়নি তখনো -
যখন রচিত "বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন' - অর্থাৎ ১৯১০ সালে, রবিজীবনের
পঞ্চাশ-উনপঞ্চাশতম বৎসরে।
তবে রচনা দুইটির মধ্যেকার সংশ্রব কোনো বিশেষ নারী বা নারীদের সূত্রে
গ্রথিত নয়। এদের সংশ্রব একটি পৃথিবীর ঘূর্ণনহেতু জাত একটি সাধারন রাত্রিকে
অক্ষ-দ্রাঘিমা-চক্রবাল পার করিয়ে নিয়ে 'অনন্ত রাত্রি'তে জন্মান্তরিত করবার সফলতার
গহনে। রবিগানে তাঁর মর্মবীণার ঝংকারে কবি বলেন - কে বাজায়? "ওগো শোনো, কে
বাজায়" ... যে বাজায় তাঁর কন্ঠের প্রতি নিবেদিত হয় কবির অশ্রুমুক্তানির্মীত
কন্ঠহার। জয়েসগীতিতে বীণার ঝংকার তোলে রাত্রি, মহারাত্রি, শাক্ত পদাবলীর -আর কবির
প্রশ্ন, মহাপথিকের কাছে, হে তুমি, তুমি, তুমি শোনো কি সেই গীতি? রাত্রির?
মহারাত্রির?
When all things repose, do you alone
Awake to hear the sweet harps play
To Love before him on his way,
And the night wind answering in antiphon
Till night is overgone?
অতঃপর জয়েসও যেন আপনার অশ্রুমুক্তানির্মীত কন্ঠহারটিই তাকে চান
নিবেদন করতেঃ
Play on, invisible
harps, unto Love,
Whose way in heaven is aglow
At that hour when soft lights come and go,
Soft sweet music in the air above
And in the earth below.
এই "নিবেদন" জয়েসের কবিতাশরীরের অন্যত্র থাকলেও এই
কবিতিকায় তা পরিগ্রহ করে বিস্তারের যে না-অবয়ব তা অন্যত্র পাই কি? বরং
রোমান্টিকতার যে মুখটি বিষাদসুন্দর তা'ই যেন অন্যত্র ভাস্বর ...
আশ্চর্য
এই যে, রবিগানটি লিখিত ১৯১০ সালে, জয়েসগীতিটি রচিত ১৯০৭ সালে। রচনাকালে রবিকবির
বয়স ৪৯/৫০ আর জয়েসের বয়স ২৫। সেই সময়ে রবিজীবনের মুখ্য ফলকগুলিঃ "গীতাঞ্জলি'র
সূত্রপাত। বিবাহ। "মালিনী' অভিনয়। "গীতাঞ্জলি" প্রকাশ।
"রাজা"। "জীবনস্মৃতি"। জয়েসজীবনে,সেই বৎসরে (১৯০৭) , তিনি
রোগাক্রান্ত, নির্জন রাস্তায় লুন্ঠিত দুর্বৃত্তদের দ্বারা, ক্ষুব্ধ ভ্রাতার পত্র
পান, তাঁর "ডাবলিনার্স" প্রত্যাখ্যাত হয় প্রায় সমস্ত নামী প্রকাশক ও
প্রকাশনাগুলির দ্বারা, জন্ম হয় জয়েসকন্যা লুসিয়া'র। জয়েস শেষ করেন "থি
ডেড" এর প্রথম খসড়া। - রবিজীবন আর জয়েসজীবনের কোনোখানে কোনো মিল নেই। সঠিক
জানিনা একে অপরের রচনা পাঠ করেছিলেন কি'না। তবু মুত্র ত্যাগের সুসু-ধ্বনির সঙ্গে
মিলিয়ে নাম রাখা কবিতা গ্রন্থের কবিতাবলীর অনেকগুলির ডাল-পাতা-প্রশাখা ছুঁয়ে
বয়েযায় সেই শোঁশো বাতাস - যা'তে ভর করে ডানা মেলে, পরে, রবিকবির বলাকারা ...