প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Monday, January 2, 2023

তোমাদের এ বৃষ্টি-শহরে

তোমাদের এ বৃষ্টি-শহরে


আমাদের মফস্বল থেকে তোমাদের মফস্বলে

ছোট পিসিমার বাড়ি, যতবারই গেছি, এখন অবাক লাগে ভেবে

প্রতিবারই বৃষ্টি-দিন ছিল। প্রতিবারই আষাঢ়-শ্রাবণ ছিল না'কি?  কে জানে কেন যে আজ

মনে পড়ছে প্রথমবার যাওয়া, একা একা, আমাদের মফস্বল থেকে

তোমাদের মফস্বলে, রেলে । সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়ে মিশেছে রাত্রির মেঘে মেঘে।

বৃষ্টি হয়ে গেছে তাই স্টেশনে রিক্সা নেই। যাত্রী নেই।

ওঠানামা নেই। কুত্তা বিল্লি বৃষ্টিও তখন আর নেই তবে হালকা ওড়নার মতো

আলগা হয়ে ঘিরে আছে তোমাদের শহরের স্তন আবার কোথাও

টুপটাপ ঝরছে তখনো। কিছুটা আন্দাজে আর কিছুদূর মা'র বলে দেওয়া

ম্যাপ ধরে, মনে মনে,ছাতা ছাড়া হেঁটে যাচ্ছি

তোমাদের ইস্টম্যান-কালার শহরে। তোমাদের ইস্টম্যান-কালার শহরে

তখন প্রত্যেকটি ঘরবাড়ি,ঝুপসি-গাছ,ঘাস,ঝোপঝাড়

তোমাদের ইস্টম্যান-কালার শহরে তখন কৃষ্ণা স্টোর্স, হাট বাজারসহ

অন্যান্য দোকানঘরও মিষ্টান্ন ভান্ডার দরজা, জানালা, ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে

সম্ভবতঃ ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আর লাইটপোস্ট, বিবিক্ত-উজ্জ্বল,

যেনবা গণিকা-বোন,মোড়ে মোড়ে সাহস দিচ্ছিল।

আমার বয়স? পনেরো বা বড়জোর ষোলো।

স্টেশন রোডের বাঁক ঘুরে কোন রোড? মনে আছে? মনে পড়ছেনা তবে মনে বিঁধে আছে

ওই রোডে, তারপরও অনেক বৎসর, গুদাম আর দোকানপাট ছিল। আর ছিল লণ্ঠন হাতে

রাজুর দাদুর মতো দুটি লাইটপোস্ট। তারাই দেখালো আলো ফেলে

খোলা ছাতা, ফুলটুল আঁকা। ছাতা থেকে বিন্দু বিন্দু জল ঝরে যাচ্ছে খোলা চুলে আর

তার মুখ স্টেশন রোডের দিকে ফেরানো হলেও উষ্ণতার অঙ্গীকার

দৃষ্টিতে, দুধের রেখাতে।

একজন স্পষ্ট মেয়ে, পশমের মতন বৃষ্টিতে

তোমাদের অস্পষ্ট শহরে, সন্ধ্যাবেলা, অনেক বছর আগে ,

কাঞ্জি, বিদিশা নয়, তোমাদের ইস্টম্যান-কালার শহরে।

বাস্‌ এলো। ইষ্টিশান-রোড থেকে বাস, তোমাদের মফস্বলে সে সময়ে একমাত্র বাস,

যদিও মন্থর তবু চিতার মতন চোখ -- বৃষ্টিধোয়া,হলুদ,নির্মম

এলো, যেন ইস্টিমার, রাস্তায় জমা জল দুই জোড়া চাকায় ছিটিয়ে

হাতে গোনা যাত্রী নিয়ে চলে গেলো আর যেতে যেতে চিতারই মতন যাকে

দিয়ে গেলো ছুঁড়ে -- সে এক  যুবক। যুবক লাফিয়ে নামল ফুটবোর্ড থেকে, যেন

শ্রীদুর্গা সিনেমা  হলে নুন-শো'র কাউবয় হিরো। মেয়েটির বাহু তাকে

নামিয়ে আনলো নিজে প্যারাসুট হয়ে। হাতে হাত ধরে তারা লাইটপোস্ট পার হয়ে ক্রমে,

যেনবা স্বর্গ থেকে এইমাত্র নেমে আসা কিন্নরী এবং কিন্নর, বড় রাস্তা ছেড়ে দিয়ে

কানা গলি ধরে অন্ধকারে মিশে যেতে যেতে

হঠাৎই নামানো-ঝাঁপ দোকানের ছোটো বারান্দাতে

ছিটকে গেলো, যেন দুটি জাত-সাপ, জননের দাহ্য ঋতুতে। প্রথমে অধর,ওষ্ঠ --

অন্য অন্য অঙ্গ গুলি, ক্রমে, তাদের বৃষ্টিভেজা পোশাকের বাধাবন্ধ ছিঁড়ে

ভাগ করে নিতে লাগল একে অপরের।

সামান্য দূরত্ব থেকে তাদের এই বৃষ্টি-পোড়া দেখে আমার জিহবা জানলো

যে এক তৃষ্ণাকে আজো তার খোঁজে আমি

তারপর বহুবার রেলগাড়ি করে তোমাদের শহরে এসেছি।

তবে ততদিনে শহরের একমাত্র সেই সিটি বাস

উঠে গেছে। অটোরিকশা বাজার নিয়েছে আর

কোনো যুবতীও থাকেনি অপেক্ষা করে

ইস্টম্যান-রং'এ আঁকা তোমাদের এ বৃষ্টি-শহরে।

 

 

[ স্মরনঃ জর্জ সিমোনো, 'এক্ট অফ্‌ প্যাশন' ]

ঘুম ঘর