প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Monday, May 30, 2016

অনেক বছর আগের একদিন



অনেক বছর আগের একদিন
১।
শোনা গেলো লাইনে কারো লাশ পরে আছে।
মিটারগজ রেলগাড়ি তাই
থেমে গেলো। মধ্যপথে।  পাহাড়ের পাথুরে ঊরুতে।
সকল লোকের মতো নেমে ভিড়ে মিশে যেতে যেতে শুনি
“নিজেই ঝাঁপালো? না’কি কেউ ধাক্কা দিয়ে?”-
“ধাক্কা দিতে যাবে কেন? নির্ঘাৎ নেশাভাং করে...
যে হারে আপদ বাড়ছে
দিনে দিনে
দেশে”।
“যদিও থেঁত্‌লে গেছে অনেকটাই তবু
মুখ দেখে মনে হলো
ভদ্রঘরেরই ছেলে হবে...”
আকাশের ধোয়ামোছা নাভিটি পেরিয়ে
সূর্য্য তখন ঢুকছে
নীলিমার
নিরাকার গহিন যোনিতে।
ঝিঁঝিঁদের গান জাগছে ঝোপেঝাড়ে
বাঁশবনে, অরণ্যের গোপনাঙ্গে
খাদে।
#
“কি হবে এ মৃতদেহ দেখে? আয়ু ফুরিয়েছে, তাই
রেলের ঘুরন্ত চাকা নিমিত্ত হয়েছে”
-ভেবে নিয়ে
সকল লোকের ভিড় থেকে
মুদ্রাদোষে
ফাঁকা জায়গা দেখে
সিগারেট জ্বালানো মাত্রই শোনাগেলো-
“নাম জানা গেছে। মল্লিনাথ ভট্টাচার্য।
কি সব কাগজ ছিল ছোরার পকেটে।
বাপের নাম প্রিয়নাথ। অমুকগঞ্জেতে” –
“চিনেছি। চিনেছি। আর বলতে হবেনা।
প্রিয়নাথ মহা চোর। এসডিও ছিল।
দুতিন বছর হল পটল তুলেছে ...”
এবার এগোতে হলো।
প্রায় ছুটে যেতে হলো
ভিড়ের কেন্দ্রাভিমুখে
লাশটির দিকে।
সকল লোকের ভিড় ঠেলে ততোক্ষণে এই জঙ্গলেও
রক্তের গন্ধ পেয়ে কতিপয় পুলিশ এসেছে।
#
“কি মশাই, কি দেখছেন এই রকম গোল চোখ করে?
সাংবাদিক? না’কি
কখনো দেখেননি লাশ,এইজন্মে? আগে?
না’কি খুব চেনা লোক? ইয়ারদোস্ত্‌? তবে
চলুন শনাক্ত করতে এখুনি থানাতে-
নাহলে কাটুন দেখি। চলে যান নিজের কামরাতে।
লাশ নিয়ে যাচ্ছি আমরা। দশ মিনিটে
ট্রেইন ছেড়ে দেবে”।
শ্লথ পায়ে ফিরে আসি নিজ অন্ধকারে।
কিভাবে শনাক্ত করব এ মুহুর্তে কাকে?
এই ভিড়ে রয়েছে কি কেউ
যে পারে শনাক্ত করতে
প্রকৃত আমাকে?
শ্লথ পায়ে ফিরে আসি নিজ অন্ধকারে।
মনেপড়ে
এলোমেলো কথা মনেপড়ে...
#
-“নাম জানা গেছে। মল্লিনাথ ভট্টাচার্য।
অমুকগঞ্জের সেই মহাচোর এসডিও’র ছেলে।
কয়েক বৎসর হলো পটল তুলেছে
মা-বাপ দুটোই।“
-“ছোরার এলেম ছিল। যা একখান জঙ্গি মাল
বিয়ে করে নিয়ে এসেছিল...”
-“ হুম্‌। তবে ওই জঙ্গি মাগীতো
ওকে ছেড়ে চলে গেছে-
-কম্‌সে কম্‌ দশ বছর হলো” –
-“হুঁ । তারপরে’ত পড়ে থাকতো বিশুদের ঘরে।
বিশুর মেয়ের সঙ্গে ঢলাঢলি ছিল...”
-“কোন্‌ বিশু? অটোওয়ালা?
যে ব্যাটার বৌ” -
-“ঠিক ঠিক। বৌটা খান্‌কি ছিল।
মেয়ে তিনটেকেও...”
-“ এই ছোকরা সম্ভবতঃ বিয়ে করেছিল
কোনো একটা মেয়েকে। বিশুর।
ছোকরা নিজেও মধ্যে
অটোরিক্সা চালাচ্ছিল বাজারের স্ট্যান্ডে”।
-“সে কি কথা?
বাপের তো চুরির মালে ঘর ভরা ছিল।
জমি ছিল নামে ও বেনামে...”
-“বাপ মরলে দুই ভাই বাটোয়ারা করে
ভালো মালই পেয়েছিল। তবে
এই ব্যাটা নির্বোধের হাঁড়ি। বড়টাতো”-
-“সেটাত শুনেছি ঢের আগেই তুলেছে
পটলের বস্তা বস্তা। মাল খেয়ে। লিভার পঁচিয়ে”।
-“কি যেন নামটা ছিল বড়টার? দীপক? উজ্জ্বল?”
-“কাছাকাছি। সমুজ্জ্বল ভট্‌। অনিল সেনের মেয়ে
অনীতাকে বিয়ে করেছিল”।
-“অনিল সেনের মেয়ে বুঝি। হতে পারে।
মারাত্মক মেয়ে। দেওরকে খুন করবে বলে
বিষ দিয়েছিল নাকি তার পাতে”-
-“হতে পারে। টাকা পয়সা জমি জমা নিয়ে”-
-“সম্পত্তি না ছাই? এই ছোকরা নাকি তার নিজের বৌদিকে
কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। পাড়ায় শুনেছি”
-“সকলি সম্ভব। দুটো ভাই’ই রত্ন ছিল মাগীবাজি, মদে”।
-“তবে নাকি দুটো ভাই’ই ব্রিলিয়ান্ট ছিল।
নেশাভাং, মাগীবাজি করে
লেখাপড়া গিয়েছিল তুমুল গোল্লায়।
যে ইস্কুলে ওরা পড়তো
আমার জামাইবাবু ঐ ইস্কুলে হেড মাস্টার ছিল।
সমুজ্জ্বলের ছেলেটাও ওই স্কুলেই পড়ে।
মাথা নাকি খুইব ভালো ওই ছেলেটারও”।
-“সমুজ্জ্বলের বৌ, অনিল সেনের মেয়ে,
সে’ও ছিল ভালোছাত্রী, নামকরা,অমুকগঞ্জের।
বিধবা হওয়ার পরে মাস্টারির চাকরি নিয়েছে।
বাড়িতেও ছাত্র পড়ায়। আমার শালার মেয়ে
তার কাছেই পড়ে...”
-“এ’তো গেলো বড়টির কথা। এই ছোরা,
এই মল্লিনাথ, বাপের সম্পত্তি পেয়ে
কি করে ওড়ালো”
-“মদ আর মাগীবাজি ছাড়া
শুনেছি সুদের ব্যবসা সাঁটে ফেঁদেছিল...”
#
পাহাড়ে নেমেছে রাত্রি।
নীলচাঁদ বুক খুলে নেমেছে আকাশে।
মল্লিনাথ কি এতোক্ষণে
প্রেত কিংবা ভূত হয়েগেছে?
মিশে গেছে অরণ্যের এ মাদক আঁধারে?
পাহাড়ি থানায় তার ছেঁড়াখোঁড়া লাশ
কেউ এসে শনাক্ত করেছে?
কিভাবে শনাক্ত করব এ মুহুর্তে কাকে?
এই ভিড়ে রয়েছে কি কেউ
যে পারে শনাক্ত করতে
প্রকৃত আমাকে?
এইমাত্র পার হয়ে টানেলের যোনি
রেলগাড়ি ঢুকে যাচ্ছে আরো গুহ্য বাঁকে।
তখুনি জানতে পারি মুখোমুখি সীটে
মল্লিনাথ বহুক্ষণ এসে বসে আছে।
ঠোঁটে হাসি। দেখছে আমাকে।
#

“আমার তো এখন আর টিকিট লাগবেনা”।
মজা করে মল্লিনাথ বলেঃ “ ট্রেইনে, বাসে, দুর্গা সিনেমাতে।
ভূতেদেরতো কোনোখানেই টিকিট লাগেনা।
চোদ্দ নম্বরে গেলে মাসীরাও ফ্রি’তে যেতে দেবে।
তুই এই ট্রেনে এলে আমি ঠিকই টের পেয়ে যাবো।
ফ্রি’তে এসে মুখোমুখি বসে সারাপথ আড্ডা দেবো
যে রকম কলেজে দিতাম।
তারপর তোর সঙ্গে নেমে বাসে করে করিমগঞ্জে যাবো।
দেখে আসবো তনুশ্রীকে। “শেলীর ডেকি”কে।
দুপুরে দুজনে যাবো দেউড়ি টিলা’তে।
পেট ভরে গাঁজা খাবো। বিকেলে চোলাই ...”
রেলগাড়ি ছুটে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাচ্ছে চাঁদ।
জানতে ইচ্ছে করে
ভূতেরা কি গাঁজা খেতে পারে? অথবা চোলাই?
মল্লিনাথ টের পেয়ে হাসে “অন্য ভূতেরা যদি
মদ গাঁজা খেতে পারেওবা আমি পারবোনা।
আমার তো গলাটাই কাটা গেছে ট্রেনের চাকাতে।
সব ধোঁইয়া, সব মাল গ’লে যাবে
ওই ফুটো দিয়ে...”
#
বাঁধা ছিল নানান মাদুলি। মল্লিনাথের এই
কাটা যাওয়া গলাতে কখনো।
ওই সব মাদুলি ও তাবিজ ভরসাতে
তার মাতৃদেবী
সচেষ্ট ছিলেন সদা নেশা,ভাং, ইঞ্জেক্‌শান থেকে
মল্লিনাথকে বিধিবদ্ধ গোয়ালে ফেরাতে।
অমুকগঞ্জের থেকে প্রিয়নাথ এসডিও’ও তাই
মল্লিনাথ সসম্মানে মাধ্যমিক দরজা পেরোলে
বদ্‌লী নিয়ে এসেছিল পড়শি শহরে।
অভিপ্রায় ‘দুষ্টচক্র’ থেকে দূরে রেখে
ছেলেকে এ শহরের কলেজে পড়াবে।
প্রথম পরিচয়পর্ব, ‘চম্পু’ ওরফে এই
‘মল্লিনাথ’ চরিত্রের সাথে – বহু আগে।
সিক্স বা সেভেন ক্লাসে। মা বাবার সাথে
অমুকগঞ্জবাসী পিসীদের বাসস্থানে গিয়ে।
আবার এগারো ক্লাশে অকস্মাৎ দেখা।
শম্ভূ সাগর পার্কে। আমার শহরে।
নতুন অধ্যায় শুরু। কথা মনে পড়ে ...
মনেপড়া ভেঙে দিয়ে মল্লিনাথ বলেঃ
“আবার জন্মাই যদি
দশমাস দশদিন পরে
অন্য কোনো মাতা কিংবা মাসীর জঠরে
জন্মাবো কি গলায় এই কাটাদাগ নিয়ে?
না চিনিস তখন যদিবা
দেখে নিস্‌ এ দাগটি মিলিয়ে ...”
#
প্রথম পরিচয়পর্ব, ‘চম্পু’ ওরফে এই
‘মল্লিনাথ’ চরিত্রের সাথে – বহু আগে।
সিক্স বা সেভেন ক্লাসে। মা বাবার সাথে
অমুকগঞ্জবাসী পিসীদের বাসস্থানে গিয়ে।
আবার এগারো ক্লাশে অকস্মাৎ দেখা।
শম্ভূ সাগর পার্কে। আমার শহরে।
নতুন অধ্যায় শুরু। কথা মনে পড়ে –
মনেপড়ে শক্তি চ্যাটার্জীর “হে প্রেম, হে নৈঃশব্দের” কথা।
মনেপড়ে বইখানি তাকে পড়তে দিলে
এক রাত্রে পরদিন সন্ধ্যাবেলা গাঁজার আসরে
স্মৃতি থেকে একটানা আউড়ে গিয়েছিল।
পাশে বসা অপর গাঁজারু
সৌমেন কেশে উঠেছিল। কেশেছিল
আধঘন্টা ধরে।
বছর খানেক পরে এ কলেজ থেকে
বিতাড়িত হয়ে মল্লিনাথ
ফিরে গিয়েছিল তার নিজের শহরে।

পরের সাক্ষাৎকালে মল্লিনাথ বিবাহিত আর
আমি পাঠরত আছি প্রযুক্তির কলেজে, হোস্টেলে।
সেই তার প্রথম বিবাহ। মধ্যরাতে বৌ নিয়ে এসে
মাতৃদেবীকে তার ডেকে বল্লোঃ “খেতে দাও।
দুইজনেই দেড়দিন না খেয়ে রয়েছি”-
মল্লিনাথ হেসে ওঠে। তার সেই হাসি
রেলের বাঁশির মতো অন্ধকারে ডানা মেলে দিলে
বলে মল্লিনাথঃ “পাকঘরে ছিলনা কিছুই।
রান্না করে দেবে কিছু – ততোটা সময়ও
খিদে চেপে রাখা ছিল অসম্ভব। তাই
মুড়ি আর গুঁড়োদুধ দিয়ে মিষ্টিমুখ হয়েছিল
সেই রাত্রে বধূ ও পুত্রের”...

আমি পাঠরত আছি প্রযুক্তির কলেজে, হোস্টেলে।
শীতের দুপুর বেলা হোস্টেল ও কলেজ এড়িয়ে
কবিতার পংক্তি খুঁজছি শহরের পথে হেঁটে হেঁটে ।
অকস্মাৎ মল্লিনাথ এসে হেসে বল্লোঃ ‘এসেছি এখানে।
ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার না। ওর। ‘ওইখানে’ কি যেন হয়েছে।
করলেই চুলকায় খুব”। -বধূটি সঙ্গেই ছিল প্রথম সাক্ষাতে।
লজ্জা পেয়ে নিজে সড়ে গেছে।

“সিগারেট ধরা একটা।
আমি তো পারবোনা টান্‌তে। তোর টানা দেখে
মনকে ঠারব চোখ”। এক সেকেন্ড থেমেঃ
“আচ্ছা বল্‌তো শালা
ভূত প্রেতেরও মন থাকে না’কি?”
#
অমুকগঞ্জে গেছি। পিসীদের বাড়ি।
ছাত্রাবস্থা কিছু কাল সমাপ্ত হয়েছে।
মল্লিনাথের খোঁজে সন্ধ্যাবেলা গিয়ে
নেড়েছি দরজার করা ওদের বাড়ির।
বধূটি দরজা খুলে ডেকে বসিয়েছে ।
রজনীগন্ধার মতো শুভ্রতার মূলে
রয়েছে বিষণ্ণ দুই চোখের বেদনা।
“আপনি তার বাল্যবন্ধু, তাই বলছি,
কিছুতেই কিছুই হলোনা” ...
জানা গেছে নানান কথাতে
সে হয় আমার এক নিকট বন্ধুর
মামাতো ভগিনী।
“মল্লিনাথ ফিরবে কখন” প্রশ্ন করলে বলে
-“এ-এস্‌-ই-বি অফিসের পাশে
মদের দোকানে পাওয়া যাবে...”

পাওয়া গেলো সেখানেই তাকে।
গলী গিয়ে যেখানে মিলেছে সড়কে
তার পাশে তরজার বেড়া দেওয়া বাড়ি।
মদের দোকান ঠিক নয়। তবে ঠেক।
গৃহকর্ত্রী নিজেই বানায় কিংবা আমদানি করে
ভেতো মদ। স্পিরিট মেশানো। মুখে দিলে
কন্ঠনালী পুড়ে যায় ঝাঁঝে।
ইলেকট্রিক আলো নেই ঘরে।
রাস্তায় যে সরকারী বাতিদান আছে
সে’ও কানা। কূপীর আলোতে
মৃতমৎস্যহেন দৃষ্টি নিয়ে
কয়েক জোড়া দগ্ধ চোখ
পদ্মাসনে বসে আছে মাটির মেঝেতে।
মধ্যমণি মল্লিনাথ। দরজার দিকে পিঠ।
অনর্গল বলে যাচ্ছে কিছু।
প্রতিটি শব্দের সঙ্গে মৃত চক্ষুগুলি
পুড়ে যাচ্ছে আরো আরো গহন চিতাতে।
শীৎকারের মতো সুরে
মাঝে মাঝে সোনা যাচ্ছে
“ইশ্‌শালা”, ‘পক্‌পক্‌”হেন নানাবিধ ধ্বনি।
“আরে না না অতো জলদি ভরে দিলে
ও মাগীর কিচ্ছু হয়না। প্রথমে আঙ্গুল দিয়ে...”
হেঁচকা টানে মল্লিনাথকে তুলে
বাইরে আমি বর্ণন অসমাপ্ত রেখে।
দু মিনিট চুপচাপ হেঁটে হেসে ওঠে মল্লিনাথঃ
“ বেচারা খগেন, বিশু, জগাই, শাহিদ।
ঠেলাওলা, রিক্সাওয়ালা, শালা,
শুধুমাত্র সিনেমায় ছাড়া কোনোদিন ন্যাংটো দেখেনি
ভদ্রলোকের ঘরের চাঙ্গা মেয়েদের।
আমি তাই গল্প শোনাই কিভাবে মালার সঙ্গে
কেস্‌ করি। ওরা উল্‌সে ওঠে।
আমার মালের পয়সা ওরা দেয়।
মাঝে মাঝে দিন দুপুরে এসে
“ঠান্ডা জন খাওয়ান বৌদি” বলে
দেখেযায় আমার বৌটাকে।
আরে শালা, রেগে যাস্‌ কেন?
লাটকে, সিনেমায় যারা এন্‌টারটেইন করে
তারাওতো কারো বউ, না’কি?”
মল্লিনাথ হাসে।
সরকারী বাতিদানটিতে ঝুলে থাকা
অন্ধ বাল্বের মতো আমি চেয়ে থাকি ...

#
“পরের বার এই ট্রেনেই আসবি। কেমন?
পরের বার তুই এলে তোকে সঙ্গে করে
মালাকে দেখতে যাবো। আমাকে যে ঘেন্না করে –জানি।
তোর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ছিল। তখন অন্ততঃ।
তাই তোকে নিয়ে গেলে তাড়াতে পারবেনা।
যাঃ শাল্লা, আসল কথাই ভুলে গেছি।
আমি ভূত। কেউ আর আমাকে দেখবেনা।
তুই যাবি। গল্প করবি। আমি তোর পাশে বসে বসে ...
আমি ভূত। তাহলেতো আমার ছেলেও...
তোর ছেলে কতো বড় হলো?”
আমি বলি “সাত বছর সদ্য পেরোলো”
-“আমারটার দশ-এগারো হবে...”
মল্লিনাথ বলে। আমি চুপ।
তারার আগুনে পোড়ে
রাত্রি
নীরবে।
২।
“ওঠো বাবু। আর কত ট্রেইনে ঘুমাবে?
একটু পরে ট্রেইন ধোয়া হবে।
আমরা এখন কামরা ঝাঁট দেব...”
গ্রীষ্মের সকালের কাছে নগ্ন হয়ে পরে আছে
মফস্বলি ছোট ইস্টিশান।
ঘড়ি দেখে বোঝা গেলো অন্ততঃ ঘন্টা দুই আগে
গাড়ি এসে পৌঁছে গেছে শেষ ইস্টিশানে।
যাত্রীরাও চলেছে সুনিশ্চিত যে যার বিবরে।
ব্যাগ কাঁধে তুলে নিই। আমাকেও যেতে হবে ঘরে।
ওভারব্রীজ পার হয়ে অটো স্টান্ডে আসি।
ওটোওলা দাবী করে দশ টাকা বেশী।
রাজি হই। উঠে বসি অটোতে আমেজে।
মল্লিনাথ আসে। পাশে বসে। ওটো ছেড়ে দেয়।
মল্লিনাথ হাসে। বলে “দেখা হবে।
এই ট্রেনে যে কোনো কামরাতেই
একা তুই উঠে বসলেই আমি টের পাবো।
আড্ডা দিতে চলে আসবো সব কাজ ফেলে।
তাছাড়া ভূতের কিছু সত্যি সত্যি কাজ থাকে নাকি?
দুশ্‌শাল্লা কতো দূর এসে গেছি তোর সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে...”
মল্লিনাথ নেমে যায়। ওকেও কোথাও যেন হবে ফিরে যেতে।
মনেহলো মল্লিনাথ সে রকমই আছে
কলেজে যেমন ছিল। নেশাখোর, মেয়েবাজ,
হুজুগে,মেধাবী। কেবল গলায় ওই কবচ তাবিচ গিয়ে
কাটাদাগ বহাল হয়েছে। ঠিক যেমন এখন বরাকে
মিটারগেজ লাইন আর নাই। ব্রডগেজ বরাকের দখল নিয়েছে।
সুতরাং এখন আর পাহাড়িয়া ওই রেলপথে
আমি যদি যাইও বা একা
মল্লিনাথ টেরও পাবেনা।
আসবেনা আড্ডা দিতে কাটাগলা নিয়ে।
এখন সকল ট্রেন অন্য পথে, অন্য খাতে যাবে।

























ঘুম ঘর