প্রবেশিকা
এ সকল কেচ্ছাগুলি, প্রিয়,
ভুলে যেন বলোনা কারেও।
প্রেতাত্মার কাহিনীর মতো
এখানেও নায়কই নিহত...
তুমিতো দেখেছো শুধু ছায়া –
রটিয়েছে কেউ “মহামায়া” ...
সুতরাং কথাগুলি, প্রিয়,
বালিশের নীচে রেখে দিয়ো –
-পুরাতন প্রিয়পুষ্পহেন –
লুপ্তহোক্ প্রমাণ এহেন...
কবিকে…
কবিকে খুঁজছি আমি
খড়ের গাদার মধ্যে সূঁচটি – অথবা –
মধ্যরাতে ট্যাক্সিখোঁজা
টলোমলো মাতালের মতো –
কবিকে খুঁজছি আমি
কবিতাসমগ্র খুঁড়ে – পান্ডুলিপি খুঁড়ে –
কবিকে খুঁজেছি আমি
শ্মশানেও গ্রামের আঁতুড়ে ...
পেয়েছি কি পাইনি জানিনি।
তবু এই অন্বেষণহেতু
যে সকল ঝিনুক পেয়েছি
তার মূল্যে
আপামর কবিযশোপ্রার্থীদের কাছে
আমার অক্ষর চিরঋণী।।
ঘাতককথা
“না, আর ছন্দে নয় –
আজ থেকে ছন্দছাড়া
অভিযান, আত্মরক্ষা, অশ্বমেধ অথবা পতন –“
সিদ্ধান্ত নিই তবু ছন্দ এক ঘাতকের মতো
পিছুনেয় তীক্ষ্ণছুরি জামায় লুকিয়ে-
পালিয়ে ভিড়ের বাসে
লাফ দিয়ে উঠে গেলে আমি
ট্রাফিকপুলিশ হয়ে
লালবাতি দেখায় সিগ্ন্যালে –
অতএব সম্পাদকদের গৃধ্রহেন চোখের আড়ালে
আমি তার পায়ে পড়ি, নতজানু হয়ে
উত্-কোচ দিতে যাই
স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, পদাবলী, পয়ার, পাঁচালী –
এবং অন্তিম দৃশ্যে
লক্ষ্য করি অসহায় চোখে
আমার প্রতিটি শব্দ
অদ্যাবধি ধাবমান
ছন্দের অমোঘ চাবুকে ...
মৌন পারাপার
বেসুরে বাজছি না’কি
এই সুরই প্রকৃত শোণিত?
কোনোরূপ ভূমিকা ছাড়াই
প্রায়শ এ জীবনের ভিত
এই প্রশ্নে কেঁপেওঠে, রাতে –
এ ঠিকানা ভুল না’কি
হয়নাই দেখা আজো
পরাক্রান্ত মাঝিটির সাথে?
সে মাঝি কি সর্বনাশ?
সে মাঝি কি দোরভাঙ্গা ঝড়?
সে’কি খোঁজে গৃহপথছায়া?
না’কি সে’ই ভেঙ্গেদেয় ঘর?
বেসুরে বাজছি না’কি
এই সুরই প্রকৃত,পরম?
মাঝিটির জাদুবাঁশি না’কি
পূর্বাপর আমারি বিভ্রম?
প্রশ্নশরে বিদ্ধ আমি
কেঁপেউঠি, কাঁপে অন্ধকার –
ভোর হয়, শুকতারা আসে –
সুরে ও বেসুরে চলে
অন্তরালে আমাদের
মৌন পারাপার।।
বার্তা
বার্তা শুধু তারই জন্য
যে জেনেছে রক্তাক্ষরে
অক্ষরের শেষ অক্ষমতা –
বার্তা শুধু তারই জন্য
যে জেনেছে ঝরাপাতা,
বিষ্ঠা, নুড়ি, যোনি বা বিভূতি
সকলেই বার্তাবহ
প্রকৃত প্রস্তাবে ...
আমি তাই দেবতা ও অন্য অন্য জগদ্দল ফেলে
এখনো কুড়াই নুড়ি, যোনিঘ্রান, ঝরাপাতা
স্মৃতি আর লুপ্তবীজ -
নাভিহ্রদে শিশিরের জল ...
সঙ্কেতের সূত্রধরে
এতোদিনে এটুকু জেনেছি
প্রকৃত বার্তা আরো
মন্ত্রহীন, ক্ষুরধার –
গহন, অতল ...
নাস্তিক
যেহেতু নাস্তিক নই
তাই আমার জাত নেই, তবে
ধর্ম আছে, আর, সে বড় হেঁয়ালিধর্ম –
কোনোরূপ মন্ত্র, ধ্যান, বলীপ্রথাহীন...
যেহেতু নাস্তিক নই
তাই আমার দেবতা স্বাধীন।।