সময়ের নদীর শিয়রে
১।
উন্মত্ত নগরী এই
গুন্ গুন্ বেজে চলে
সারারাত নিদ্রাহীন আমার শোণিতে –
নগরীর প্রেতপ্রান্তে
লক্ষ্যহীন এরোপ্লেন, ট্রাম-বাস, বিগড়ে যাওয়া লরী
ঝাঁপ ফেলবার আগে গণিকার শেষ খরিদ্দার
আমাকে ইঙ্গিতে বলে নিশুত কাহিনী –
নক্ষত্রের গুপ্ত ইশারাতে
ব্যক্ত হলে স্বর আর ব্যঞ্জনের রীতি
নগরীর যোনিমূলে
আমি খেলি একা কানামাছি –
মাতাল অক্ষরগুলি এলোমেলো হেঁটে যেতে যেতে
অকস্মাৎ লুপ্ত হয় – ফুটপাথে, খোলা ম্যান্হোলে ...
নদীগুলি লক্ষ্যহীন মানচিত্র ধরে
উড়ে গিয়ে ফিরে আসে মুহুর্মুহু আমার শোণিতে ...
সঙ্গে আসে নগরীর সমূহ মর্মর মূর্ত্তি, প্রাসাদ, ফোয়ারা –
আমার শোণিতে তারা
ডুবে যায় আশ্রয়ের খোঁজে ...
২।
যে শোণিত শোণিতের মতো
আসে যায় মুহুর্মুহু আমার শিরাতে
তাকে, আর সময়ের অন্তর্গত একটি অনুকে
স্তব্ধ করে অনন্তকে ছুঁয়ে দেবে বলে
বোধিবৃক্ষতলে বসা তথাগত হেন
একটি লহমা জাগে আমার অতলে –
রাত্রিমথিত শ্বাস ভেসে যায়
অনাগত
মুহুর্তের চক্রবাল ছুঁয়ে ...
৩।
রচনার মধ্যপথে হঠাৎই আমাকে
গিলে ফেলে একচক্ষু এক বিপন্নতা,
আমাকে ত্যাজ্য করে উড়ে যায় স্মৃতি ও পাখিরা –
জন্মান্তরে গোয়েন্দার মতো
পিছু নেওয়া সেই দুটি চোখও
তখনি তলিয়ে যায়
সামুদ্রিক দেবীদের মতো ...
লেখনীর ধর্মঘটে মুছেযায় আরম্ভ ও সমাপ্তির সমূহ কম্পাস –
পেরিয়ে যাওয়ার মতো প্রতিটি দেওয়ালও
ভেসে যায় কেজানে কোথায় -
ধ্বনিহীন প্রতিধ্বনি ভাঙ্গে
সময়ের ঘুম
নীরবতা –
সময়ের ঘুম
নীরবতা –
পথের বিবিক্ত মোড় প্রকৃতার্থে প্রতিটি কবিতা...
৪।
লেখার প্রতিটি পৃষ্ঠা
ভরে যায় নক্ষত্রের ছায়া ও ছবিতে
জেগে ওঠে শ্যাওলা ঢাকা
শব্দদের নিবিড় বনানী –
লিখি তবে মীনার, প্রাসাদ, দুর্গ, সমুদ্রের কথা?
উচ্চারিত শব্দগুলি
উচ্চারিত হয়না কিছুতে
যা কিছু অব্যক্ত
তার মাত্রা নীরবতা ...
৫।
কেবলি শোণিত ছাড়া
শোণিতের এ পারাপার ছাড়া
কবিতার যোনিমূলে
পুনঃপৌনিকের মতো
ব্যবহৃত শব্দগুলি ছাড়া
আছে কি বলার কিছু কারো?
সময়ের হৃত মাত্রা আসে যায় শোণিতের প্রগাঢ় আঁধারে-
আমিও মাঝির মতো ভেসে যাই লক্ষ্যহীন এই পারাপারে...
৬।
হে অক্ষর
পরাজিত সেনাপতি হেন
স্থির হও
সমূহ বর্ম বর্শা পরিত্যাগ করে
একটি যতির মতো
তারা হও সময়ের নদীর শিয়রে ...
[Octavio Paz এর The River এর ছায়াতে]