প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Monday, January 15, 2024

আবার ব্রেখট, আবার সেই “তিন পয়সার পালা”

 আবার ব্রেখট, আবার সেই “তিন পয়সার পালা”


১।

পলি। 

মহোদয়গন, অভদ্র বা ভদ্র, যা'ই হন, যাঁরা

এই “তিন পয়সার পালা” 

পয়সা দিয়ে দেখতে এসেছেন এবং যাঁরা 

মঞ্চে রয়েছেন, সক্কলে দেখছেন —-

আজকে আমার বিয়ের প্রথম, প্রথম বিয়ের

রাত। দেখাই যাচ্ছে প্রাসাদ কিংবা

হোটেল-মোটেল নয়, শহর থেকেও দূরে —-

হা: হা, আস্তাবলে! ডাকাত-চোরের 

রাজার আস্তানাতে। এমন কেন? কারন, জানোইতো,

আমার বীর, প্রেমিক প্রবর স্বামী

ডাকাত-চোরের নিজেই সর্দার, মাথা এবং ঘাড়

কয়টা আছে কার —- না শোনে কথা

আমার কাপ্তেনের? কিন্তু তবু একজনেও তারা

গাইবে না গান, আমার বিয়ের প্রথম, আমার প্রথম বিয়ের

বাসর রাতেও । বলুন তো আপনারা

গান ছাড়া কি চলে —- বিয়ে? বাসর জাগা? নিজেই আমি তাই

গান শোনাবো, তবে 

মহোদয়রা, অভদ্র বা ভদ্র, যা'ই হন, “তিন পয়সার পালা” 

পয়সা দিয়ে দেখতে এসেছেন এবং যাঁরা 

মঞ্চে রয়েছেন, তাদেরকেও ঢুকতে হবে গানে। না না, গাইতে হবেনা। তবে

কথা বলতে হবে। গানের আশেপাশে

গড়তে হবে সরাই, যে সরাই এ জেনী

থাকতো এবং গাইতো এই গান। আমার নাম যে পলি

জানেন সকলেই। পলি

গাইবে জেনীর গান। সরাইখানার লোক হয়ে আপনারা

বলুন দেখি: “ জেনী, তোমার জাহাজ এ বন্দরে

ভিড়ছে কবে? ভিড়ছে তো ঠিক?” —- বেশ, দারুন বলেছেন। অন্য আরেকজন

বলুন: “ আরো কতো বাসন মাজা, কাপড় কাচা বাকি?

মিষ্টি জেনী, জলদস্যুর রানী?” —- দারুন না হলেও

মন্দ বলেননি তো। জেনীর গানে

এবার আমার পালা। আমার

তিন পয়সার পালা।


জেনীর গান।

দেখছো যা, মোটামোটি সত্য।

বাঁদী আমি খালাসীর সরাই'এ।

বাসন মাজার সাথে কাপড়ও

ধুতে হয়। বিছানার চাদরও

তোষক, বালিশ দিই বদলে।

বকশিসে কানাকড়ি দিলেও

হেসে “থেংক-ইউ” বলি তোমাদের।

যদিও তোমরা কেউ-ই জানোনা

বাঁদীর মুখোশ-পরা আমি কে।

টুটাফুটা শাড়ি, সায়া, ব্লাউজে

যদিও রয়েছি আমি আজকে,

তবে দেখে নিয়ো ঠিক, একদিন

রাত্রে জাহাজঘাটে, হল্লায়

তোমরা সবাই যাবে চমকে।

ভাববে হাসছে কেন মুচকি

সরাই'এর বাঁদী এই জেনীটা?

আট-পাল তুলে ঠিক সে জাহাজ

আসবে এ বন্দরে, আসবেই।


আট-পাল তোলা ওই জাহাজে

বন্দুকবাজ জনা পঞ্চাশ

দখল করবে এই দ্বীপটি।

আর আমি নোংরা এ সরাই'এর

যে জানালা সব চেয়ে উঁচু, তার

পাল্লায় হাটখোলা দাঁড়ালে

তোমরা ভাববে, কেন হাসছে

মুচকি মুচকি এই জেনীটা?


পলকে দেওয়াল গুলি, শহরের

গুঁড়ো হয়ে মিশে যাবে ধূলিতে —-

তবু এ সরাই ঠিকই থাকবে।

তোমরা ভাববে, কেন এখনো

এ সরাই ভাঙছে না এরা কেউ?

কার বাসা নোঙরা এ সরাই এ?

বন্দুকবাজ জনা পঞ্চাশ

গান গেয়ে রানী-অভিবাদনের

দেখবে এ গলী ধরে আসছে।


পরদিন ভোরবেলা, রাস্তায়

আমাকে রানীর সাজে সাজিয়ে

কাঁধে তুলে ওরা পথে নামলে

তোমরা দুচোখ তুলে কপালে

বলবেই: আরে, এটা কি হলো?

এ রানী সত্যি সেই জেনী কি?

আট-পাল তুলে ঠিক সে জাহাজ

আসবে, এ দ্বীপে ঠিক আসবেই।


একশো জোয়ান যুবা-খালাসী

তোলপাড় তুলবে এ শহরে।

সবাই কে বেঁধে নিয়ে শিকলে

আমার সামনে খাড়া করবে।

আমার পায়ের কাছে, মাটিতে,

টুপী খুলে জোয়ানরা বলবে:

“হুকুম করুন, কার খুলিতে

ফুটো করে দিতে হবে, বুলেটে”।

প্রবল দুপুরে পোড়া শহরে

সামান্য হেসে আমি বলবো:

“ ফুটো হোক সবগুলি খুলি-ই”।

প্রথম লাশটি গেলে গড়িয়ে

চুল খুলে দিয়ে আমি খিল খিল

বালিকার মতো হেসে উঠবো।


তারপর আট-পাল জাহাজের

বন্দুকধারীদের সর্দার

আমাকে কিনারে নিয়ে ভাসাবে

বিজয়ী জাহাজ নীল সাগরে।



আট-পাল তুলে ঠিক সে জাহাজ

আসবে, এ দ্বীপে ঠিক আসবেই।

হেসে নাও যতো পারো ততোদিন —-

জেনী ও পলি'কে নিয়ে তোমরা।

তবে জেনো সব-শেষ দৃশ্যে

আমাদেরই হাতে প্রাণ-ভোমরা।


সপ্তর্ষি বিশ্বাস

১৪।০১।২৪ —- ১৫।০১।২৪

ঘুম ঘর