আমার “গীতবিতান”
১। ‘বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন’ ...
ক।
গভীর রাত। সারাদিন যে মরুবালু ছিল আগুন হয়ে এখন তা’ই যেন তুষার। এরই মধ্যে পা
টিপে টিপে বার হয়ে এলো সে। এই মরুশহরে আজই এসেছে তারা। শয্যায় বণিক স্বামী পথশ্রমে
আর দিনের বিকিকিনিতে ক্লান্ত, অধুনা ঘুমন্ত। শয্যা থেকে নেমে অতি সন্তর্পনে দরজা
খুলে সে নামলো পথে। কোথায় যাবে সে এই অচিন দেশে? তার প্রতিটি ভঙ্গিমায় স্পষ্ট
অভিসার বাসনা। কিন্তু কার সাথে, কোন্ খানে তার এই অভিসার? রাত্রির সূচীভেদ্যতার
ভিতর দিয়ে ভীতা হরিণীর মতো পা টিপে পা টিপে সে এসে যেখানে হাজির হলো সেই স্থানও
জনমানবহীন। শুধু এক একলা এক ভগ্ন দুর্গ সেখানে। সে দুর্গে প্রবেশ করে। সে সিঁড়ি
বেয়ে বেয়ে উঠে যায় মীনারে। তবে কী ঐ মীনারের গর্ভে রয়েছে কেউ তার প্রতীক্ষায়? –
না। সেখানেও কেউ নেই। সেখানে, উচ্চতায়, এক অন্ধকার বারান্দা আর সামনে দিগন্ত।
সামনে শূন্যতা। ধূ ধূ তারা। সে এসে দাঁড়ায় ঐ বারান্দায় কার্নিশে হাত রেখে। -
এইখানেই বিকালবেলা সে এসেছিল তার স্বামীর সঙ্গে। এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে যখন ঐ ধূ ধূ
আকাশ ক্রমে বাসা বাঁধতে যাচ্ছিল তার মর্মে তখনি স্বামীর শীত লাগছিল। নেমে, ফিরে
যেতে হয়েছিল তাদের। - তবে কী শুধু ঐ হা হা শূন্যতার টানেই সে আবার ফিরে এলো
এইখানে? এই নিশুত রাতে? অভিসারিকার মতো? – “Not a breath, not a sound - except at
intervals the muffled crackling of stones that the cold was reducing to sand -
disturbed the solitude and silence surrounding Janine. After a moment, however,
it seemed to her that the sky above her was moving in a sort of slow gyration.
In the vast reaches of the dry, cold night, thousands of stars were constantly
appearing, and their sparkling icicles, loosened at once, began to slip
gradually toward the horizon. Janine could not tear herself away from
contemplating those drifting flares. She was turning with them, and the
apparently stationary progress little by little identified her with the core of
her being, where cold and desire were now vying with each other. Before her the
stars were falling one by one and being snuffed out among the stones of the
desert, and each time Janine opened a little more to the night. Breathing
deeply, she forgot the cold, the dead weight of others, the craziness or
stuffiness of life, the long anguish of living and dying. After so many years of mad,
aimless fleeing from fear, she had come to a stop at last. At the same time,
she seemed to recover her roots and the sap again rose in her body, which had
ceased trembling. Her whole belly pressed against the parapet as she strained
toward the moving sky; she was merely waiting for her fluttering heart to calm
down and establish silence within her. The last stars of the constellations
dropped their clusters a little lower on the desert horizon and became still.
Then, with unbearable gentleness, the water of night began to fill Janine,
drowned the cold, rose gradually from the hidden core of her being and
overflowed in wave after wave, rising up even to her mouth full of moans. The
next moment, the whole sky stretched out over her, fallen on her back to the
cold earth.”
এই যে খুলে যাওয়া, রাত্রির কাছে, অন্ধকারের
কাছে, দিগন্তের অন্যপারে জ্বলে থাকা জীবিত আর মৃত নক্ষত্ররাজির কাছে তা’কি? প্রেম?
পূজা? পলায়ন? আত্মরতি? “The next
moment, the whole sky stretched out over her, fallen on her back to the cold
earth” এই বাক্যটি কি তার আত্মরতিগত যৌন আনন্দের
ইঙ্গিতবাহী? জানিনা। কোনো সূত্র দেননা লেখক Albert Camus ও। তাঁর THE ADULTEROUS WOMAN গল্প শেষহয় এইভাবেঃ ‘When Janine returned to the room, with
the same precautions, Marcel was not awake. But he whimpered as she got back in
bed and a few seconds later sat up suddenly. He spoke and she didn't understand
what he was saying. He got up, turned on the light, which blinded her. He
staggered toward the washbasin and drank a long draught from the bottle of
mineral water. He was about to slip between the sheets when, one knee on the
bed, he looked at her without understanding. She was weeping copiously, unable
to restrain herself. "It's nothing, dear," she said, "its
nothing."
যদি এই ছবিটিকে চলচ্চিত্রায়িত করতাম তবে ঐ আকাশের কাছে তার
আত্মনিবেদনের দৃশ্যে কোন গান দিতাম আবহে? – গল্পটি প্রথম পাঠের সময়, মানে প্রায়
১৮/১৯ বছর আগেও যে গানটি জেগেছিল মনে, তা’ই জাগে আজো, জাগলো আজোঃ বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার,
কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার॥
নয়নে ঘুম নিল কেড়ে, উঠে বসি শয়ন ছেড়ে–
মেলে আঁখি চেয়ে থাকি, পাই নে দেখা তার॥
গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া প্রাণ উঠিল পূরে,
জানি নে কোন্ বিপুল বাণী বাজে ব্যাকুল সুরে।
কোন্ বেদনায় বুঝি না রে হৃদয় ভরা অশ্রুভারে,
পরিয়ে দিতে চাই কাহারে আপন কণ্ঠহার॥
কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার॥
নয়নে ঘুম নিল কেড়ে, উঠে বসি শয়ন ছেড়ে–
মেলে আঁখি চেয়ে থাকি, পাই নে দেখা তার॥
গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া প্রাণ উঠিল পূরে,
জানি নে কোন্ বিপুল বাণী বাজে ব্যাকুল সুরে।
কোন্ বেদনায় বুঝি না রে হৃদয় ভরা অশ্রুভারে,
পরিয়ে দিতে চাই কাহারে আপন কণ্ঠহার॥
খ।
মনেপড়ে আরেক কবিকে -যিনি বিশ্ব সাহিত্যের
ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত মহান ঔপন্যাসিক হিসেবেই খ্যাত ... নিশুতি নিশীথিনীর মর্মে
তিনিও শুনেছিলেন সুর, তবে কি সেই বেহাগেই বেজেছিলো তাঁরও মর্ম যে বেহাগে বেজেছে
‘বিশ্ব যখন নিদ্রামগন’ গানের সুর? সম্ভবতঃ না। তিনি তাঁর ঐ পর্বের সমস্ত কবিতাকে
যে দুই মলাটে এনে ফেলেছেন তার নাম তিনি দিয়েছেন ‘Chamber Music’ যার
চরিত্র ভারতীয় রাগ রাগিণীর তুলনায় সর্বৈব ভিন্ন। তবু তাঁর ঐ গ্রন্থের এই কবিতাটি
আমার মর্মে বাজায় বেহাগ, ফিরিয়ে আনে রবীন্দ্রনাথের গানটি, কামু’র সেই অভিসারিকা চরিত্রটিঃ
“At that hour when all things have repose,
O lonely
watcher of the skies,
Do you hear
the night wind and the sighs
Of harps
playing unto Love to unclose
The pale gates
of sunrise?
When all
things repose, do you alone
Awake to hear
the sweet harps play
To Love before
him on his way,
And the night
wind answering in antiphon
Till night is
overgone?
Play on,
invisible harps, unto Love,
Whose way in
heaven is aglow
At that hour
when soft lights come and go,
Soft sweet
music in the air above
And in the
earth below.”