“मेरे राम गाड़ी वाले”
একজন গাছ। শক্তসামর্থ একজন গাছ। অনেকদিনের গাছ। আপাতত জাতীয় সড়কের ধারের মাঠের মাঝামাঝি তার বাস। যদিও তার যখন জন্ম, তখন না ছিল জাতা-জাতি, না’ত সড়ক।
জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি যায়। হাওয়া গাড়ি। কখনো মানুষ যায়। যথা নিকটের চা বাগানের নিজস্ব পিওন। বাগানবাবুদের হুকুম-দাস। যায় সাইকেলে, আসে সাইকেলে। যায় জন গণনায় নাম না-থাকা, নাম কাটা যাওয়া মানুষ। পরিবার। কখনো একা। একলা। যায় ট্রাক। লরী। কার্ যায় —- নেচার-লাভারদিগের। যায় দিনে। যায় রাত্রে। আসে কিভহু কিছু আম-মানুষ। মাঠে। আসে গরু-ছাগল। – গাছকে দেখে সকলেই। গণনায় নাম না-থাকা, নাম কাটা যাওয়া মানুষ গাছ দেখে মাঠে নামে। জিরিয়ে নিতে। ভাবে, আহা অন্তত যদি জলসত্রও থাকতো একটি। ভাবে, কাঠকূটা, পাতালজা জিয়ে গড়া যায়কি ঘর, গাছ-ভরসায়? ভাবে, আবার এসে দেবে কেউ তুলে, তাড়িয়ে।
গাছ দেখে হাওয়া-গাড়ির নেচার-লাভার’রা। কেউ থামে, ফোটো নেয় “ওয়াও, এই খোলা মাঠে জাস্ট এ সিংগল ট্রি”। ভাবে এখানে একটা নেচার ক্যাফে হলে…। হাওয়া-গাড়ির শীতাতপে বসে গাছ দেখে লগ্নী-অলা। ভাবে লাগাবে। গাছে টাকা লাগাবে। কিন্তু কোন খাতে? কাঠ কারবারি ধরবে নাকি ক্যাফে কারবারী? না’কি একটা রিসোর্ট? গ্রাম থেকে তাড়া খেয়ে পালানো শিয়াল-কুত্তা’ও থামে গাছতলে। বৃষ্টিতে, রোদে। থামে। বিশ্রাম, আরাম পায়। কিচ্ছু ভাবে কি? কেজানে। ঠ্যাং তুলে মুতে দিয়ে গাছটিকে নিজের করে নিয়ে আবার দৌড়। খুচরো পদ্য লিখিয়ে বাস যেতে যেতে গাছ দেখে, দেখে দেখে উদাস। “আহা গাছ, ওহো গাছ” লিখে লিখে ভর্তি করে খাতা। সাইকেলযাত্রী পিওন-জন ভাবে ‘আহা, গাছ, আরো গাছ, রাস্তার ধারে ধারে, আরো আরো গাছ হ’লে এই রোদে, আসছে আষাড়ে, বিষ্টিতে …”। ইত্যাদি।
একজন গাছ। একজনই গাছ। তবু প্রত্যেকের চিন্তায় তার ছায়া ভিন্ন। ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতারও রয়েছে ভিত্তি। যে যার নিজের অবস্থান থেকে ভাবে। নিরাশ্রয়, ঘরহারা – আশ্রয়ের কথা ভাবে। ভাবে ‘জনতা’ লিস্টে নাম উঠবার ভাবনা। পাতাকুড়ানি মেয়ে ভাবে অনেক কিছু – ভাবে আরো পাতা ঝরলে ভালো হয়, ভাবে তার তো নেই রঙ্গিন ‘রিবন’, গাছে যদি ফুল হতো, চুলে গুঁজে নিতো। হাভাতে ভাবে ফল-গাছ হলে …। ‘জনতা লিস্টে’ নাম থাকা যারা, খেটে খায়, তারা ভাবে কিভাবে সামান্য আরাম, জিরানোর উপায় হতে পারে গাছটি। জনতা লিস্টের আত্রেকদল, যাদের “খাঁটা” মানে, নিম্নে করণিক, উচ্চে ‘আইটি-প্রো’ – তারাই ‘নেচার লাভার’, খুচরা পাদ্যিক, আড্ডার দ্য ভিঞ্চি – ইত্যাদি। এদের ভাবনা ভাসমান। অদ্য ‘ক্যাফে’ ভাবলে, কল্য ‘রিসোর্ট’। যখন যেমন বলছে টিভি-এড, বলছে ফে-বু, বলছে হোয়াটসেপ বিশ্ব বিদ্যালয়। লগ্নীওলা’র ভাবনা স্থিল। লাভ। আরো লাভ। আরো আরো লাভ। মুনাফা। আর ওইজনের ভাবনাতেই শুধু, গাছটিকে ধ্বংসের বীজ – ক্যাফে, রিসর্ট, গুদাম কিংবা গাছ কেটে বিক্রি।
[ https://en.wikipedia.org/wiki/Pyramid_of_Capitalist_System]
যে যার নিজের অবস্থান থেকে ভাবে। এই অবস্থান কি তার নিজের, একা’র অবস্থান? না এবং হ্যাঁ। – কেরানিগিরি, পোবেসারগিরি,আইটিগিরি’র ইত্যাকার ‘গিরি’ যারা করে, তাদের ভাবনা দৌড়ের আর প্রান্ত যেখানেই যাক, এক প্রান্ত কিন্তু ঐ ‘গিরি’তে বাঁধা। তাদের ভাবনাও তা’ই। লগ্নীকারের যেমন। ‘অটোমেশন’ এর নাম করে কর্মী ছাঁটাই করনেওলা এক লগ্নীওলা বলে “অটোমেশন উইথ হিউম্যানিটি”, আরেকটি বলে হপ্তায় ৭x১৭ ঘন্টা খাটাতে হবে ‘লেবার’ দিগকে। এখানে তারা ‘ভিন্ন’। কিন্তু অন্তিমে লাভ আর মুনাফাতেই তারা বাঁধা। এইবার ‘তারা’ শব্দটিকে লক্ষ্য করা উচিত। ‘তারা’ কারা? তারা ভালো মানুষ - মন্দ মানুষ? না। তারা শ্রেণী। তারা হয় টাকা খাটায় নইলে টাকার জন্য খাটে। টাকা খাটানেওলা আর টাকার জন্য খাটনেওয়ালার মধ্যে সাধারন ভাবে যে সকল শ্রেণী থাকে, তাদের মধ্যেও, মধ্যে-মধ্যেও থেকে যায় আরো কিছু শ্রেণী। তবে এসব তাদের তাদের সাপেক্ষেই সত্য যাদের “খাঁটা” বলতে কেরানিগিরি থেকে আইটি-প্রো গিরি। এর নিচে, যাদের দিন আনা, দিন খাওয়া, যাদের দিন না-আনা, না খাওয়া, না খেতে খেতে খেতে মরে যাওয়া, তাদের শ্রেনী অনেক সহজবোধ্য।
বর্তমান লেখকও যেহেতু তাদেরই একজন, যাদের “খাঁটা” বলতে কেরানিগিরি থেকে আইটি-প্রো গিরি, অতএব খুব মহৎ, গভীর অথবা যারা টাকা খাটায় আর টাকা খাটানেওলাদের যে যন্ত্র, যাকে রাষ্ট্র বলে, তার চরিত্র বিষয়ে খুব বিপজ্জনক কিছু বলবার হিম্মৎ তার নেই। যে মোদ্দা কথাটি বলবার নিমিত্ত লিখতে বসা, সে’ও নয় খুব কিছু নতুন। কথাটি এই, যে, প্রতিটি বস্তু –খাদ্য টু আধ্যাত্ম – বিষয়ে মানুষের ধারনার ভিত্তি শ্রেণী এবং শ্রেণীর নিরিখে তার নিজস্ব অবস্থান। “जरा धीरे धीरे गाड़ी हांको, मेरे राम गाड़ी वाले” কবিতায়/গানে “রাম” শব্দ, কবীরে, যে অর্থে উচ্চারিত তার সঙ্গে “মন্দির এহি বানায়েঙ্গে”র “রাম” অলা দিগের “রাম” ভিন্ন – ভিন্ন প্রাথমিক ভাবে শ্রেণী অবস্থানের ভিত্তিতে, দ্বিতীয়ত বিশেষ শ্রেণীর ভিতরে থেকেও সে নিজে একজন আলগা মানুষ, তার ভিত্তিতেও। যেহেতু এই দেশে শ্রেণী আর জাত, জাতপাত পালন করে এসেছে, অদ্যাপি পালন করে চলেছে – একই ভূমিকা, যলে, শ্রেণী অবস্থান আর জাত-অবস্থান এখানে জড়াজড়ি। যে ‘জাত’ ভিত্তিতে কবীরের জন্ম, তা না হয়ে, ভিন্ন জাতে জন্মালে, যে ‘জাত’ – জোলা কিংবা মুচি কিংবা ‘উচ্চ’ জাতদিগের দ্বারা নির্যাতিত নয়, তেমন জাতে জন্মালে, নিশ্চিত কবীরের ‘রাম’ উচ্চারণ ভিন্ন অর্থ বহন করতো।
মনে এলো, জেলে লেখা নোটবুকে গ্রামসী লিখেছিলেনঃ “Every religion, even Catholicism (...), is in reality a multiplicity of distinct and often contradictory religions: there is one Catholicism for the peasants, one for the petits-bourgeois and town workers, one for women, and one for intellectuals which is itself variegated and disconnected.” –
কবীরের কবিতাটিঃ
जरा धीरे धीरे गाड़ी हांको,
मेरे राम गाड़ी वाले,
जरा हलके गाड़ी हांको,
मेरे राम गाड़ी वाले,
जरा हौले हौले गाड़ी हांको,
मेरे राम गाड़ी वाले।।
है जी गाड़ी म्हारी रंग रंगीली,
पहिया है लाल गुलाल,
गाड़ी म्हारी रंग रंगीली,
पहिया है लाल गुलाल,
हाकण वाली छेल छबीली,
बैठण वालो राम,
रे भैया धीरे धीरे गाड़ी हांको,
मेरे राम गाड़ी वाले।।