প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, August 16, 2014

মঁসিয়ে ম্যাগ্রের সাথে …






মঁসিয়ে ম্যাগ্রের সাথে  
১।
মঁসিয়ে ম্যাগ্রের সাথে দেখা হয়েযায়।
প্যারীসের রাজপথে নয় –
মফস্বলে।
ঝাপসা হওয়া সরাইখানায়।
শহরের সবচেয়ে দুঃখী লোকটিকে
চিনে নিয়ে
শেষরাতে অচেনা লোকালে
অনুসরনের ছলে
মঁসিয়ে ম্যাগ্রের সাথে
পৌঁছেযাই অতর্কিতে অনামা স্টেশনে।
আধোচেনা মুখগুলি বিড়িটেনে আপনার মনে
চলেগেলে নিজ নিজ নিয়তির টানে
মঁসিয়ে ম্যাগ্রেকে বলি
মনে মনে করা যতো রেপ্‌, খুন, চুরির কাহিনী –
কোনোদিন বৃষ্টি নামে,
কোনোদিন ছুটে আসে দুঃসাহসী তাতার বাতাস-
মঁসিয়ে ম্যাগ্রের ঠোঁট কেঁপেওঠে মৃদুঃ
‘মানুষের কাছে তবু – আমার বিশ্বাস …”
২।
মাদাম ম্যাগ্রের সাথে মাঝেমাঝে কাটে রাত –
-গল্প করে – জানালার পাশে।
মাঝে মাঝে উঠেগিয়ে তিনি
এনেদেন কফি, স্যান্ডুইচ্…
ষাট্‌ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলে্যায় ছোটো বারান্দায়।
দূরের ট্রেনের বাঁশি লক্ষ্যকরে চুপে
দু’একটি রাতের পাখি দেখি উড়েযায় …

তখনি মঁসিয়ে ম্যাগ্রে
শহরের সবচেয়ে দুঃখী লোকটিকে
চিনে নিয়ে অচেনা লোকালে
অনুসরনের ছলে
পারহয়ে চলেযান
ঘুমেডোবা ইস্টিশান, ঘুমন্ত বাজার কিংবা
জনশূন্য কাটাখাল ব্রীজ
আবছা চাঁদ জেগেথাকে তখনো আকাশে
রাত্রি চিরে উড়েযায় দূরে
শ্লথগামী ইঞ্জিনের শিস্‌...

৩।
মফস্বলে বাড়ে রাত।
দোতলার ছোট্ট কোঠাতে
মাদাম ম্যাগ্রের সাথে
মুখোমুখি বসে আমি কফি খেতে খেতে
দেখি তাঁর ক্লান্তিহীন দশটি আঙ্গুল
যেন কবিতার মতো
বুনেযায় হাফ্‌ সোয়েটার।
মেঝেতে কুন্ডলীকৃত
ভুটিয়ার কাছে কেনা
ঘননীল উল্‌...

অজানা স্টেশনে ম্যাগ্রে
নেমেযান লোকটির পেছনে, নীরবে।
তিনি যে পুলিশ সেটা
ইতোমধ্যে লোকটিও জানে –
তবুও সে কেন যেন পালিয়ে না গিয়ে
অকস্মাৎ থেমেযায় –
নিঝুম দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধকারে একা –
রাত্রিডানা ঢেকেদেয় চুপে
মঁসিয়ে ম্যাগ্রের চোখে
নেমে আসা করুণার রেখা ...

মাদাম ম্যাগ্রের সাথে মুখোমুখি খেতেবসি আমি।
রান্নাঘরের তাকে বোতলে সাজানো তাঁর
নিজহাতে বানানো আচার –
যেনবা মায়ের স্বর ভেসেআসে দূরগ্রাম থেকেঃ
“আরো একটু ডাল দেবো?
ভাতনেবে আর?” ...

৪।
এখন হেমন্তমাঠে
পাশাপাশি হেঁটেযান
মঁসিয়ে ম্যাগ্রে আর
শহরের সবচেয়ে নিদারুন দুঃখী মানুষ।
গত তেরোদিন ধরে ম্যাগ্রের হাত থেকে পালাতে পালাতে
গত তেরোদিন ধরে ম্যাগ্রে তার গতিবিধি বুঝে নিতে নিতে
ক্রমে ক্রমে তারা যেন এ মুহুর্তে পরস্পর পরম বান্ধব।
দুজনেরি মনেপড়ে এ মুহুর্তে মর্গে শায়িত
মধ্যবয়স্কা এক মহিলার শব ...
“পালাতে পালাতে আমি ক্লান্ত হয়েগেছি স্যার –
ঠিকই ধরেছেন আপনি, আমিই আসলে খুনী
যদিও হনন-ইচ্ছা ছিলনা আমার ...”
সহসা ম্যাগ্রের হাত নামে তার নুয়েআসা কাঁধে।
লোকটি ক্রন্দন হয়ে ঝরেযায় আর আকাশে তাকান ম্যাগ্রেঃ
“ঐ’ত পুলস্থ-ক্রতু, ঐ ধ্রুবতারা –
তারাও কি জানে, হায়,
এসব গল্পের জন্ম কোন্‌ গ্রহে, কার ইশারাতে?” ...

৫।
এই দৃশ্যে আমি নেই। এই দৃশ্যে মঁসিয়ে ও মাদাম ম্যাগ্রে
চলেছেন বাক্যহীন পাশাপাশি হেঁটে।
খুব বেশী দূরে নয়, আজ এই মেঘলা বিকালে
দুজনে যাবেন আজ সদ্য রিলিজ্‌ হওয়া
জম্পেশ হিন্দি সিনেমাতে।
লাস্ট বেল্‌ বেজেগেলে অন্ধকারে ঢাকে ছবিঘর।
মাদাম ম্যাগ্রের হাত নামে তাঁর হাতে।
ঐ হাত মুঠোকরে মনেহয় তাঁর
“এসব গল্পের জন্ম কোন্‌ গ্রহে, কার ইশারাতে?” ...

ঘুম ঘর