এই বই যাঁর লেখা ...
“এই বই যাঁর লেখা তাঁকে আমি চিনি। বইটই
পড়ে নয়, শুধুমাত্র একবার দেখে। একবার। একবারই
দেখা। সে এক দুর্যোগ রাতে পসরা সাজিয়ে নিয়ে একা
তেমাথার মোড়ে নিঝ্ঝুম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
অবশেষে দেহ জুড়ে শ্রান্তি আর চোখ ভরে ঘুম
নেমে এলে ফিরে চলেযাব ভেবে মোড় ঘুরতেই
দেখা। তাঁর সাথে দেখা। দেবতা বা দেবদূত নয়
মানুষের মতো এক সুশ্রী পুরুষ তিনি আমার কিনারে,
কিনারে কিনারে হেঁটে চললেন রাত্রির বিখ্যাত সেই
“কেলিকুঞ্জ” অথবা সরাই’এ। তাঁকে দেখে আমার কথারা
খই হয়ে ফুটে উঠলো আর সারাপথ চুপচাপ তিনি
সরাই-কোঠায় ঢুকে বেয়ারা ছোকরাটিকে ভদ্কা দিতে
বল্লেন তবে ছোকরাটির দেরী দেখে নিজেই গেলেন
সরাই এর ভিতরবাড়িতে। সরাই’এর একা ঘরে
দেহ জুড়ে শ্রান্তি আর চোখ ভরে ঘুম এলো ফিরে।
কেজানে সরাই’এর চেনা ওই ময়লা সোফাতে
কতক্ষন কেটেছিল আমার ঘুমিয়ে। ঘুম ভাঙ্গতেই
দেখি আমার শিয়রে তিনি, যেন মোমবাতি। আমার
লজ্জা লাগলো, ভয়ও লাগলো – কেননা ঘুমানোর
নিয়ম, এরকম, “কেলিকুঞ্জে” নেই। তাই যেই বলতে
গেলামঃ “দুর্যোগে, বিষ্টিবাতাসে ...” তিনি হেসে, মৃদু
হেসে,আমার চুলের গোছাটি হাতে নিয়ে
বল্লেনঃ “আরেকটু ঘুমিয়ে নাও তুমি। আমি আছি। কিচ্ছু
ভেবোনা”। ঘুম ভাঙ্গলো ভোরবেলা। কাকভোরে দেখি
আমার শিয়রে তিনি, যেন মোমবাতি। বল্লেনঃ “ এবার
আমাকে যেতে হবে”। আমার হাতের মুঠোতে
গুঁজে দিয়ে বেশ কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে হাতের মুঠোটি
বন্ধ করলেন তিনি আলতো চুমুতে। “ কিছুইতো
করেননি তবু এটা কেন” – বলবার আগেই দেখি তিনি
যাচ্ছেন। যাচ্ছেন ধীরপায়ে হেঁটে। বেরায়া ছোকরাটি
এবারে বল্লো কাছে এসেঃ “চেনোনা
ইনি কে”? বলেই কি এক পত্রিকা এনে
আমাকে দেখালো তাঁর ছবি। জানালো যে
তিনি কবি এবং লেখকও” – মেয়েটির, গল্পবলা
মেয়েটির চোখেমুখে দুষ্টুমি যে মিশেছিল
তা’ত ধরা পড়েছিল সহজেই, সহজেই
ম্যাক্সিক গোর্কীর চোখে। এ ছাড়াও
পরিত্যক্ত এবং অনাথ পশুশাবকের
আর্তি ছিল তার চোখে, চোখের দৃষ্টিতে।
এ সকল পারহয়ে গোর্কীর চোখ
দেখেছিল অন্য এক ছবি চেনা কবি
আলেকজেন্ডার ব্লখের।
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
২০/১২/২০১৯
বেঙ্গালোর