নিদাঘ
১।
লঙ্গাই নদীর উপরের কাঠের ব্রীজটি তখনো উপযুক্ত ছিল লরী বহিবার। বাস বহিবার। আমরা বলিতাম ‘মেটাডর’। ছোটো ছোটো সাদা গাড়িগুলি এম্বুলেন্স আকৃতির। দুইপার্শ্বে কয়েক সাড়ি ছোটো ছোটো জানালা। দেখা যায় সীট পাইয়া আরামে যাওয়া যাত্রীদের উদাসীন মুখগুলি। দেখা যাইত ঠেলাঠেলি ভিড়ের বিমূর্ত্ত অংশ। ছাদের উপরে মাটী কোপানোর কোদাল,বাঁশের ঝুড়ি, ভরা কিংবা খালি মুর্গীর খাঁচা। ঝুলন্ত। কন্ডাকটর ছোকড়াকেও ঐ ছাদেই উপবিষ্ট দেখা যাইত প্রায়শ।
বাসগুলি আসিত লঙ্গাই নদী পারাইয়া,চা বাগান ছাড়াইয়া । লঙ্গাই নদী পারাইয়া বাজার। লঙ্গাই বাজার। বেগুন তাহার বিখ্যাত। সুস্বাদু পুঁটিমাছ।
ভোরবেলা জাগিয়া উঠে বাজারটি। ঘুমযায় দিনভর। আবার জাগে সন্ধ্যায়। কেহ কূপী জ্বালায়। কেহবা সরকারি খুঁটি হইতে ‘হুক্’ লাগাইয়া জ্বালে ষাট কিংবা একশো পাওয়ারের বাল্ব। কেহ জ্বালায় ‘পেট্রোমাস্ক’। সন্ধ্যা সাতটা হইতে না হইতে নিভিয়া যায় ‘পেট্রোমাস্ক’, নিভিয়া যায় ষাট কিংবা একশো পাওয়ারের বাল্ব। কূপীগুলি কেবল থাকে জ্বলিতে।
ঝাঁপ নামানো অনেক দোকানেই চোলাই মদের সান্ধ্য ঠেক। টক্ টক্ গন্ধ। বাজারের পিছনে, নদীর শরীরে, কূপীর ছায়া কাঁপে। দুলিতে থাকে ঘাটায়-আঘাটায় বাঁধা ছোটোবড়ো নৌকাগুলি। মেটাডরেরা ফিরে। একে একে।
রাস্তার পীচ গিয়াছে বহুযুগ। ফলে বাসের গমনাগমন সূচিত হয় ধূলির উদ্দামতায়।
ছুটির দিনের দ্বিপ্রহরগুলি মনেপড়ে।
যেহেতু আমাদের ছোট বাড়িটি ছিল একেবারেই বড় রাস্তার ধারে, ফলে একেকটি বাস কিংবা লরী চলিয়া যাইবার পরের ঘ্রাণ, পেট্রল-ডিজেলের, সঙ্গে ধূলির আক্রমন, হাওয়ায়, বাতাসে ঘরের পর্দ্দাগুলির উড়িয়া যাওয়া। একেকটি লরীর যাওয়া একেকটি রাজসিক গমন।
২।
ছুটির গ্রীষ্ম দুপুর গুলি মনেপড়ে।
খাওয়া হইলে বাবা বিছানায় উঠিত বই কিংবা খবর-কাগজ লইয়া। মা’ও, ক্রমে, কাজ সাড়িয়া বিছানা লইত। বাবা চেষ্টা লইত আমরা দুইভাইকেও দিবানিদ্রায় নিযুক্ত করিতে। যে সকল দিনে ঐ আক্রমন হইতে আত্মরক্ষা করিতে সক্ষম হইতাম সেই সকল দিনে কিনারের কোঠায়, মাটীতে মাদুর বিছাইয়া খুলিয়া লইতাম ‘শুকতারা’, ‘আনন্দমেলা’ কিংবা ইস্কুলের কোনো বন্ধুর নিকট হইতে লইয়া আসা কোনো বই, কমিকস্। 'গ্রাফিক নোভেল' অনেক অনেক দূরের, পরের শব্দবন্ধ।
ছুটির এই গ্রীষ্মের দুপুর গুলি যেন অফুরান।
কখনো হাওয়া আসে। হাওয়ায় পর্দ্দা দোলে। লরী যায়। যায় মেটাডোর। পেট্রল-ডিজেলের ধোঁয়ার গন্ধ ভাসে বাতাসে। আমি মাটীতে শুইয়া চাহিয়া দেখি। দেখি উড়ন্ত পর্দ্দার ভিতর দিয়া।
আবার কখনো বাতাস নাই।
গাছের পাতা কাঁপেনা। গুমোট। প্রতিবেশী গোঁসাইদের শাক-শব্জীর বাগান ঘিড়িয়া থাকা সুপারী গাছগুলির ছায়া ঘরময় ঢুকিয়া পরে খোলা জানালা বাহিয়া। কখনো ঝড়িয়া পরে সুপারীর ‘ছই’।
বাড়ির পিছনে নটীখাল। তখনো ‘বাঁধ’ পড়েনাই তাহার গতিতে। অলস ছন্দে সে বহিয়া যায় নদীতে। সেই লঙ্গাই নদীতে। শোনাযায় হাঁসেদের কলরব। খালের ধারে, আমাদের বাড়ির পিছনে , রাজাদা’দের বাড়ির বাঁশঝাড়। ছুরির ফলার মতো বাঁশের পাতাগুলি বাতাসে ভাসিয়া পিছনের দরজা দিয়া ঘরে ঢোকে। সড়্সড়্ শব্দ তুলিয়া ঘুড়িয়া বেড়ায় ঘরময়।
ছায়া ক্রমে আসে গাঢ় হইয়া। কোনোদিন আমি পড়ি ‘হারানো কাকাতুয়া’, কোনোদিন ‘অদৃশ্য জলদস্যু’, কোনোদিন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে ‘অলিভার টুইস্ট’ কোনোদিন হেমেন রায়ের ‘ভগবানের চাবুক’, কোনোদিন ফেলুদা। জোগাড় হইলে 'চটিবই'। 'রঙ্গীন প্রজাপতি', 'জীবন যৌবন' অন্য বইএর আবডালে।
৩।
এমনই এক অফুরান নিদাঘ-দুপুরে একদা বাহিরে বাজিয়া উঠে এক কান্না। এক করুণ আর্ত্তনাদ। আমি বই রাখিয়া বারান্দায় আসি ত্রস্তে। বাড়ির সামনেই বড়রাস্তা। ঐ পারে পাঠশালা। ‘শ্রীভূমি’। তাহার সামনের ছোটো মাঠে দিশাহারা চীৎকার তুলিতেছে একজন ছাগশিশু।
কেন চীৎকার করিতেছে সে? সে তো বাঁধা নয়! আশে পাশেও তেমন ভয়ের কিছুনাই ! সে নয় আহতও! তবে?
কিয়ৎক্ষণ পরে টের পাইলাম হেতুটি। তাহার মাতা নাই নিকটে। তাই সে ভীত। ভিতু। অসহায়। ক্রন্দনে রত।
ঐ কান্নাস্বর মনুষ্যশিশুরই মতন। অবোধ। অঝোর। কোথায় যেন রামপ্রসাদ সেন। পান্নালাল। কালীপূজা। বলা দরকার আমি 'নাস্তিক' তখনই। অর্থাৎ আবাল্য কালাপাহাড়। তথাপি তখনো পান্নালালের, ধনঞ্জয়ের সুরে মন উদাস। এখনো।
কিন্তু কোথায় মাতা ঐ অবুঝ, ভীত শিশুটির? বাঁশের গেইট খুলিয়া রাস্তায় নামি। গ্রীষ্মের ধূধূ দুপুর । পথও নিঝুম। মেটাডরহীন।
কোথায় গেলো মাতাটি? কোনখানে খুঁজিব? কোনদিকে?
কি মনে করিয়া বাম দিকেই আগাইলাম আমি। ইহা আমার 'আবাল্য বামপন্থী' হওয়ার ফ্রয়েডিয়ান নিদর্শন। হয়তো।
বামদিকে, আমাদের বাড়ি ছাড়িয়া রাজাদা’দের বাড়ি। তাহাদের লোহার গেইট। ছাগল ঢোকা সম্ভব নয়। তাহার পরে বাড়ি রামেন্দ্র ভটেদের। উহাদেরো লোহার গেইট।
তবে ? তখনি চোখে পড়িল রাস্তার অপর দিকে, ‘লন্ডনী'দের বিরাট সাম্রাজ্যের পাঁচিলের কিনার ধরিয়া যে গলীটি গিয়াছে তাহাতে। একটি আভাস। গতির।
আগাইয়া যাইতে যাইতেই শুনিলাম আরেক ক্রন্দন ধ্বনি।
কার? সন্তান-বিচ্ছিন্ন মাতাটিরই কি?
বটে। মাতার ডাক শুনিয়া শাবকও ডাকিল কিন্তু সে দৌড় লাগাইল সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। আমি দৌড়াইলাম পথ দেখাইতে। কিন্তু ‘মানুষ নিকটে গেলে প্রাকৃত সারস উড়েযায়’। বিপরীত মুখে আরো দ্রুত ছুটিতে লাগিল শিশুটি।
‘শ্রীভূমি’ পাঠশালার খোলা উঠানে দাঁড়াইয়া ভাবিলাম সামান্য। এইবার ছুটিলাম সেই গলীর দিকে যেখানে মাতাটিও ভূল রাস্তায় খুঁজিয়া, সন্ততিকে না পাইয়া বিলাপ করিতেছে, সমানে । আমাকে দেখিয়া পলাইল মাতাটিও তবে সে যে পথে এইবার ছুটিল ঐ পথেই ছুটিতেছে তাহার শাবকটিও।
আমি থামিলাম।
তারপর দূর হইতে,ধীরপায়্ অনুসরন করিলাম মাতাকে। সামান্য আগাইয়া শাবকটি একবার ফিরিয়া দেখিতেই ‘মাতা’ তাহার দৃষ্টিগোচর হইল।
সে ডাকিল, মাতাও ডাকিল।
সেই ডাকাডাকির ভাষা মনুষ্য ভাষারি মতন ষ্পষ্টতায় ধরাদিল আমার কানে। দেখিলাম হারানো শাবককে ফিরিয়া পাইয়া মা দিতেছে তাহার গা চাটিয়া আর শাবকটিও দেরী না করিয়া মত্ত হইয়াছে মাতৃ স্তন্যপানে।
এই গ্রীষ্মের আগেও আসিয়াছিল আরো বহু গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মছুটি। পরেও আসিল বহু। তারপর জীবন এক সময় হইল যাপন। গ্রীষ্মই রহিল শুধু, ছুটি আর রহিলনা।
তথাপি, অদ্যাপি গ্রীষ্মের অর্থ, আমার মর্মে ঐ দ্বি প্রহর। ঐ ক্রন্দনের ধ্বনি। ঐ মিলন, অন্তিমে, মাতাপুত্রের।
৪।
আরো একটি দুপুরের কথা মনেপড়ে। কি কারণে যে ইস্কুল ছুটি হইয়া গিয়াছিল তাড়াতাড়ি, মনে নাই। ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ি। দুপুর একটা কি দেড়টা হইবে আজ মনেহয়। বাড়িমুখে হাঁটিতেছি ‘চার্চ্চ রোড’ ধরিয়া।
মফস্বলি যাপনের গতানুগতিকতার কিনারে চার্চ্চ’ এই শব্দটি যেন একটি মূর্চ্ছণার মত। শহরের যে দিকে ঐ ‘চার্চ্চ’ ঐ দিকেই ছোটো এক টিলা । টিলার শরীর বাহিয়া চলিয়া গিয়াছে সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বাহিয়া উপরে উঠিলে ‘থানা’। উর্দ্দীপরা পুলিশ। অপর দিকে মফস্বলি ডাকবাংলা। থানার সিঁড়ির নীচেই দুই বিরাট বৃদ্ধ বনস্পতি। দেহ হইতে নামিয়া আসিয়াছে অসংখ্য ঝুড়ি। ঐ খানে রাস্তা দুই ভাগ । একটি সোজা চলিয়া গিয়াছে ‘চার্চ্চ রোড’ ধরিয়া। অন্যটি, একটি ছোট্ট নালার কিনার ঘেঁষিয়া গিয়া মিলিয়াছে বড় রাস্তায় যাহার সমান্তরালে বহিয়া চলিয়াছে, অদ্যাপি, খাল, ‘নটীখাল’। আমাদের ‘ছোটোনদী’। আমাদের মফস্বলি যাপন কাহিনীরই মতো বাঁক নাই, স্রোতও নাই তেমন। নাই নদীতে গিয়া পড়িবার, মিশিবার তেমন আকাঙ্ক্ষাও।
যেখানে ঐ রাস্তাদের ভাগাভাগি সেই খানেই পুকুর। বিরাট। গভীর। ঐ পারে বাঁধানো ঘাট। ঘাটে কোনোদিন কাহাকেও দেখিনাই। দেখিনাই বসিয়া থাকিতে কিংবা কাপড় কাঁচিতে বা স্নানে। পুকুরের সীমানা পারাইয়া আরেকটি রাস্তা। আরেকটি গৃহস্থ পাড়া। ‘থানা রোড’। দিনের সব সময়েই ছায়ায় ঢাকা। নারিকল গাছের ছায়া,সুপারী গাছের ছায়া।
বাতাসের গমনাগমনে তাহাদের নড়াচড়া। শিথিল। মন্থর।
‘থানা রোড’ বামদিকে রাখিয়া সোজা চলিলেই ‘চার্চ্চ রোড’। চার্চ্চের সীমানা যেখানে শুরু সেইখানের বিপরীতে,রাস্তার পরপারে ধূধূ মাঠ। অনেক আগাইয়া গিয়া দুই-তিনটি বাড়ি। তাহাদের একটি আবার পরিত্যক্ত। বহুদিনের।
চার্চ্চের সীমানার ইঁটের দেওয়াল ঘিড়িয়া বাঁশঝাড়। ফলে ভিতরের কিছুই প্রায় দেখা যায়না চোখে। অতএব কৌতুহল যায় আরো বাড়িয়া। বাঁশগাছের পাতাগুলি বাতাসে দুলিয়া ওঠে। শব্দ হয় শির্শির্। সেই পাতাদের নিশান পারাইয়া চোখেপড়ে গীর্জার চূড়া। মফস্বলি হইলেও জাতে সে যেহেতু ‘গথিক’ সুতরাং কল্পণাকে আস্কারা দিতে সে বাধ্য। ঐ গীর্জ্জার ঐ চূড়াটির দিকে চাহিয়া মনে হইত যেন ‘কাউন্ট অফ মন্টিক্রিস্ট’র সেই ‘ফাদার ফারিয়া’ ছিলেন ঐখানেরি বাসিন্দা। যেন ‘হান্চব্যাক্ অফ নোটরদাম’এর সেই ‘এসমারেলডা’ও ছিল এইখানে । থাকিবে এইখানে।
যে বাতাসে দুলিয়া উঠিত ঐ বাঁশঝাড়্গুলি সেই বাতাসকে মনে হইত মহাসাগরের পাড়ের বাতাস। ‘টেল্স্ অফ সেক্সপীয়ার’ মনে পড়িত। ‘মিরান্দা’...
গীর্জ্জার ফটক প্রাচীরের মাঝামাঝি । দেখা যায়, এইখানেই শুধু, স্পষ্ট, সেই গথিক গীর্জ্জা-পুরুষকে। দেখা যাইত, মাঝে মধ্যে,স্কার্ট পড়িয়া ঘুড়িয়া বেড়ানো দুই একটি ললনাকে,যাহারা,আমরা জানিতাম, নিকটবর্তী রাজ্য অর্থাৎ,নাগালেন্ড-মিজোরাম-মেঘালয়ের। তথাপি ত্বকের সামান্য উজ্জ্বলতা এবং গীর্জ্জা-পুরুষের সম্মানে তাহাদিগকেই মনে মনে সাজাইয়া লইতাম ‘এসমারেলডা’ বা ‘মিরান্দা’। ক্রমে, নীল নিজস্ব নির্জনে, ‘চটিবই’ এর নায়িকাও।
ফটকের অপর পার্শ্বেও প্রাচীর। সেই প্রাচীরও ঘেড়া বাঁশঝাড়ের সাড়িতে। তাহার পরে একটি গলী। তাহার পর বাড়ি ‘বাপ্পা ভট’দের । ঐ খানেই সেই বাড়িটিও যে বাড়ির যুবতী মেয়েগুলি তৎকালীন মফস্বলের ‘হেমা’ ‘শ্রীদেবী’। ঐ রাস্তাটিকে মর্মে রহস্যময় করিতে তাহাদেরো অবশ্যই ছিল অবদান । আহা, আজ কি দেখিব তাহাদের অন্ততঃ একজনকেও? নিত্য দিনের আসা যাওয়ার ভাবনা। কিন্তু তাহারা তো দূরস্থান, ঐ পাড়ায়, হায়, সম্ভবতঃ কোনো জাগ্রত মানুষই ছিলনা কদাপি। বাদলার দুপুরে কখনো ঐ পথে আসিলে মনে হইত যেন এক নিদারুন ঘুমপুরী।
ঐ পথে যাতায়াত করিলে ইস্কুলে যাইতে আসিতে একটু বেশী হাঁটাপড়ে বলিয়া বিশেষ কেহই উহাকে বাছিয়া নিতোনা নৈমিত্তিক পথ হিসাবে। ফলে আমারি একচ্ছত্র সাম্রাজ্য ছিল ঐ পথ।
সেই দিনও, সেই আগে আগে ইস্কুল ছুটি হওয়ার দিনও, আসিতেছিলাম ঐ পথেই।
ঐ দিনটি, তখনো কি জানি, যে আমার নিজস্ব দেওয়াল পঞ্জিকায়, হইবে একটি রক্তাক্ষর দিন? অকারনেই রক্তাক্ষরে ছোপানো?
আসিতেছিলাম ঐ পথেই। একলা। যথারীতি। থানা রোড ছাড়াইয়া গীর্জ্জার কোনায় আসিবামাত্র ঘটিল সেই অদ্ভুত ঘটনা।
আমি যেন সম্বিৎ হারাইলাম। বাঁশ ঝাড়্গুলি যেন সত্যই দুলিয়া উঠিল সামুদ্রিক বাতাসে। এই মফস্বল, এই একটানা একঘেয়ে সুর, যাপনের, ইস্কুলঘর – সমস্তই যেন পাখা মেলিয়া দিল রবীন্দ্র কবিতার সেই পাখা মেলিয়া দেওয়া পর্ব্বতশ্রেণীর মতো...
আমি দাঁড়াইয়া রহিলাম। দাঁড়াইয়াই রহিলাম। যেন এতাবৎ দাঁড়াইয়াই আছি ঐখানে যেখানে বাঁশগাছের পাতাগুলি আন্দোলিত হইতেছে সামুদ্রিক বাতাসে আর তাহাদের ফাঁক-ফোকড় দিয়া দেখা যাইতেছে সেই গীর্জ্জার চূড়া, সেই গীর্জ্জা-পুরুষ, যিনি আগলাইয়া রাখিয়াছেন, এই মফস্বলেই,‘এসমারেলডা’ ও ‘মিরান্দা’দের। তাঁহার পিছনে আকাশ,সমুদ্রের আকাশহেন নীল।কয়েক খন্ড মন্থর মেঘ...আর আমি । ...আর থানারোডের কোনো গৃহস্থ বাড়ির রেডিও বা গীর্জ্জা-পুরুষের কোনো মফস্বলি,‘এসমারেলডা’ বা ‘মিরান্দা’র বেটারী চালিত ট্রানজিস্টরে গান...
গান খানি আগেও নিশ্চয় শুনিয়াছি, পরেও শুনিয়াছি অসংখ্যবার। তবু ঐ দিনের মতো করিয়া আর শুনিনাই কোনোদিন। বাজেনাই ঐভাবে, গানটিও আর কোনোদিন। বাজিবেনা। ...পরে শুধু শুনিয়াছি ঐ দিনটির ‘শুনা’টিকে স্মরণ করিতে। ফিরিয়া যাইতে ঐ দিনে, ঐ মুহুর্তে।
জানিয়াছি ঐ দিন আর নাই । তবু …
ঐ গানখানি, ঐ ‘ওগো কাজল নয়না হরিণী, তুমি দাও না ও দুটি আঁখি,ওগো গোলা্ পাঁপড়ি মেলোনা, তার অধরে তোমাকে রাখি.’ আমার চোখে , আমার মনে আনেনা কোনো ‘হরিণী’র ছবি,স্মৃতি। আমি হারাই, হারাইতে চাই সেই অসময়ে ইস্কুল ছুটির দুপুরে,সেই সামুদ্রিক বাতাসে হাহাকার তোলা বাঁশ পাতার মর্মরে, ‘চার্চ্চ রোড’ নামক সেই রহস্যময় রাস্তাটির অতলে...
০৭/০৬/২০১০ -- ১২/০৬/২০১০