আলোকদাকে নিয়ে
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
‘আশ্রয়ের বহির্গৃহ’
‘দিনাবসান অনেক আগে ঘটেছে
যা ঘটেনি তা তোমার অবসান -’
আলোকদাকে মনেপড়ে।
আলোকদার গ্রন্থগুলি পড়ি।
কখনোবা পড়িনা। নাড়াচাড়া করি শুধু।
হাতে নিয়ে চুপ বসে থাকি।
আলোকদার কবিতা বিষয়ে এতাবৎ দুইখানি গদ্য লিখেছি।
দুইখানি কবিতাও। তবুও আলোকদাকে নিয়ে
লিখিনি কিছুই আজো প্রকৃত প্রস্তাবে। প্রকৃত প্রস্তাবে
আলোকদাকেই আর কতোটুকু চিনি? কতোটুকু জানি
তাঁর রচনাবিশ্বকে? সম্ভবতঃ বাংলা ভাষাতে
উত্তর জীবনানন্দ
আলোকদা’ই এতাবৎ একমাত্র কবি
নিজস্ব রচনাবিশ্বে, রচনার শেষে যাঁর
চিহ্ন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়,
অসম্ভব।
#
‘সারাটাজীবন যাকে ভয় পেয়েছি
তা ওই দুটো চোখ।
অতবড় আকাশ তারও দুটো চোখ
সরু রোগা রোগা পথ
তারও দুটো চোখ।’
আকাশ আর চোখ একত্র এলেই গান
“তুমি যে
চেয়ে আছো…”
ভয় আর চোখ একত্র এলেই কাফ্কা, ফিলিপ. কে .ডিক্।
চোখ আর পথ একত্র এলেই জীবনানন্দঃ
মৃদু চোখ , পথে পথে ছায়া …
ভাবি, আলোকদানির্মীত এই থমথম, এই আবডাল
কোন চোখগুলি দেখে ভীত? আনন্দিত
চোখ বন্ধ করে? আলোকদাকে সন্ন্যাসীর মতো
মনেহয়। আলোকদার রচনা কখনো
বলেনা সন্ন্যাসকথা। তাই তাঁর রচনার কাছে
স্বস্তি পাই। ‘বহির্গৃহ’ সত্ত্বেও পাই
আশ্রয়ের স্বাদ।
#
‘পটভূমির অনুপস্থিতি
কোনো ছবিকেই বিশেষ করেনা।
#
সব অবিন্যাসই বিশেষের
দিক থেকে আসে।’
পটভূমি কথা আলোকদা এভাবে লিখেছেন।
আলোকের বন্ধু অলোক দেখেছেন
অন্ধকার
পটভূমিকায়, বাউল যৌবনে। আর
বয়েসের পরিণত বারান্দার থেকে
আলোকদার উক্তি গুলি
বিলিয়াম ব্লেকের মতো
মনেহয়। মনেহয় টের পাওয়া গেলো
সামান্য পরেই তবু টের পাই
অন্য টের পাওয়া।
আলোকদার পটভূমি, উপস্থিতি, বিশেষ, বিন্যাস –
এসকল শব্দগুলি
শব্দের কথা বলে, ইতিহাস বলে।
লিখেরাখে শিল্পের নিজস্ব ইতিহাস।
আমার মর্মগত শিল্প ইতিহাসে আলোক অলোক থেকে
অনেক আলোকবর্ষ বেশী হেঁটেছেন। সম্ভবতঃ তাই
আলোকদাই টের পেয়েছেন ‘ অগ্রগমন
একটা সাঁকোও অতিক্রম না করে
আজও
নিত্যকর্মবিধি।’
যার অন্য মানে
অন্ততঃ আমার মনে
আমীর, ভীমসেন যোশি, ফৈয়াজের
রোজ গলাসাধা। রোজ
একটু একটু করে
অনাবৃত করা
আপনাকে।
পটভূমিকেও ।