প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, April 11, 2020

কোরোনা ঋতুর দিনিলিপিঃ “শো সাল ডিস টেস্টিং “



কোরোনা ঋতুর দিনিলিপিঃ “শো সাল ডিস টেস্টিং “
----–------++-+--------------------+-----------+---+-----+-+
“কোরোনা” নামক মহান ভাইরাসের কৃপায় ঘটিবাটি বাজানো, মোম জ্বালানো “দেশাত্মবোধ”, “ঘরে থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এ গুজব ছড়িয়ে জনসেবা” – ইত্যাদি ছাড়াও যে আরেকটি অভূতপূর্ব বস্তু পাওয়া গেল তা “সোসাল ডিস্টেন্সিং” নামক অনন্য শব্দবন্ধটি। আহা! কি অপূর্ব শব্দ! শোনামাত্র কানে বেজেওঠে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্তাগিন্নি সংবাদ এ ভানুপত্নীর কন্ঠ “হেন্ডেলাইটিস! আহা, কি মিষ্টি নাম গো! ওমন একটা অসুখ আমার হয়না কেন গো?” এবং সঙ্গে সঙ্গে ভানুবাবুর মুখ ঝামটা “ হেন্ডে না৷ হেন্ডে না। স্পন্ডে.. “
হ্যাঁ, হ্যান্ডে না, স্পন্ডেই বটে। যেমন ছেড়েছেন মার্কিনি বাবারা বাজারে। “কানা খোঁড়া ল্যাংরা” নয়, “ডিফারেন্টলি এবলড”,  আহা! “ খেয়ে খেয়ে আশ মেটেনা আহা মরি হুজুরের লাথি”। “ডিফারেন্টলি এবলড” – বলামাত্র কানার যেন তৃতীয় নয়ন খুল্লো,খোঁড়া ছুটলো ফুটবল মাঠে! জয় বাবা বজরংবলি! জয় মা সন্তোষী! মোদ্দা এই, যে, ভুলিয়ে ভালিয়ে বশে রাখা – “ হুঁ হুঁ বাওয়া, দেকেচ আমাদের রাষ্টোপিতারা কতো ভালো! কি মিষ্টি নামে ডাকে আমাদের। কত্তো ভাবে আমাদের ওয়েলফেয়ার নিয়ে!! তা ভাববে না? ওয়েলফেয়ার ইস্টেইট যে!” তা বটে। তা বটে। আমাদের কি নেই? আমাদের ডিম-ও-ক্রেজি আছে, অয়েল-ফিয়ার এস্টেইট আছে, আচ্ছে দিন আছে আর আছে “শো-সাল ডিশ- টেস্টিং “। যেন আমাদের, অর্থাৎ যারা কি'হে এইপ, ফেইস বুকিং, টিউটরের বাসিন্দা, তাদের যেন কোনো সোসাইটি আদৌ ছিল এই “ফেলো কড়ি, মাখো তেল” যুগে। যা ছিল তা হলো সোসাল গেদারিং এর নামে কার পশ্চাদ্দেশে কতটা চর্বি জমেছে তারই প্রদর্শন এবং প্রতিযোগিতা। ছিল ভিড করে হল্লা মাচানো। সমাজ বলতে যা বোঝা উচিৎ সেই সংজ্ঞাটি আদ্যন্ত লোপ করার চেষ্টাই আমাদের ডলারবাবা, আমবানিবাবাদের সনাতন পন্থা। সমাজ থাকলেই লোকের সঙ্গে লোকের মেলামেশা, আলাপ পরিচয়, ইউনিয়ন,  ট্রেড ইউনিয়ন, যেমন তেমন যখন তখন ছাঁটাই কিংবা প্রোমোশনে বাধাবিঘ্ন, সমাজ থাকলেই হিন্দুর পার্বণে মুসলমান প্রতিবেশীর নিমন্ত্রণ,  আনাগোনা। মুসলমানের পরবে হিন্দুর বিরিয়ানি। বিলাইতি,মার্কিন কোনো বাবাদেরই তা কাম্য নয়। অতএব… অতএব কাম-ধান্দার সুবাদে জড়ো হওয়া নানাভাবে ছিন্নমূলদের ভিতরে পয়দা করো ইহুদী বিদ্বেষ নয়তো মুসলিম বিদ্বেষ নয়তো হিন্দু বিদ্বেষ। যারা ছিন্নমূল নয় তাদের বোঝাও “ ওহে, , তুমিভিন্ন বাকিরা সব উইপোকা। ওরা জিউ, ওরা মুসলমান, তারা হিন্দু.. “ আর এবম্বিধ বদমাইসি গ্রীনরুমে সেড়ে মঞ্চে উঠেই “ডিম-অ-ক্রেজি, ছ্যাক কুলার, , ছো-মাজ, অচ্ছে দিন, মার্কিন ছোম-ঋদ্ধি… “ ওয়াও- ওয়াও নাকি ওয়াক-ওয়াক-থুঃ? 
তা মোদ্দা কথাটি এই, যে, “শালারা, ভিড় করোনা” কিন্তু তাতে, এই কোরোনা-ফেস্টিভেল শেষ হলে, পাব্লিক যদি বুঝেফেলে.. থুড়ি ভুলবোঝে.. যদি বলে “ তখন তো খুব শালারা ভিড় করিস না বলে মেজাজ নিচ্ছিলি তা এখন কেন এসেছিস হাত কচলাতে?  নেহাৎ ভোগে যাইনি,  তাই? “ - যদিও এমনটা বলার সম্ভাবনা খুবই কম কেননা তা বলতে গেলে মানুষে-মানুষে যতোটা কাছে এসে সমাজ গড়তে হয় সেই মনোভূমিকেই তো দেওয়া হয়েছে, ক্রমে লোপাট করে। এর বদলে আমদানী হয়েছে 'রক্তকরবী'র সেই যক্ষপুরী আর আমাদের প্রত্যেকের কপালে উল্কি করে দেওয়া হয়েছে ৬৯ এর ঙ আর ৭০ এর গ' হেন আন্ধার কিংবা সোসাল চ্ছিঃ – কিউরিটি নাম্বার। ছি-কিওরড হয়ে আমরা তাতা থৈ নেচেছি। কিন্তু তাও আমাদের অয়েল-ফিয়ার দেখভালের বাবারা রিস্ক নেবেন কেন?  বিসিপি জানেন তো? বিসিপি? বিজিনেস কন্টিনিউইটি পেলেন? ভোগে না গেলে ত বিজিনেস চালাতেই হবে আর তখন লেবার ছাড়া উপায় আছে? দিন আনে,  দিন খায়' দের কথা ছাড়ুন। ও জোগাড় হয়েযাবে। আরে বাওয়া যে ইস্পেশাল খনিজ দিয়ে আপেলের প্রোসেসর বানানো হয় তা নিষ্কাশনের খরচও কি আমরা পুষিয়ে দিইনি কালারড লেবারদের কপালে বন্দুক ধরে?  এই দিন আনে, দিন খায় হারামীরা মরবেনা। ওদের কথা ছাড়ুন। কোরোনা-ফেস্টিভেল থেকে ভোটের বাক্সের দিকে লাইন টানুন তো দেখি। ভোট-লেবার, আইটি-লেবার, অফিস-আদালতের পেটমোটা এবং চিমসে লেবার – মানে যারা দু ছত্তর পড়তে জানে, তাদের ওপরে ফোকাস করুন। “শালারা ভিড় করিস না। ভিড় করলে রোগ ছড়াবে। এতে প্রাথমিক ক্ষতি নতুন করে ট্রেইনড লেবার আমদানি করা, দ্বিতীয়ত তোদের থেকে রোগটা আমাদেরও ত হতে পারে, তোদের বৌ, মেয়ে, বোনেরাই ত আমাদের… “ না। এসব চলবে না। একটা মস্ত শব্দ চাই যা শোনামাত্র সব্বাই উলসে উঠবে পুলকে আর বলবে “ আহা কি মিষ্টি রুল গো! ওউ রুলের গুঁতা আমিও খাবো' – তাহলেই ত কেল্লা ফতে!!!
 দারুন দাদারা দারুন! “সোসাল ডিস্টেন্সিং”, ওয়াও! “শো সাল” আগে সক্কলে মিলে বসে একপাতে খাওয়ার যে “ডিশ” টি ছিল তা'ত নিশ্চিহ্ন কবেই! এবার সেই ভাঙা টুকরো  টাকরা গুলোর উপরেই চলুক “ টেস্টিং”। 
আপনারাও চালিয়ে যান। আমরাও দেখে যাই। দেখে যাচ্ছি।দেখবো পরেও।
হ্যাঁ, “ হাম দেখেঙে”।

ঘুম ঘর