ইয়েতিয় কবিতাবলী
১।
বরফে পায়ের ছাপ দেখে
পাহাড়ি বালক ছুটে গিয়ে
ডেকে আনে বুড়ো ঠাকুর্দাকে –
‘ইয়েতি’ ‘ইয়েতি’ বলে
বালকের মুগ্ধ হাততালি
পাহাড়ের ওপারে মিলালে
সেই পদছাপটির কাছে
ঠাকুর্দা প্রণামে নত হলে
বালকের ছায়া চোখে
নেমে আসে সবাক বিস্ময় ...
ক্রমশঃ খবর পেয়ে
সারাগ্রাম দলবেঁধে উঠে আসে আর
পেছনে ক্যামেরা কাঁধে
সাংবাদিক, প্রত্নতত্ত্ববীদ –
এদের চিহ্ন দেখে ঠাকুর্দা ও নাতি
‘ইয়েতি’ না ‘ঈশ্বর’ এই প্রশ্ন পেরিয়ে
নেমে যায় ভিন্পথে, নিজেদের ঘরে –
ঈশ্বর ও ইয়েতি ছাড়া
তাদের আর কেউ নেই বলে
সন্ধ্যা হলে তারা জাগে
তাদের শিয়রে।
২।
ইয়েতি কি ঈশ্বরের ছদ্মবেশ? না’কি
ইয়েতি’ই ঈশ্বরের ছদ্মবেশ ধরে
পদছাপ রেখেযায়
সবার গহনে জাগা
তুষার পাহাড়ে মাঝে মাঝে?
সকলেই কোনোদিন কিছুদূর পাহাড়ে উঠেছে –
সকলেই কোনোদিন কোনো ঘাস, পাথরের বুকে
দেখেছে পায়ের ছাপ – সুবিশাল – তবে –
অনেকেই ভয়ে কিংবা অন্য ভাবনাতে
নেমেছে পাহাড় থেকে – ফের – ঢালুপথে –
তারমধ্যে একজন –
বড়জোর কয়েকজন হবে –
পাথরে পায়ের ছাপ দেখে
তারপর আমরন
ইয়েতি না ঈশ্বরের মতো
একাকী পাহাড়ে রয়েগেছে ...
৩।
ইয়েতির গল্প শুনে ঠাকুমার মুখে
একটি বালক ভয়ে ভয়ে
লেপ দিয়ে চোখমুখ ঢেকে
অকাতরে ঘুমিয়ে পড়েছে ...
তার ভাই, একই গল্প শুনে
ঠাকুমা ঘুমালে পরে জানালার ফাঁকে
দুচোখ ঠেকিয়ে দূরে
অনেক বছর ধরে দেখেছে বরফ ...
ইয়েতির পদছাপ ক্রমে
ঢেকে গেলে লতাগুল্মে, পাতায়, বরফে
দুইভাই বরফের তলে
ইয়েতিকে ভুলে গিয়ে
অকাতরে ঘুমিয়ে পড়েছে ...
কফিনের ফাঁকে চোখ রেখে
এখন দুজনে একসাথে
চেয়ে দেখে
ইয়েতি ও বরফ পেরিয়ে
ঠাকুমা নিকটে আসে, রাতে -
৪।
মাঝে মাঝে ইয়েতির মতো
তোমাদের গ্রামে নেমে আসি।
এসে দেখি
দরজায় খিল তুলে দিয়ে
তোমরা সকলে ঘুমে –
অতএব কথা আর উপহারগুলি
নিয়ে একা
ফিরি ফের নিজের গুহাতে ...
সকালে পায়ের ছাপ দেখে
কেউ আরো অস্ত্র আনে, কেউ
পশুপাখি বলী দেয়
ইয়েতির নামে –
তবুও দিনের বেলা আমি
কিছুতে পারিনা আসতে
তোমাদের গ্রামে ...
৫।
ইয়েতির মৃত্যু নেই,
তাই কোনো শবদেহ নেই –
তেমন প্রমাণও কিছু নেই,
অতএব, ইয়েতির জীবিত থাকার –
তাই বুঝি মাঝে মাঝে রাতে
ভীষণ উতলা হয়ে তারা
মানুষের কাছ থেকে
মৃত্যুশিল্পে দীক্ষা নিতে আসে?
মানুষ জানেনা, তাই
ভীত হয় কূটিল বিশ্বাসে ...
[ কবি বন্ধু অনির্বান বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার অনন্য ছায়াছবি ‘ইয়েতির
খোঁজে’ কে -]