সিলভিয়া সিরিজ
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
প্রবেশপথ
“I
walk alone:
The
midnight street
Spins
itself from under my feet”, Sylvia Plath
নিরুক্ত নির্বেদহেন হেঁটে যাও চেতনার হে নগ্ন সুন্দরী,
পদতলে পথরেখা পথ হয় পদরেখা ধরে।
নক্ষত্রের জরায়ুতে, গ্রহদের ভ্রূণের
শিয়য়ে
তোমার নাভিটি উষ্ণ,তাজা পেঁয়াজের মতো
মাদক,ঝাঁঝালো – ঝলসে উঠলে তাতারের
বর্শাফলাহেন ‘বিগব্যাংগ’ ঘটেযায়। অন্যথায়
নক্ষত্র হারায় পথ কৃষ্ণ গহ্বরে। কখনো নগ্ন পায়ে
হেঁটে যেতে একা একা
নিরুক্ত নির্বেদে
ফুঁ দিয়ে নেভাও তুমি গ্রহান্তরে পুতুলের জানালার আলো,
নিষ্প্রদীপ তারাগুলি পরিত্রাণ খোঁজে দাহ্য নাভিপরিধিতে।
নিষ্প্রদীপ গুহার জঠরে রতি উদ্যাপনে রত
একটিও মদ্দা-মাদী পুতুল জানেনা তুমি যদি
চোখদুটি এক পলকের বেশী বন্ধ রাখো তবে
সবগুলি হৃৎপিন্ড-ঘড়ি চিরন্তন থেমে যাবে আর
সব মর্মপ্যাপীরাস থেকে চিরতরে লুপ্ত হয়েযাবে
অগ্নিক্ষরা কামনার ভাষা। তখন বিস্মৃতি হবে
ঈশ্বরের মতো এক অনর্থক গভীর দুরাশা।
#
নিরুক্ত নির্বেদহেন হেঁটে যাও চেতনার হে নগ্ন সুন্দরী,
কখনো কোনোও গুপ্ত যৌন স্বপ্নে তেতে ওঠো যদি
শিশু ঘাসেদের দেহে তৎক্ষণাৎ স্পর্শ লাগে
নম্র সবুজের – তখুনি সোনালী বাষ্পে
অন্ডকোষ ভরে ওঠে ব্রহ্মান্ডের
সমূহ সূর্যের।
যাত্রারম্ভ
১।
সিলভিয়া,নদী তুমি। অন্ধকারে তুমিই
আকাশ।
নাভিহ্রদ পার হয়ে সৌন্দর্য ও তুমুল সন্ত্রাস
যেখানে বদ্বীপে – সেখানের মধুকূপী ঘাস
ডেকে নেয় সন্ধ্যাগমে অদ্যাবধি গ্রীকদের
দুঃসাহসী নৌবহরগুলি। সিলভিয়া, সে নিবিড়
দ্বীপের সন্ধানে আমিও স্বপ্নগত নিষিদ্ধ সাগরে
দুঃস্বপ্নের নৌকা বেয়ে চলি একা রাতকানা
কোজাগরী রাতে।
বর্শাফলা নিয়ে আমি
প্রোথিত হবোনা সিক্ত লতাগুল্মে ভরা
তোমার গহনে। যদি তুমি রক্তপাত চাও
তাহলে আনবো ডেকে সেই সাত বামনকে, যারা
বর্শাঘাতে তৃপ্ত রাখে মধ্যযামে হিমশাদা তুষারমেয়েকে।
আর কোনো সাধ নাই, সিলভিয়া, শুধু তোমার বদ্বীপে
অতলান্ত দ্বৈপায়ন হ্রদে ঘ্রাণ আর স্বাদের ইন্দ্রিয়
অনুদ্যমে চায় ঘুমযেতে – রূপ আর জন্মপ্রাক
শীতল ভীতিতে। জানুলগ্ন জানলা খুলে কবে
ডেকে নেবে স্বাদে, ঘ্রানে জীয়ন্ত
পোড়াতে,
আমাকে,গো সিলভিয়া,সৌদামিনী-মেয়ে?
২।
সিলভিয়া,আর সব জলদস্যুহেন
আমারো রমণী আছে -নিজস্ব ও একান্ত নিবিড়।
তথাপি তোমার নদী,লতাগুল্ম,শ্যাওলাদাম,
গুহাগর্ভে সর্পিনীর ভিড় আমাকে মন্ত্রবলে
টেনেনেয় জাগরনে,ঘুমে – কেননা এমন ঘ্রান ছিল
যৌবনের নদীনালা এবং বদ্বীপে আমার আর আমাদের
নারীদেরো কবে…
তারপর অসময়,দুঃসময় ও সুসময় মিলে
সন্ততি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সেইসব ঘ্রাণগুলি
ভুলিয়েভালিয়ে নেয়েগেলো হ্যামলিনের
বাঁশিওলাহেন। এখন সেখানে শুধু অপত্যের ঘ্রান আর
মমতা রয়েছে। রয়েছে কবোষ্ণতা দাম্পত্যের অন্তর্গত
শান্ত নীলাকাশে। রয়েছে রসনাতৃপ্তি। জিহ্বার দুঃসাহসী
অভিযান নেই। নেই ঘ্রাণ যাদু মালঞ্চের। আমি তাই
বর্শাফলা নিয়ে প্রোথিত হবোনা সিক্ত লতাগুল্মে ভরা
তোমার গহনে। তোমার বদ্বীপগত অতলান্ত দ্বৈপায়ন হ্রদে
ঘ্রাণ আর স্বাদের ইন্দ্রিয় অনুদ্যমে শুধু ঘুমযাবে।
বর্শা বর্ষনে ভিজবে রূপ আর জন্মপ্রাক শীতল ভীতিতে।
২৯ জানুয়ারী ২০২০
ইতিহাস,ইতিকথা
Josephine
is the name of our songstress. Those who have never heard her sing simply
haven't experienced the power of song. Everyone who hears her is pulled out of
him or herself, transported, and this is yet more of a mystery since our race
as a whole has no great love for music. – Franz Kafka, Josephine the Singer, or
the Mouse Folk
১।
কেউ
বলে সিলিভিয়া পাখি হয়েগেছে বহুযুগ।
কেউ
বলে পাখিরাই সিলভিয়া হয়ে
আবার
ফিরেছে এই
ধর্ষিত,ধূলির
শহরে।
কেউ
বলে ম্যান্ডোলীন নিয়ে
যে
কিশোরী ফিরি করে ফেরে
গান,পাপ
- আমাদের অন্তর্গত অলীতে গলীতে –
সে’ই সিলভিয়া।
ধর্ষিত
আমাদের এ ধূলির শহরে
শীতের
মরশুমে আসা যাযাবর পাখিগুলি ছাড়া
সিলিভিয়া
আমাদের একমাত্র উদযাপন, মেলা,
মেলামেশা।
যদিও
কখনো কোনো সংজ্ঞাধীন শৈশব অথবা যৌবন
আমাদের
ছিলনা তথাপি খালি পায়ে, রুক্ষ চুলে,
ম্যান্ডোলিন
হাতে নিয়ে
আমাদের
ধর্ষিত এ শহর জুড়ে
তার
এই ওড়াওড়ি, তার গান, তার পাপ
আমাদের
বাল্যকাল, বিগত বার্ধক্য আর স্থবির যৌবন।
অথচ
আমরা গান, অথচ আমরা নাচ, শিল্প ও সীবন প্রতিভার
কিছুই
জানিনা তবু ঈশ্বরের বোমারু বিমান
ছায়া
ফেল্লে প্রশ্নাতীত আমাদের মর্মচক্রবালে
আমরা
তাকে ঘিরে বসি, ঘন হয়ে বসি,
‘এক’ থেকে ক্রমে ক্রমে ‘বহু’ হয়ে উঠি
তার
গানে, ম্যান্ডোলীনে, প্রতিভায়,পাপে।
প্রার্থনার
গানহেন সিলভিয়ার একটানা একঘেয়ে সুরে
টেরপাই
মিশে আছে আমাদের নাতিদীর্ঘ
অসম্ভব
শৈশবেরো দু’টি একটি মলিন অক্ষর, মিশে আছে
ক্ষণস্থায়ী
তবুও সংঘবদ্ধ আনন্দিত গ্রুপ ফোটোগ্রাফ
সিলভিয়ার
রুক্ষ চুলে, জানুর অন্তর্গত জানালার ভগ্ন কপাটে।
আমরা
বিস্মৃতি শিখি, ভবিষ্যৎ-স্মৃতি শিখি,
সিলভিয়া,
না’কি এই শীতের পসরা নিয়ে আসা
যাযাবর
পাখিদের কাছে? ঈশ্বরের বোমারু বিমান
আমাদের
করতল থেকে সবগুলি রেখা মুছে
ফিরে
গেলে পরে কারফিউ ‘লঘু’ হয়।
আমরা
মার্জারহেন যে যার মার্জারীসহ নিজ নিজ গর্তপথে যেতে
টেরপাই সিলভিয়া প্রকৃতই পাখি হয়ে গেছে।
ধর্ষিত
আমাদের এ ধূলির শহর জুড়ে শুধু
যাযাবর
পাখিদের পরাহত পালক রয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারী – ১লা মার্চ, ২০২০