প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Tuesday, December 23, 2014

এসো প্ল্যানচেটে বসি






এসো প্ল্যানচেটে বসি
এসো তবে প্ল্যানচেটে বসি।
এই রক্তহীন যাপনের শিরায় শিরায় যে বরফ প্রেতের স্পর্শ কি তার চেয়েও শীতল? ভঙ্গুর?
এই  সকল চরিত্রপাঠ গ্রন্থের পাতায় পাতায় যেসব অক্ষর প্রেতের হস্তলিপি কি তার চেয়েও বেশী প্রতারক?  
জানিনা।
জানতে চাই।
এসো তবে প্ল্যানচেটে বসি।

শেষরাতের বাতাস এখন ভারি। তার তন্তুতে তন্তুতে এখন থিতু হচ্ছে সমস্ত দিনের মল,মূত্র,ঘাম,বীর্য,মৃতভ্রূণ ও সন্তদের বানী। অভিজাত রাস্তাগুলির শরীরে সোডিয়াম আলোর জিহ্বা – ফিরিঙ্গি গণিকাদের যোনি ও ঊরুর মতন কামানো। শীতল। মসৃন। লাশহীন মুন্ডগুলি এখন খুচড়ো পয়সা বেচে কিনে নিচ্ছে হাতফেরতা নোট। হিডেন ক্যামেরায় তোলা নেহেরু ও এডুইনার সংগমের নীল ছায়াছবি ব্যর্থ হচ্ছে শিথিল লিঙ্গকে চাগাড় দিতে। বাপ ঠাকুর্দার ভিটে বেচে এসেগেছে পাস্‌পোর্ট, ভিসা, গ্রীনকার্ড। পাঁচতারায় সংস্কৃতির আসর বসেছে। এই যখন আবহ তখন আমাদের আর কি’ইবা করনীয় থাকতে পারে?
এসো প্ল্যানচেটে বসি।

যে যাপনের আগাপাশতলা নিছকই অন্ধকার তার মাঝখানে এই তেপায়াটি রাখা হোক। কুষ্ঠরোগীর পুরুষাঙ্গের মতন মোমবাতি রাখা হোক তার মাঝখানে। ভয় নেই। এই সূচ্যগ্র আলোয় আমাদের এ অন্ধকার যাপনের একটি বিন্দুও হবেনা আলোকিত। একে দেখতে পাবোনা অন্যের মুখ। ধরা পরবেনা প্রসাধন অথবা এসিড। ভয় নেই।
এসো প্ল্যানচেটে বসি।

যে হাত ও হাতের আঙ্গুলগুলি মুহুর্মুহু চেপে বসতে চায় অপরজনের কন্ঠনালীতে সেই হাতগুলিই এখন টেবিলে থাকুক পাশাপাশি। যদি ছোঁয়া লেগেযায় তবু বিস্ফোরন ঘটবেনা কেননা গহনে যুগান্তের জমানো বরফ বারুদের স্মৃতি ভুলেগেছে। তাই সঞ্চারিত হবেনা বিদ্যুৎ। বেদনার কথাগুলি দপ্‌ করে জ্বলে উঠবেনা। কেবল প্রেতাত্মা এলে মোমবাতি নিভেযেতে পারে। দুলে উঠতে পারে ঐ তেপায়া, টেবিল।
এসো প্ল্যানচেটে বসি।

এসো প্ল্যানচেটে বসি।
এসো চেষ্টা নিই সেই বালকটিকে এবং তার আবহের বাঁশঝাড়, শেওড়া গাছ ও খালের ছলাৎ-ছল ধ্বনিকে ফিরিয়ে আনার। চেষ্টানিই ফিরিয়ে আনার তার প্রথম হস্তমৈথুনের দিন। গ্রীষ্মের দুপুর। পীচ্‌রাস্তা। ইস্কুলের মাঠ। সোমাদির স্তন আর প্রশান্ত’র কাছে পাওয়া ‘জীবন যৌবন’। এসো চেষ্টা নিই ফিরিয়ে আনার সেই বাঁশের পুলটিকে যা ছিল আসলে সেতু – নদী নয় – খালটির এপারে ওপারে। এসো চেষ্টানিই ফিরিয়ে আনতে সেই আড্ডাকে যাকে বলাহত “রাষ্ট্র সংঘ”। সেই ‘মহানায়ক’ পত্রিকার অফিসে। চেষ্টানিই আবারো নির্মাণ করতে সেই অঝোর বাদ্‌লার রাত্রিকে ঝড়েজলে যার নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে পরেছে রাস্তায় আর মোটুর সাইকেলের রডে রোগা তুমি যেতে যেতে টায়ার পাংচার... সবদিকে লোডশেডিং । নদী আর খাল উপচে জল ঢুকছে গৃহ আর গার্হস্থের আনাচে কানাচে...

এসো তবে প্ল্যানচেটে বসি। এই রক্তহীন যাপনের শিরায় শিরায় যে বরফ প্রেতের স্পর্শ কি তার চেয়েও শীতল? ভঙ্গুর? এই  সকল চরিত্রপাঠ গ্রন্থের পাতায় পাতায় যেসব অক্ষর প্রেতের হস্তলিপি কি তার চেয়েও বেশী প্রতারক?  জানিনা। এসো তবে প্ল্যানচেটে বসি। এসো তবে ডাক দিই সেই সব ছায়া ও ছবিকে যাদের অতলে আজো প্রেতাত্মার মতন হলেও ছায়াফেলে স্বহস্তে পুড়িয়ে দিয়ে আসা চোখ হাত নাক মুখ যোনি আর পুরুষাঙ্গগুলি ...

ঘুম ঘর