প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Monday, January 18, 2021

বিশ্বস্ততা, অবিশ্বস্ততা ও রিলকে, রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি …

  বিশ্বস্ততা, অবিশ্বস্ততা ও রিলকে, রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি …

‘অবিশ্বস্ততা’র উপল স্রোতস্বতী তে প্রকাশ্যে বহমান প্রতিজন নারী বা পুরুষই কিন্তু নিতান্ত ‘অন্য এক পুরুষ’ না ‘অন্য এক নারী’র টানেই ডিঙ্গিয়ে আসেনা তার পূর্বতন সম্পর্কের, সংশ্রবের বেড়া, ঘেরাটোপ। আদতে এই পার হয়ে আসার, ডিঙ্গিয়ে আসার মূল্যে তারা আপনাকেই করে শ্রান্ত ও বিক্ষত। তাদের এই না-আনুগত্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার ফারাক দুস্তর কেননা যে সম্পর্কটিকে পার হয়ে, ডিঙ্গিয়ে তারা চলে আসে আরেক সম্পর্কে, সংশ্রবে – সেই বিগত-সম্পর্কের কেন্দ্রজনকে তারা ত্যাগ করেনা বরং শ্রদ্ধাসহ তাকে ফিরিয়ে দেয় মহাপৃথিবীর কাছে। … একজন প্রকৃত পূর্ণ নারীর, অতএব, ‘অবিশ্বস্ত’ হওয়া ভিন্ন  গত্যন্তর নেই … নতুবা তার নারী-অস্তিত্ব খন্ডিত হতে বাধ্য। এ নয় কোনো ধৃষ্টতা-প্রসূত উচ্চারণ। এ তার প্রয়োজন, প্রয়োজন নৈমিত্তিক নূতনের, আরম্ভের। … আমি সতত বিশ্বস্ত একমাত্র স্মৃতির কাছেই। রক্তমাংসের কাছে আমি কদাপি বিশ্বস্ত নই, ছিলাম না, হবোও না কদাপি”। লিখেছিলেন লু আন্ড্রেস-সালোমি (১৮৩১-১৯৩৭) যাঁর প্রেমিক তালিকায় কিংবা ‘সান্নিধ্যে আসা পুরুষ’ তালিকায় রয়েছেন, কম খ্যাত পুরুষদের বাদ দিয়ে,  স্বয়ং নীৎসে, ফ্রয়েড এবং দেবদূত রিলকে। স্মৃতিকথায়, অন্তিমে, তিনি রিলকে কেই ঘোষনা করেছেন তাঁর একমাত্র প্রকৃত প্রেমিকজন বলেই শুধু নয় সাবেক অর্থে ‘পতি’ বলেও। নারী-পুরুষ সম্পর্ক কিংবা যে কোনো সাহচর্য-কেন্দ্রিক সম্পর্ক বিষয়ে, এখানে, রিলকের একটি উক্তিঃ  “গহনে সমূহ সাহচর্যই দুটি প্রতিবেশী নৈঃসংগ কে নিজ নিজ কেন্দ্রে করে তোলে নিবিড়তর, গাড়তর। নৈঃসংগ বিরহিত যে মানস-সেতু তা কদাপি নয় সাহচর্য ”। … এই উক্তি দুটিকে পর পর উদ্ধার করেন "The Love Lives of the Artists: Five Stories of Creative Intimacy" র লেখক Daniel Bullen  লু আর রিলকের প্রায় অপার্থিব প্রেম সম্পর্কের কাহনটি আরম্ভ করতে গিয়ে। … পাঠ করতে করতে আমার মনে আসে দুটি ত্রিকোণ। প্রিন্স মিশ্‌কিন- এনাসটাসিয়া ফিলিপ্পোভ্‌না – রোগোজিন। অমিত রায় – লাবণ্য – শোভনলাল। … এ শুধুই একটি ভাবনা-সূত্র। ইচ্ছা আছে এটিকে আরো বিশদ করবার। … ‘শ্রীমতী কেতকী’কে রবীন্দ্রনাথ অজান্তেই রক্ত মাংসের করে গড়লেও শুধুমাত্র ‘রক্ত মাংসের মেয়ে’ ভিন্ন তার নিমিত্ত আর বিশেষ পরিসর তিনি রাখেননি। পক্ষান্তরে দস্তয়ভস্কি ‘অগ্লায়া ইভানোভনা’কে এনাসটাসিয়া ফিলিপ্পোভ্‌না’র প্রতিযুক্তি হিসেবে খাড়া না করলেও বিস্তার ও গভীরতায় দিয়ে গিয়েছেন নিবিড়তর মাত্রা। - এমন মনে হওয়ার, আমার, একটি হেতু এই, যে, companionship যেখানে strengthen করে দুই  of two neighboring solitude কে সেখানে প্রবেশের দ্বার-সূত্র রবীন্দ্রনাথ না দিয়েছেন কেতকীকে, না’ত অমিত রায় কে। পক্ষান্তরে প্রিন্স মিশিকিন, ‘অগ্লায়া ইভানোভনা’ এমন কি নানান দৃশ্যে এনাসটাসিয়া ফিলিপ্পোভ্‌না’ও টের পায় আর পেয়ে কেঁপে ওঠে, এই সত্য “গহনে সমূহ সাহচর্যই দুটি প্রতিবেশী নৈঃসংগ কে নিজ নিজ কেন্দ্রে করে তোলে নিবিড়তর, গাড়তর”। এই চাবিটি পায়না বলেই রোগোজিন অন্তিমে হত্যা করে বসে এনাসটাসিয়াকে। এই হত্যার দ্বারাও সে কিন্তু ব্রাউনিং’এর সেই প্রেমিকজন, Porphyria’র হয়না, হয়ে উঠতে পারেনা। বরং আমার চিন্তায় অমিত রায়’কে মনেহয় ‘রোগোজিন’ এর একটি অসুস্থতর, দূর্বল ছায়া – যে দূর্বলতার বীজ নিহিত তার ‘এলিটিস্ট’ শ্রেণী চরিত্রের মধ্যবিত্ততায়, যে মধ্যবিত্ততাই অন্তিমে হয়ে উঠেছিল এমা বোভারি’র আত্মহত্যার হেতু। আবার রোগোজিন এবং ‘লেডী চ্যাটার্লি’র প্রকৃত প্রেমিক অলিভার কিন্তু ভিন্ন অর্থনৈতিক শ্রেণীর। তথাপি তাদের ‘মানসিক গঠন’ বহুদূর যেন সমান্তরাল।

অলিভার সেই শ্রেণী সংজ্ঞার সন্ততি আর এই শ্রেণীটি, হয় সেই শ্রেণী, ‘যাদের হাতের শেকল ছাড়া আর নেই কিছুই হারাবার’ আর রোগোজিন পরগাছা-হেন উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যুবা। হয়তো এই হেতুই অলিভার যায়না ‘হত্যা’হেন বিকৃতির পথে কিন্তু রোগোজিন যায়।

 

“People who are not “faithful” do not necessarily desert one person for another, but are often simply driven home to themselves . . . Their infidelity is hence no betrayal . . . it need not be a gesture of abandonment for them to set free the person to whom they have clung; more likely it is a gesture of reverence, returning him to the world . . . A woman has no other choice than to be unfaithful or to be only half herself... Let it not be taken for arrogance that she requires a new beginning again and again: is it not humility to burden herself with [starting new relationships from scratch]. I am faithful to memories forever; to people I shall never be faithful”

 LOU ANDREAS-SALOMÉ

 

“. . . all companionship can consist only in the strengthening of two neighboring solitudes, whereas everything that one is wont to call companionship.”

RAINER MARIA RILKE


ঘুম ঘর