প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Tuesday, October 30, 2012

সুনীল’কে নিয়ে ‘সামান্য’



সুনীল’কে নিয়ে ‘সামান্য’
সম্ভবতঃ সুনীলের “কবিতার জন্ম ও অন্যান্য” নামের গদ্য গ্রন্থে সুনীল শোনালেন এক কাহন, জানালেন, যে দেশে তখন কি একটা ধারাবাহিক উপন্যাস তাঁর প্রকাশিত হচ্ছে আর তিনি চলেগেছেন বাংলাদেশে বেড়াতে। সেখানে গিয়ে বিলকুল ভুলে গেলেন যে “দেশ”এ তাঁর একটা কিস্তি লেখা পাঠানোর কথা। কে যেন তাঁকে মনে করিয়ে দিলো কথাটা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গৃহকর্তার কাছ থেকে কাগজ কলম নিয়ে চলে গেলেন চিলে কোঠায়। কিন্তু কি’যে ঠিক লিখছিলেন, ঠিক মনে নেই (?)। ফলে ঐ চিলে কোঠায় বসে বানিয়ে ফেল্লেন সম্পূর্ণ নতুন একটি চরিত্র! আহা! ষোলো বছর বয়সে তাঁর এই “কীর্তি” যথারীতি “হিরোইক” ছায়া ফেলেছিল আমার মনে। কিন্তু, আজ টের পাই ঐভাবে আর যাই হোক, ‘শিল্প’ হয়না। ঐ হেতুই “পূর্ব পশ্চিম”,অবশেষে, বিশ্বনাথ রায়, পিকলু, হারীত মন্ডল, অতীন-অলি ( আমার কৈশোরের হিরো-হিরোইন) ‘র মতো চরিত্র সত্ত্বেও কোনো পরিণতি পায়না। চরিত্র গুলিও যায় ভেঙ্গে চুরে। সমস্ত লেখাটায় যে অমনোযোগের ছাপ তা টের পাওয়া যায় অতি সহজে। তুলনায় কম হলেও ‘সেই সময়’ এ’ও ঐ অমনোযোগ স্পষ্ট।
হ্যাঁ, অর্থনৈতিক অনটনের জন্য দস্তয়ভস্কিকেও অতি দ্রুত লিখে যেতে হতো কিন্তু যেহেতু দস্তয়ভস্কির মর্মে তাঁর ভাবনাপথের রেখাটি, ক্রম পরিবর্তিন সত্ত্বেও, ছিল পরিস্কার, যেহেতু দস্তয়ভস্কির কাছে সাহিত্য ছিল “সাধনা” , ফলে দ্রুত লিখে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর রচনায় অমনোযোগ ছাড়া ফেলেনা। সুনীলের নানা লেখার আরম্ভেই নানান সুন্দর ‘প্লট’ এর রেখা দেখাযায়। কিন্তু পরণতি? সেটা সুনীলের নিজের মতোই। ‘না ঘরকা না ঘাট্‌কা’। যেমন ‘বিজনের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য’ গল্পের আরম্ভে আমরা দেখি ‘বিজন’ নামের একটি ছেলেকে তারি বয়সী আরেক যুবক ফুটপাথে ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে অথচ ফিরেও তাকাচ্ছেনা। ঐ যুবকের ঔদ্ধত্য বিজনকে পীড়া দেয় ফলে ঠিক কিভাবে ঐ রকম যাপন-বোধের জন্ম হয় তা জানা হয়ে ওঠে বিজনের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য। অনবদ্য। এযেন জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ এর অন্তর্গত অন্বেষা, এযেন ‘অস্তিত্ব কি’ এই প্রশ্নে কেঁপে ওঠা কামু’র কোনো নায়ক ... হুঁ, কিন্তু তারপর? তারপরে আমরা জীবন, যাপন, অস্তিত্ব কোনো বিষ্পয়েই কিছুই জানতে পারিনা আমরা। আমরা, ক্রমে ‘বিজন’ এর কাছ থেকে যা জানতে পারি তা ঐ ‘ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়া’ যুবকের বোনের স্তনের মাপ, ইত্যাদি ...
‘রক্ত’ নামের ছোটো উপন্যাসটিও, যেখানে, ভারতীয় বাঙ্গালী ছেলে বিলিতি মেয়ের সঙ্গে প্রেমে নিবিড় হওয়ার পরে দুজনেই জানতে পারে যে, ঐ মেয়েরি ঠাকুর্দ্দা না’কি বাবা খুন হয়েছিলেন ছেলেটির বাবা বা ঠাকুর্দ্দদার দ্বারা অগ্নিযুগে, তখন ... কিন্তু না এখানেও সুনীল, যথারীতি শেষ রাখতে পারেননা ...
পারেননা কেননা ঐ’যে ‘হিরোইক অমনোযোগিতা’র গল্প, সুনীলের, আমি আগে বলেছি, সেইহেতু। এই অমনোযোগও আসলে একটা সময়ের ‘ফ্যাশান’ যে ফ্যাশানের ছানা ‘কৃত্তিবাস’। ‘কল্লোল’ বা ‘কবিতা’ও কালের ফ্যাশানের সন্তান। কিন্তু  ‘কল্লোল’ বা ‘কবিতা’র ‘ফ্যাশান’এ অমনোযোগের স্থান ছিলনা।
এবারে আমার পছন্দের “সুনীল”
আমাদের মনোরমা – গল্প
শাহজাহান ও তার নিজস্ব বাহিনী - গল্প
গরমভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প - গল্প
রক্ত – ছোটো উপন্যাস
বিজনের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য - গল্প
বসন্ত দিনের ডাক -ছোটো উপন্যাস
কালো রাস্তা সাদা বাড়ি -ছোটো উপন্যাস
অর্জুন - উপন্যাস
একা এবং কয়েকজন – গাব্‌দা উপন্যাস
সবুজ দ্বীপের রাজা - উপন্যাস
পাহাড় চূড়ায় আতংক - উপন্যাস
জলদস্যু - উপন্যাস
আকাশ দস্যু - উপন্যাস
আঁধার রাতের আগন্তুক/ অতিথি (?, বিশু ঠাকুরের ২য় উপন্যাস)
হলদে বাড়ির রহস্য - উপন্যাস

ঘুম ঘর