প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, August 3, 2013

‘ভাঙ্গন’এর ‘শব্দ’




 ‘ভাঙ্গন’এর ‘শব্দ’
[জিতেশদা’কে ] 
মনে করা যাক আর কোনো কথা নেই, সুর নেই, আলাপ বিস্তার অন্তরা নেই। আরোহ  অবরোহ নেই। শুধু আছে অন্তহীন অন্ধকার। সামনে। পেছনে। উপরে আছে তারাদের জ্বলানেভা। আর মেঘ। আর দু’টি মাত্র পংক্তিঃ “আমার ভাঙ্গলো যা তা ধন্য হলো চরণপাতে” ... “ভাঙ্গলো যা তা পড়লো ধূলায় যাক না চূলায় গো” ... মিল বলতে ঐ ভাঙ্গনই শুধু। আর কিছু নয়। এক ‘ভাঙ্গন’ শব্দের টানে আরেক ‘ভাঙ্গন’ শব্দের দিকে বয়ে যাওয়া ...
       আকাশে অন্ধকার। আকাশে তারা। আকাশে মেঘ। যুগ যুগান্তের তারা। যুগ যুগান্তের মেঘ। এই তারা, এই মেঘ আসে না’কি যায়? গড়ে না’কি ভাঙ্গে? এই মেঘ, এই তারার আড়ালে আরো কেউ কি আসে? যায় কি আরো কেউ? কে আসে? আসে কোথা থেকে? যায়ই বা কোথায়? এই আসা যাওয়ার পথটি কিসে গড়া? নির্মাণে না’কি ভাঙ্গনে? ঐ’যে মেঘবাতাসের উদ্দামতায় ছড়িয়ে গেলো রাশি রাশি রাতফুল তারা কি ব্রাত্য হলো না’কি ধন্য? তাদের ফুটেওঠা কি পূর্ণ হলো না’কি নিঃশেষ? ...জানিনা। শুধু মনেহয় যদি হতাম ঐ রাতফুল, ঐ রাতগাছ তাহলে ঐ যুগান্তের বাতাসের হাতে আপনার পুষ্পগুলিকে ঝড়িয়ে দিয়ে গেয়ে উঠতাম  “আমার ভাঙ্গলো যা তা ধন্য হলো চরণপাতে” ... স্বপ্নে জেগে উঠতো আরো রাত্রিগাছ, আরো রাতফুল ... আমার এই এক গাছ জন্ম ছড়িয়ে যেতো সংখ্যাতীত গাছজন্মে, ফুলজন্মে ... ধন্য হতো আমার ভাঙ্গা ডাল, ঝরাপাতা, উড়ে পরা ফুল ...
            আকাশে অন্ধকার। আকাশে তারা। আকাশে মেঘ। যুগ যুগান্তের তারা। যুগ যুগান্তের মেঘ। এই তারা, এই মেঘ আসে না’কি যায়? গড়ে না’কি ভাঙ্গে? আদিহীন অন্তহীন ঐ মেঘবাতাসের টানে ভেসে যাওয়া পুষ্প আমি। ঐ রইলো আমার অতীতের ঘর, আমার ফেলে আসা বাসা, রইলো আমার মায়া, আমার পিছুটান। মেঘবাতাসের টানে এই সূচিত হলো আমার যাওয়া। আমার অন্তর্গত পরাগে পরাগে যে বৃক্ষের, যে অনাগত পুষ্পের আবাহন তারি দিকে ভেসে চল্লাম আমি। তোমায় প্রণাম, হে রাতবাতাস, হে মেঘবাতাস, আমাকে তোমার ঐ অনন্ত যাত্রায় ডেকে নেওয়ার মূল্যে তুমি যা যা ভেঙ্গেছো সেসবই আমার পিছুটান, আমাত ভ্রম, আমার মায়া ... তোমার সঙ্গে উড়তে উড়তে আমি গাইঃ “ভাঙ্গলো যা তা পড়লো ধূলায় যাক না চূলায় গো” ...
    ঐ দুই গাওয়ায়, ঐ দুই পংক্তিতে রচিত হয় সেতু ঐ দুই ‘ভাঙ্গন’ শব্দের মধ্যে। মুছেযায় আর সব কথা , সুর , আলাপ, বিস্তার, অন্তরা,ঝালা,আরোহ ,অবরোহ ... শুধু মনেপড়ে কে কবে যেন নদীকে প্রশ্ন করেছিল “কোথা হইতে আসিযাছ?’ নদী বলেছিলঃ ‘মহাদেবের জটা হইতে” ... যে মহাদেব রক্ষক ও সংহারক, যে মহাদেব সৃষ্টি ও স্থিতিরি শুধু নন, প্রলয়েরো দেবতা, তাঁরি জটা থেকে আরম্ভ যে যাত্রার সেই যাত্রার পথে পথে পদে পদে ফিরে ফিরে আসে ঐ ‘ভাঙ্গন’ শব্দ আর তারি টানে ফিরে ফিরে আসে ঐ পংক্তিগুলিঃ  “আমার ভাঙ্গলো যা তা ধন্য হলো চরণপাতে” ... “ভাঙ্গলো যা তা পড়লো ধূলায় যাক না চূলায় গো”

ঘুম ঘর