স্বধর্ম,
বিধর্ম, না-ধর্ম
Ganster ছবিগুলি Godfather থেকে Goodfellas,
Meansteet, Scarface - ইত্যাদি, এদের অপূর্ব নির্মাণশৈলী ছাড়াও এদের মধ্যে যে আরেকটি
উপকরণ আমাকে এবং সম্ভবতঃ অন্য দর্শককেও, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে,ছবিগুলিরপ্রতি আকৃষ্ট করে, তা এই,
যে, এদের নিজের Clan
বা গোষ্ঠির প্রতি
এই 'মাফিয়া' বা 'ডন' দের কর্তব্যবোধ এবং ভালবাসা - ভালবাসা যা কর্তব্যবোধেরই নামান্তর।
ভারতীয় ছবিতে সুধীর মিশ্রা'র 'ইস রাত কি সুবহ নেহি' থেকে রামগোপালের "সত্যা',
কোম্পানী হয়ে অনুরাগ কাশ্যপের কিংবদন্তী 'গেংস অফ বাসিপুর'এ'ও ছায়াফেলে এই বাস্তব।
- নিজ "গোষ্ঠী" যা শুধুমাত্র তাদের আত্মিয় পরিজন নয়, যা তাদের দলের নানা
স্তরে কাজ করা নানান মানুষ - তাদের প্রত্যেকের প্রতি এই 'মাফিয়া' দের দায়িত্ববোধ মাফিয়া
নিয়ে ছবির, বাস্তব মাফিয়া যাপনের সত্য।
নিহ
গোষ্ঠী বা clan এর সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্ত 'গড ফাদার'ভিটো
কর্লিয়নি থেকে থেকে হালের
"মালিক ভাই" - কেউই পিছপা হয়না প্রতিপক্ষের ক্ষতি সাধনে। তথাপি তাদের কে
যে নিতান্ত "ক্রিমিন্যাল" বলেও মনে হয়না তার হেতুটি হয়তো এই, যে, বর্ণাশ্রম
ভারতে যেমন স্পষ্ট ছিল অন্যত্র তা তেমন না হলেও বৃত্তির ভিত্তিতে গোষ্টী বা সমাজের
স্তরভাগ সর্বত্র বাস্তব। ফলে কৃষ্ণ যখন অর্জুনকে "স্বধর্ম" ও "পরধর্মের"
কাহন শোনায়, বলে , স্বধর্ম অবলম্বন করে নিধন হওয়াও পরধর্ম গ্রহণের চেয়ে "বেহ্তর্"
- তখন কৃষ্ণ "ধর্ম" বলতে যা বোঝায় তা অর্জুনের ক্ষাত্রধর্ম এবং যা অবশ্যই
বৃত্তি ভিত্তিক। অর্থাৎ এর সঙ্গে "ধর্ম" শব্দের অন্তর্গত আধ্যাত্মিকতার
কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে Clan "বৃত্তি"ই শেষ কথা, তার রক্ষাই শেষকথা।
অপর Clan এর পরাজয়, যেন তেন প্রকারে, এখানে
একমাত্র "মক্সদ্" বা "উশুল" - যা অনাদিকালের "সৈন্য"
নামধেয়দের মগজে খোদাই করে দেওয়া হচ্ছে আপ্তবাক্য বলে।- আর বৃত্তিভিত্তিক এই গোষ্ঠী
চেতনা, যেহেতু, ঐতিহাসিক ভাবে, আমাদের শিরায়, রক্তে বিধৃত হতে হতে, ক্রমে, আমাদের ডিএনএ'তে
মিশে গেছে। কৃষ্ণ'র মুখ দিয়ে তথাকালীন Clan অধিপতিরা কথাটি বলিয়ে
নিয়েছে খুবই কায়দায়, খুবই কাব্যিক ভাবে। ওই উচ্চারণে কোনো "ধর্ম" নেই যা
একটি ব্যক্তির অন্তর্গত নিজ ধর্ম, যে ধর্মের তাড়নায় সাময়িক হলেও অর্জুনের যুদ্ধে বিরাগ।
নিশ্চিত ওই বিরাগ, ওই প্রশ্ন তৎকালে কোনো একজন বা অনেকজনের মর্মে ও বাক্যে
উচ্চারিত হয়েছিল। হয়তোবা অনূদিত হয়েছিল কর্মেও। সুতরাং এর প্রতিপক্ষে ধর্মীয়
অকাট্যতার আমদানীর প্রয়োজনেই এই অর্হুন-বিষাদ এবং ক্রমে ওই বিষাদের পিন্ডি চটকিয়ে
অর্জুন ফের "বাহুবলী", "এক থা টাইগার" ...
বৃত্তিভিত্তিক
গোষ্ঠীর আচার কোনো ধর্ম নয়। ধর্ম এক একটি মানুষের নিতান্ত নিজস্ব তার নির্মীত নিজ
দেবতার আশ্রয়ে। সেই ধর্মও, নিতান্ত জড়বুদ্ধিভিন্ন কারোরই ধ্রুবসত্য নয়। নরহত্যার সপক্ষে যে রায় ছিল রাস্কলনিকভের
"স্বধর্ম" হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করবার পূর্বে ও পরেও তা'ই ক্রমে ভিন্ন
ধর্মে পরিণত হল তার অভিজ্ঞতার, অনুভুতির নিরিখে ( ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট্)।
লেভিনের স্বধর্ম টি ঠিক কি তারই নির্ধারনের চেষ্টা 'আনা কারেনিনা' উপন্যাসের একটি
মাত্রা, একটি চক্রবাল। আনা কারেনিনা বা ভ্রন্স্কি'র মর্মধর্ম আবহের চালচিত্রের
নিরিখে পরিবর্তিত হতে হতে অবশেষে আনা ঝাঁপায় রেলগাড়ির চাকার তলায় আর ভ্রন্স্কিও,
প্রায় আত্মহত্যারই নামান্তরে চলেযায় এমন এক যুদ্ধে যোগ দিতে যা উপন্যাসের
মধ্যপর্বেও ছিল তার মর্মধর্ম বিরোধী।
ইউরোপের
অস্তিত্ব্ববাদের যে মূলসূত্র আমি টের পেয়েছি - যা কিয়ার্কেগার্ড থেকে সার্ত্রে
পর্যন্ত বহমান তা বৃত্তিভিত্তির "স্বধর্ম" কে পার হয়ে, চার্চ, মশজিদ,
গীর্জা, আশ্রমের গোষ্ঠি'র 'দেবতা'কে পারহয়ে বলে একলা এক নিহিত ঈশ্বরের কথা - যা
প্রতিটি মানুষের নিরিখে ভিন্ন, প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহুর্তের নিরিখে ভিন্ন।
যা আমাকে এই বলে, যে, জড়বুদ্ধি দ্বিপদভিন্ন চিন্তার মূল্যে যারা জীবনকে, যাপন কে
টেরপায় আপন শোণিতে, তাদের কোনো ঘোষিত "ধর্ম", "স্বধর্ম",
প্রাতিষ্ঠানিক দেবতা, ঈশ্বর থাকতে পারেনা। ছিলওনা কদাপি।