রবিন্সন্ ক্রুশোর ডায়েরী
১।
সকাল
অন্তহীন বেলাভূমি জুড়ে
স্বরলিপি লিখেরাখে ঢেউ –
ঢেউ এর পাতাল থেকে সূর্য ওঠে
ফিরে যায়
নিজের অতলে।
এ ছবি দেখে না কেউ, আসেনা
এখানে –
পরিখাবিহীন এক বিরাট কেল্লাতে
এইখানে রাজ্যপাট যাঁর
তাঁকে ঘিরে থাকে শুধু
নুলিয়ার শিশু আর
বহুযুগ আগে মৃত দুঃসাহসী
নাবিক ও কাপ্তেন।
আমার শৈশব থেকে খোয়া যাওয়া
ঘুড়ি ও লাটাই,
সাদাকালো গ্রুপফটো, টার্জানের
বই আর পূজাসংখ্যা গুলি
দেখি তাঁর তাকে আমি যত্নে সাজানো ...
প্রত্যেক সকালে তিনি
বিস্কুটের গুঁড়ো হাতে
হাঁক দেন ‘আয় – আয় – আয়’ –
দিগন্তের অন্য পার থেকে
উড়ে আসে শঙ্খচিল, পারাবত, শালিক,
মনিয়া ...
কখনো সবিতামাসী তাঁকে এসে
দিয়ে যায়
চুপি চুপি জর্দা পান, সুপুরীর
থালি –
পুনরায় বেলাভূমি জুড়ে স্বরলিপি লিখেরাখে ঢেউ –
ঢেউ এর পাতাল থেকে সূর্য ওঠে
ফিরে যায়
নিজের অতলে।
এ ছবি দেখে না কেউ, আসেনা
এখানে –
২।
দুপুর
সোমা দিদি স্নান করে সমুদ্রের
জলে ।
চোলি ও ঘাঘরা আগ্লে বসে থাকে
তারাপদ একা –
নুলিয়ার ছেলে গুলি
হাত দিয়ে কাঁকরা তুলে এনে
সোমাদির পিঠে দিলে সোমাদিদি
জলকন্যা হয়ে
গেয়েওঠে সেই গান গুলি
যে গুলি দুপুর বেলা একটা বেজে
দশ মিনিট হলে
রেডিওতে প্রচারিত হয়েছে একদা
...
...
তারপর সব চুপ।
তাঁর ঘুমে বিঘ্ন হবে জেনে
আছড়ে পড়েনা ঢেউ বালির শরীরে,
শুধু শাদা শঙ্খচিল গুলি
ফেনায় ফেনায় ওড়ে ফেননীভ ডানা
মেলে দিয়ে ...
তারপর অন্তহীন বেলাভূমি জুড়ে
স্বরলিপি লিখেরাখে ঢেউ –
ঢেউ এর অতল থেকে সূর্য্যোদয়
আর
ঢেউ এর আড়ালে তাঁর অস্ত যাওয়া রোজ ...
এ ছবি দেখে না কেউ, আসেনা
এখানে –
আমাকে ডাকেনি কেউ, থাকতেও
বলেনি অথচ
আমি নিজে পথ ভুলে এসেছি এ
দেশে
পার হয়ে জলে ডোবা পথ আর
ঝোপঝাড় গুলি ...
আমাকে ডাকেনি কেউ, থাকতেও
বলেনি অথচ
কিকরে একটি কোঠা, দুর্গের
দক্ষিণের দিকে
আমার হয়েছে ...
সন্ধ্যা
এখানে মন্দির নেই কোনোখানে
তবু
কোথায় যে শাঁখ বাজে, উলুধ্বনি
আসে –
ধূপের গন্ধে ভেসে ফিরে আসে
ঠাকুরমা’র ঝুলি ...
নীল-লাল ছাপা শাড়ি পরে
সোমাদিদি ঘরে আসে চা’এর
পেয়ালা নিয়ে হাতে ...
২।
কখনো সকালগুলি ঢেকে থাকে গাঢ়
কালো মেঘে –
তখন অবাধ্য ঢেউ তাঁর কথা
কানেও না তুলে
ছুটে এসে ছুঁয়ে দেয় কেল্লার
সিঁড়ি ও ফটক –
অলৌকিক বল্লমের মতো
বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয়
বিস্কুটের গুঁড়ো হাতে
তাঁর বাহু, তাঁর অবয়ব –
খড়খড়ি ফাঁক করে আমি
দেখি তাঁর এই ভিজে যাওয়া –
টেরপাই পথে পথে নদী-নালা গুলি
এখনই সোমত্থ হয়ে বুকে টেনে
নেবে সব ঝোপঝাড়, ভিটে ও বাজার –
এখন নৌকা করে চলাচল শুরু হবে
মধ্যরাতে, বৃষ্টি থেমে গেলে –
মেঘের শরীর থেকে নতুন অক্ষর
খুঁজে নিয়ে তৃপ্ত হয়ে তিনি
সাগরে যাবেন একা রাত্রি গাঢ়
হলে –
তাঁর ঐ গমনের দিকে চেয়ে থেকে
মনেহয় তিনিও কি জানেন সঠিক
কবে আমি কোন পথে এদেশে এসেছি
কতোদিন পরে আমি কোন্ পথ ধরে
অন্য কোন্ দেশে যাবো –
অথবা সাগরে? ...
মেঘের দিবসগুলি এই প্রশ্নে
ভেসে যায় আর
কেবল ঘুমের ঘোরে, বৃষ্টিঝরা
রাতে
শুনি তিনি কি এক ভাষাতে
ঢেউ’কে শোনান গল্প
নুলিয়ার হারানো মেয়ের...
বিদ্যুৎ-চমকে দেখি
রাতে তাঁর দরজা হাট খোলা –
রাতে তাঁর দরজা হাট খোলা –
আদিলেখনঃ
৮.০১.২০১২