“একটি কোঠাবাড়ির ইতিহাস”
[ শ্রী অপূর্ব কুমার
পাল, শ্রীমতী মুক্তি পাল ও লিংক রোড ১২ নম্বর গলীর সেই বাড়িটিকে...]
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
সে বাড়িতে রাজকন্যা
মুক্তামালা ছিল,
ছিল তার মন্ত্রপূতঃ
অনেক মার্জারী,
খিড়কি পুকুরে
ছিল মাছ, সাপ, শ্যাওলা আর স্মৃতি ...
সুমিত্রা দাসীটি
ছিল ছিটগ্রস্থ, রোগা,
উঠানটি জুড়ে
ছিল গাছ পাখি ফুল ঘাস পাতা ...
দুপুরে জানালা
খুলে
রাজকন্যা চেয়ে
থাকতো রাখালের পথে –
বান্ধবীরা যেতে
যেতে ডেকে যেতো তবু
রাখালের পত্র
পেলে রাজকন্যা কলেজে যেতোনা ...
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
সে বাড়িটি দুই
বুড়োবুড়ি –যদিও তখন তারা বুড়োবুড়ি ছিলোনা মোটেই
–
–গড়েছিল – তিলে তিলে –ধারদেনা করে,
দুইটি নারকোল
গাছ, বাড়ির শিয়রে, রুয়েছিল এই কথা ভেবে
একদিন বড় হয়ে
জীবনের গ্রীষ্মদিনে তারা
উত্তরপুরুষকে
দেবে ছায়া ও আশ্রয় ...
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
সে বাড়িতে এক
ঝড়ো রাতে
দেখেছিল রাখাল
কি’করে
মুক্তামালা নদী
হতে পারে ...
সাতটি সমুদ্র
আর তেরোটি বছরে
রাখাল সে নদী
আর পারেনি পেরোতে ...
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
একটি কোঠায় তার
কেরোসিন কাঠের সিন্দুকে
রাশি রাশি অক্ষর
আর ছবি
মুক্তামালা রেখেছিল
গোপনে জমিয়ে –
যদিও উই’এর খাদ্য
ঢের আগে হয়েগেছে তারা
তবুও “রয়েছে”
এই গহন বিশ্বাসে
রাখাল ও রাজকন্যা
আজো
স্বপ্নে দেখে
সেসব অক্ষর –
মনেপড়ে উঠানে
বিকালে
রাখাল আর রাজকন্যা
মিলে
বাঁশের কঞ্চি
দিয়ে
গড়েছিল ছোটো
খেলাঘর ...
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
বারান্দার কোনে
তার বড় কোঠাটিতে
শীতের সকালবেলা
রাজকন্যা গান গেয়েছিল,
গেয়েছিলঃ ‘দীপ
নিভে গেছে...’ –
নিভেগেছে ‘নিশীথ
সমীরে’ –
বারান্দায় দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে
রাখাল সে গান
শুনে চুপে
লিখে রেখেছিল
কিছু
পিছনের কোঠার
দেওয়ালে ...
যে বাড়িটি বিক্রি
হয়ে যাবে
প্রতিটি কোঠায়
তার প্রতিটি দেওয়ালে
বাগানে পুকুরপারে
জলে ঝোপে ঝাড়ে
আরো কতো গুপ্তধন
ছিল
তাদের ঠিকানা
শুধু
মৃত সে রাখাল
আর
মৃত সেই মুক্তামালা
জানে ...
আমরা শহরবাসী
চিঠি পেয়ে এটুকু জেনেছি
এ বাড়িটি অচিরেই
বিক্রি হয়ে যাবে।
১৩/১১/২০১২
দীপাবলী