প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Sunday, March 10, 2013

নিজস্ব ধ্রুপদযাত্রা - প্রথম পর্ব্ব



                    নিজস্ব ধ্রুপদযাত্রা
সপ্তর্ষি বিশ্বাস

























শেখর ভট্টাচার্য কে










১।

গভীরে দাওনি চোখ,

যতো চোখ সকলি বাহির –

এ যদি শাস্তি তবে

পুরস্কারে স্থির

তারাটি রেখেছো কেন

গভীরে, আঁধারে?







২।

বিতত তোমার জালে বাঁধা আছি, হে বিরাট জেলে,

রূপ রস গন্ধ শব্দ স্পর্শ মৈথুনে

দেখেছি শীতল চোখ। জাগরণ,স্বপ্ন এই উভয় বলয়ে

তবে কী সকল ছবি ছদ্মনামে তোমারি নির্মাণ?



সকল তর্কের শেষে  সে কোন মৎস্যের গর্ভে

লুক্কায়িত আছে আজো শেষ অভিজ্ঞান?





৩।

তোমার শিবির, গুহা, স্মৃতি আর ব্যর্থতার কথা

এখনো জানিনি বলে কানপাতি অন্তর্গত জলের অতলে,

নিজস্ব অরণ্য গর্ভে নিজ অস্থি নিজেই জ্বালিয়ে

হোম জ্বালি। পুড়ে যাই নিজেরি আলোতে।



জলেরো পূর্বে জাত অশ্বারোহী তুমি

তুখোর খুনীর মতো প্রতিটি প্রমান

নিজ হাতে লোপ করো পরের প্রভাতে?





৪।

জলেরো পূর্বে জাত অশ্বারোহী তুমি

ছুটে গেলে অন্ধকারে, চক্রবাল ছিঁড়ে –

পথিক জ্বাল্‌লো বাতি, শিকারী মশাল,

বৃদ্ধা দাওয়াতে এলো কূপী হাতে নিয়ে –

অবিশ্বাসী ঊর্ণাজাল বুনে গেলো, আর

বিশ্বাসী প্রণাম করলো নতজানু হয়ে।

রাত্রির সূচীভেদ্য একই অন্ধকার

আলো হলো নিজ নিজ বাতির বলয়ে ...



তোমার যাত্রার পথ এভাবেই উদ্ভাসিত

নানাবিধ এইসব বর্তিকাকে ছুঁয়ে।।





৫।

মধুভোজি, জানো সব গোপন কাহিনী?

তাই বুঝি প্রশ্নগুলি পার হয়ে তুমি

পুষ্প থেকে পুষ্পে উড়ে

মিশে যাও ধূলায়, পরাগে?



চাঁদের ছায়াতে চাঁদ

ঐ পথে একা চেয়ে থাকে?



৬।

যে আগুন জ্যোতিষ্কের মতো

জ্বলে যায় কোনো ধূম ছাড়া

তুমি তাতে রয়েছো নিহিত?

অশ্বারোহী, শুনেছি বারতা

তোমার স্মৃতিতে লেখা আছে

আমাদের সব চুপ, কথা –

















৭।

দুর্গম পর্বত থেকে বৃষ্টি হয়ে নেমে এলে তুমি,

পার হলে ঘাস, ফুল, কীট, বনভূমি –

মিশে গেলে খালে বিলে নদীতে পুকুরে,

যে যার নিজের মতো করে

লিখে নিলো এই বৃষ্টি, মেঘের কাহিনী –

ভুলে গেলো পরের শ্রাবনে,



মরুগর্ভে শুধু এক পাথর ভোলেনি ...



৮।

উর্ধ্বে মূল, নিচে শাখা

আরো নিচে পরাগ আর ফুলের সংসার, হে অশত্থ,

অমর এই আঁধারে একাকী

পদশব্দ শোনো তুমি কার?



উর্দ্ধশাখা বৃক্ষ ছায়াতলে

জানো তুমি কেন ভিড়?

কেন এই শিকড়

                         বিস্তার








সুস্থির অবিশ্বাস দাও,

অন্যথায় প্রগাঢ় বিশ্বাসে

মেষ করো, তুমি, হে রাখাল,

অস্থিরতা আমি আর ঘুমঘোরে সহিতে পারিনা –

হয় তুমি ধ্বংস হয়ে লিখে দাও পথ,

নাহলে নির্ণয় করো

আমার ধ্বংসের সব সীমা।।



১০

লিখিবার কথা গুলি যেন বা আলোক,

সরল রেখায় যেতে

বেঁকে যায় সাংঘাতিক টানে, বিকিরণে –

ফলতঃ স্থগিত থাকে

পারাপার, ডাকবাক্স, চিঠি ...



অবিশ্বাস না’কি কোনো বিশ্বাসের দমকা বাতাসে

শুক্‌নো ঘাসের মতো আমি কেঁপে উঠি?











১১।

অন্ন প্রজাপতি, অন্ন বীজ।

শস্য প্রজাপতি, শস্য জীব।

অন্ন প্রজাপতি, অন্ন গীত।

শস্য প্রজাপতি, শস্য শিব।



অন্ন মাতামহী, অন্ন ব্রহ্ম।

শস্য ওম্‌কার, মাটি প্রসন্ন

অন্ন দান করে, তবুও স্তন্য

শুষ্ক যে মাতার তাহারি জন্য

চলো হে লুঠে আনি ক্ষুধার অন্ন –



মাতা যে অনাহারে, তাইতো মহাকাল

শ্লোকের কারাগারে আজ বিপন্ন।।

























১২।

হে প্রাণ, রহস্যে প্রধান,

যতোক্ষন তুমি আছো, গান

বেজে চলে মধুচক্রে, চুপে –



তোমার প্রমাণ।



তুমি গেলে মধুকর গুলি

তোমার ছায়াতে ধাবমান।



আমি শব। থেমে গেলে গান –



১৩।

তুমি প্রাণ, তুমি ব্রাত্য, তুমিই পতিত,

প্রথম ব্রাহ্মণ তবু কোনো উপবীত

তোমার কখনো নেই, তবু মহাকাশ

তোমারি চলার পথ, এই মহানীল

তোমার স্বভূমি, তবু

তুমি ব্রাত্য, এখনো পতিত

নিজহাতে ছিঁড়ে ফেলে

মৃত্যুশীল নষ্ট উপবীত।





১৪।

ঘুমের কিনারে শুয়ে

হে প্রাণ, তোমার নিদ্রার কথা ভাবি,

উদান, অভীষ্ট ফল, স্বপ্নের সমূহ পাখিকে

ঘুমঘোরে নিয়ে গেলে উর্দ্ধমূল অশ্বত্থের কাছে

স্বপ্নহীন নিদ্রা নামে –

সুপ্তি, সুষুপ্তি নামে কামে ক্রোধে পাপে ...

সুষুপ্তির গর্ভগৃহে বেজে ওঠে গান,

সুর কথা তাল ছন্দ মুছে

বেজে চলে গান –



গান, গান শুধু গান –

সুষুপ্তিতে স্বপ্নহীন শান্ত হয় প্রাণ।























১৫।

মহাস্ত্র স্বরূপ তুমি, তাই

তোমাকে স্মরণ করে

আপনাকে করেছি শাণিত,

এইবার প্রয়োগের পালা –

 –মহাস্ত্রের, তাই

এই রইলো ভিক্ষাপাত্র, ফলমূল, কবচ কুন্ডল –

এই শর দিনেরাত্রে স্মরণে শাণিত –

ধনুকের ছিলা টান্‌ টান্‌ --

তুমিই লক্ষ্য, স্থির, তুমিই অ-মৃত।।








ঘুম ঘর