সম্রাটের প্রতি কবিতাগুচ্ছ
১. হাড়ের বাঁশরিখানি
অভিযান ব্যর্থ হলে ওষধি সৈকত জুড়ে কেবলি
পালক –
বাঁশি নেই, বাঁশরিয়া নেই,
স্মৃতি বলতে ফিরে আসা ঢেউ ও ঝিনুকে
ফিরে যাওয়া সম্রাটের শান্ত পদছাপ –
হে সম্রাট, তোমার জাহাজ
ফুটো হলে ধাক্কা লেগে বরফ পাহাড়ে
জীবন বাঁচাতে তুমি স্খলিত সাঁতারে
কবে নিজে ভেসে আসবে এই আঘাটায়?
এই শেষ স্বপ্ন নিয়ে
হাড়ের বাঁশরিখানি
এতাবৎ দেহে ধরে আছি –
২. একা যাত্রী, খালাসি, কাপ্তেন –
যে জাহাজ কোনোদিনই ভিড়বেনা কোনোও বন্দরে
আমি তার একা যাত্রী, খালাসি, কাপ্তেন –
খাদ্য, পানীয় বলতে পিপে ভর্তি নোনাজল –
তিমি আর হাঙ্গরের হাড়,
মদ বলতে বালিকার খোয়া যাওয়া প্রিয়
নাকছাবি,
মানচিত্রে ধূ ধূ মেঘ, কম্পাসের কাঁটা
বর্শাফলা’র মতো মৃত্যুমুখী, আর
চক্রবালে জলকন্যা, কাম, হাহাকার –
ফলতঃ জাহাজে আমি অর্বাচীন নোয়াহ্’র মতো
গড়িনি চিড়িয়াখানা, জাদুঘর অথবা সমিতি,
সমূহ বন্দরগুলি নোয়াহ্’র নামে লিখে দিয়ে
আমি
আজ একা যাত্রী, খালাসি, কাপ্তেন –
৩. নিরক্ষর উৎসবের দিন ...
হে সম্রাট, যেদিন স্বপ্নে আমি তোমার সমাধি
দেখেছি হিরণ্যগর্ভ জলের অতলে
সেই দিনই রত্নাকর থেকে প্রথম কবিতা লিখে
বাল্মীকির নামে আমি নিয়োজিত মহিমা কীর্তনে
হে সম্রাট, তোমার লেহ্য পেয় প্রতিটি নটীর
...
তারা সব ক্ষয়ে গেছে নোনাজলে তবু
লাইটহাউসহেন তুমি এতাবৎ হিংস্র আর স্থির
অনেক জন্ম ধরে ভূত-প্রেত-দেবতা ও যক্ষ রূপ
ধরে
আমার অক্ষরবৃত্তে কেন্দ্রহেন আসমুদ্র
প্রতিষ্ঠা চেয়েছো –
তোমার কৃপার থেকে রক্ষা পেতে আমি
আমার ধ্বংসের দিকে যেতে যেতে থেমে
এখন স্বপ্নে দেখছি সাজাচ্ছ নিজের হাতে
গানে গল্পে হাড়ে গড়া আমার কফিন –
আমার অক্ষরগুলি পূর্বাপর অধিকারে নিয়ে
দিতে কী সক্ষম তুমি সত্তার পরাহত
সেইসব নিরক্ষর উৎসবের দিন? ...