প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Thursday, April 2, 2020

“মইধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান”, ঋত্বিক ঘটক এবং কোরোনা ঋতুর দিনিলিপি’


মইধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান
ঋত্বিক ঘটক 
এবং 
কোরোনা ঋতুর দিনিলিপি

খেলায় নাম করে ওপাশের ফেক্টরীতে আজ একমাস হল মন্টু একটা চাকরী পেয়েছে। ভয়ে তোমাদের বলতে পারেনি। আজ মাইনে পেয়ে নিয়ে এসেছে।
ফেক্টরিতে কাজ পেইয়েসে?লেবার?
তাতে কি হয়েছে? আজকাল তো এইসব চাকরীতে উন্নতি বেশী
মইধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান কুন্‌ চড়ায় গিয়া ঠেকে দ্যাখ্‌
অতি পরিচিত, মৃত্যহীন সংলাপ। পিতা-পুত্রীর। উপলক্ষ কনিষ্ট ভ্রাতার চাকুরী প্রাপ্তি। পঞ্চাশের দশকের উদ্বাস্তু মধ্যবিত্ত মাস্টারমশাই পিতার উক্তিতে কি শুধুমাত্র তাঁর শ্রেণীচরিত্রটিই প্রকাশিত হয় নাকি আরো কিছু? কাহিনীর সময়কাল পঞ্চাশের দশক। ছবি মেঘে ঢাকা তারার মুক্তি ১৯৬০ সাল। যুক্তি-তক্কো-গপ্পতে আমি কনফিউইজড এই শেষ কথা বলে ঋত্বিক ঘটকের মৃত্যু ১৯৭৬ সালে ইতোমধ্যে এবং অতঃপর মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান গতিপথ পাল্টেছে বহু ও বিচিত্র ধারায় এমন কি কার্ল মার্ক্স যেভাবে বুঝেছিলেন মধ্যবিত্তকে তাও যেন মনে হল সঠিক নয়। অন্তিমে স্থিতাবস্থা এলে লক্ষ্য করা গেলো যে সনৎ বাবু হেন যাঁরা, নীতার দাদার ভাষায় প্রিন্সিপল নেই, তাঁরা গদীয়ান হয়ে বসলেন, রনজিৎ দাশের ভাষায় ফুটপাথ দেবতার মতো ( রেফারেন্সঃ বিশ্বাসকাকু, রনজিৎ দাশ)। মন্টু যাকে তার সেকেলে মাস্টার বাপ বলেছিলেন লেবার তারা ক্রমে, আইটি-লেবার,সনৎ বাবুরা  বোর্ড মেম্বার, নীতা”র  বাস্তব-বুদ্ধিমতী ভগিনী 'গীতা' রা আদর্শ ঘরণী ফ্রিজ, টিভি, ওডিগাড়ি ইত্যাদির সঙ্গে ভিক্টোরিয়াজ সিক্রেট


বেশ চলে যাচ্ছিল দিন ইউবিয়াউ-এনারাই অর্থাৎ আন ফর্‌চুনেটলি বোর্ন ইন ইন্ডিয়া আর নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান হয়ে। মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান কে ফুটপাথ দেবতার প্রতিষ্ঠা দিয়ে কলকাতা, দিল্লী, বোম্বে হয়ে মাদ্রাজ, বেঙ্গালোর, পুণা যদিবা এনারাই না হওয়া গেল।
ঠিক তখুনি এলো পত্র, মন্টুর কারখানা থেকে। যান্ত্রিক গন্ডগোলে মন্টুর পা কাটা গেছে। সেকেলে মাস্টার বাপ হায় হায় করে উঠলেন। বললেন মরে নাই। জখম হইসে। ইট অয়াজ এক্সপেকটেড। লোভ , লোভ ... ইট ওয়াজ এক্সপেকটেড কেননা মাস্‌ প্রোডাকশনে মানুষের কোনো মূল্যই নেই। আর লোভ, কার লোভ? মধ্যবিত্ত মন্টুর নাকি এই গোটা বণিক সভ্যতার? আদতে উভয়েরই। মন্টুর এই দুর্ঘটনাও যেন প্রতীক হালে রিসেসনএ , ছাঁটাইয়ে বিধ্বস্ত মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার, তার মানের। এখন তাই অবয়ব নিচ্ছে অধুনা এই কোরোনা নামক ভাইরাসে কল্যাণে বৃত্তি হারানো মধ্যবিত্তদের ভীতিতে, হাহাকারে, হা হুতাশে। হায়, এই মধ্যবিত্ত ফুটপাথ দেবতারা, মেফিস্টোফিলিসের কাছে ‘’প্রিন্সিপলের বিক্রির বিনিময়ে যাদের প্রতিষ্ঠা, যারা ৬ বা ৭ অংকের আইএনয়ার বেতন বা ডলার মূল্যে কেনা যাপনের দর্পে পাল থেকে পল, রায় থেকে রে, রাধেশ্যাম থেকে আর-এস তারাও আদতে ওই মন্টু। যান্ত্রিক গোলযোগে পা কাটাপরমাত্র সমস্ত প্রতিষ্ঠা থেকে বিতাড়িত, কিক্‌ড্‌ আউট। ঠিক যেমন এই মুহুর্তে কোরোনার কৃপায় এই বান্দরনাচের ডুগডুগিওয়ালারা যখন আশু মুনাফা বিষয়ে সন্দিহান তখন এওজন মধ্যবিত্ত মন্টুরও হাত-পা-মাথা ণিরাপদ নয়। যে কোনো মুহুর্তে তা কাটা পড়তে পারে। হয়তো জানে মরবে না। কিন্তু তখন তাদের কর্নে, মর্মে কোনো অর্থ বহন করবে কি এই সংলাপঃ
ফেক্টরিতে কাজ পেইয়েসে?লেবার?
তাতে কি হয়েছে? আজকাল তো এইসব চাকরীতে উন্নতি বেশী
মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার মান কুন্‌ চড়ায় গিয়া ঠেকে দ্যাখ্‌
... ...
মরে নাই। জখম হইসে। ইট অয়াজ এক্সপেকটেড। লোভ , লোভ ...

এই মহামারী সময়ে ভাবি সেই সকল মধ্যবিত্তরা যদি পাশার দান হিসেবে তাদের প্রিন্সিপলকে ব্যবহার না করতো তাহলেও মধ্যবিত্তরা প্রতিষ্ঠা পেতো হয়তো কিঞ্চিৎ দেরীতে। তবে সেই প্রতিষ্ঠা ফুটপাথ দেবতার মতো না হয়ে হয়তো হতে পারতো একেকটি সাবেক বট বৃক্ষের মতো যার ছায়াতে নিম্নবিত্তরাও ক্রমে শাখা মেলতে পারতো আকাশের দিকে, হয়তো মার্কিন-পিতাদের ডলার ঝুমঝুমির বান্দরনাচের ডুগডুগির তালে তাদের নেচে নেচে পঙ্গু হতে হতোনা অধুনার ইউবিয়াউ-এনারাই দের মতো।

আজ মেঘে ঢাকা তারার এই সংলাপ অংশটি শুনলাম স্বপ্নে। ঘুম ভেঙ্গে উঠেই মনে এলো এই কথাগুলি।
লিখে রাখলাম। লিখে রাখলাম এই কোরোনা ঋতুর দিনিলিপিতে।

ঘুম ঘর