অশিক্ষিতের শিক্ষার 'দীক্ষা'
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
কিন্তু এই তিনটি পৃথক ব্যাপার এর ভেতর কি ভয়ঙ্কর সম্বন্ধে যে আছে তাই তোমাদের
আজ বলতে বসেছি।"
প্রেমেন্দ্র মিত্রের “কালাপানির অতলে” নামের বিজ্ঞান নির্ভর দুরন্ত কাহিনীটির
আরম্ভ এইভাবে।
কাহিনীর
অন্তিমে আবিষ্কৃত হয় সেই সূত্রটি যার দ্বারা এই সকল আপাতঃ বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলি পরস্পর
সংশ্রববদ্ধ। “ক্যায়োস” থিয়োরি’র অন্তর্গত “বাটারফ্লাই এফেক্ট” ইত্যাদি “রকেট-সাইন্স-সুলভ”
তত্ত্ব ইত্যাদির দিকে না গিয়েও, সহজ কথায় বলা যায়, যে, ঠিক যেভাবে প্রেমেন্দ্র মিত্র
উল্লিখিত আপাতঃ বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলি পরস্পর সংশ্রববদ্ধ তেমনি বরাকের বাজারে আলু, পেঁয়াজের
দাম হঠাৎ বেড়ে ওঠা কিংবা কমে যাওয়া, নাইজিরিয়ার কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠির মধ্যে হঠাৎই কোনো
রোগের প্রাদুর্ভাব, গ্রীসদেশের নির্বাচন ও দক্ষিণমেরুতে তাপমানের পরিবর্তন এরাও, হয়তো
দেখা যেতে পারে, পরস্পরের সঙ্গে গাঁথা কোনো অদৃশ্য সূত্রে। ঠিক সেইভাবে বরাক বা দাক্ষিণাত্যের কোনো প্রত্যন্ত ইস্কুলে,
নিচু ক্লাসের কিছু ছেলেমেয়ের ইতিহাস বা অংকে কম নম্বর পাওয়ার সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে আমাজন-হেন
ই-বাজারের উত্থান, চাঁদ-মঙ্গল ইত্যাদিতে হানা দেওয়ার সাম্প্রতিক চেষ্টাচরিত্র, চাষীদের
আত্মহত্যা বা চাষীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরস্পর সম্পর্ক ততোদূর ‘অদৃশ্য’ নয়। …
সোজা কথায় আর সমস্ত কিছুর মতনই ‘শিক্ষা’ বা ‘শিক্ষাব্যবস্থা’ও নয় কোনো ভুঁইফোড় অথবা
স্বয়ম্ভূ জানোয়ার। এবং এ’ও হয় সত্য, যে, এই কথাগুলি কিছু নতুন নয় যেমন নতুন নয় এই সত্যও,
যে “বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে”র আবডালে এই সকল আপ্তবাক্যের রচয়িতারাই যে “শিক্ষা”কে
করে রেখেছিলেন তাঁদের কুক্ষিগত। বেশী যুক্তি তর্কে না গিয়ে বলি, যে, সেই সর্বজনবিদিত
“সত্যকাম” যখনঃ
“কহিলা কোকিলকণ্ঠে সুধাস্নিগ্ধস্বরে,
"ভগবন্, ব্রহ্মবিদ্যাশিক্ষা-অভিলাষী
আসিয়াছি দীক্ষাতরে কুশক্ষেত্রবাসী,
সত্যকাম নাম মোর।'
তখন “… স্মিতহাসে
ব্রহ্মর্ষি কহিলা তারে স্নেহশান্ত ভাষে,
"কুশল হউক সৌম্য। গোত্র কী তোমার?
বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের কাছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যালাভে”…
এই “অধিকার” থাকা আর না থাকার মধ্যে, এই ব্রাহ্মণ আর অব্রাহ্মণের ভেদের মধ্যেই
লুকিয়ে রয়েছে, অদ্যাপি, “শিক্ষা”র, “শিক্ষা ব্যবস্থা”র আদি ও অন্তিম, সর্বজনবিদিত তবু
– “রহস্যকাহিনী”। অথচ রহস্যের সমাধানসূত্রটিও রয়েছে সেই ছান্দোগ্যোপনিষৎ’এর কাহিনীতেই
যা রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রাহ্মণ’ কবিতার প্রেরণা । তথাপি শিক্ষার এই জাত পাতগত অধিকারের
প্রশ্নটি নিয়ে লড়তে হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকেও। অথচ তারো বহুপূর্বেই এই ভারতবর্ষের
ইতিহাসে দেখা যায়, যে, গণিকাদের শিক্ষার ভার গ্রহণ করছে রাজা-রাজড়ার দল কিন্তু তখনো
'শূদ্রের' অধিকার সম্মত নয় 'ব্রহ্মবিদ্যা' লাভে। সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণা থেকে
জানা যায়, যে, তৎকালে অনেক গণিকাই ছিলেন সে
কালের মানে শিক্ষিতা - নৃত্যগীতাদি ছাড়াও। সমস্যাটি এই নয়, যে, 'গণিকারা' কেন শিক্ষিত
হবে, প্রশ্নটি এই, যে রাজা-রাজড়াদের এই উদ্যমের মূলটি ঠিক কোথায়? - এই উৎসাহের মূলটি
এই, যে, 'গণিকা' এমন একটি 'পণ্য' যা রাজা-বাদশা ও তাঁর নন্দী-ভৃঙ্গিদের দ্বারা হয় সরাসরি
ব্যবহৃত। কিন্তু 'শূদ্র' যদি 'ব্রহ্মবিদ্যায়' বলীয়ান হয় তাহলে রাজার বেগাড় খাটবে কে?
খাটবে কারা? এমতাবস্থায় 'শিক্ষা' বা তার 'ব্যবস্থা' নিয়ে যতো উচ্চ এবং গহন ভাবনা, গবেষণাই
হোক্ না কেন, এতে আদত 'শিক্ষা'র কোনো রকমফের ঘটছেনা এবং ঘটেওনি যে তার প্রমাণ বিদ্যাসাগরের
সময়েও তাঁকে লড়তে হয়েছে এ নিয়ে।
বিদ্যাসাগরের সময়ে অবশ্য ঐতিহাসিক বাস্তবতা একটু ভিন্ন। তখন নিজ দরকারেই ভারতীয়দিগকে
"শিক্ষিত" করবার দায় নিয়েছে ইংরেজ প্রভুরা । তবে সেই 'শিক্ষা' কিন্তু ভারতবাসীকে
'বিদ্বান' করে 'সর্বত্র' পূজিত করবার প্রয়োজনে নয়। দক্ষ করণিক শ্রেণী প্রস্তুত করবার
প্রয়োজনে। এই স্থানীয় করণিক দল নামমাত্র বেতনে করে দেবে সেসব কাজ যার জন্য বহু পাউন্ড-শিলিং
পুড়িয়ে তখন বিলাইতি যুবকদের আনতে হচ্ছিল এই সকল উপনিবেশে। আনার পরেও তাদের বেতনও ছিল
বিপুল। ঠিক যেমন ভারতে ‘সফটওয়ার ইঙ্গিনীয়ার’ তৈরী করে শস্তায় কাজ চালাচ্ছে এমেরিকা,
এই সময়ে। কিন্তু সততই যা ঘটে তা হলো রাজশক্তি,
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, পুঁজি-শক্তি নিজেদের অর্থনৈতিক লাভের নিমিত্ত যা'ই আমদানী করে
তা'ই, ক্রমে জনতা প্রয়োগ করে হয় নিজেদের বিকাশে। … খনি থেকে, কারখানা থেকে পণ্যকে জাহাজ
ঘাটে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে যে রেলগাড়ির আমদানী করেছিল পুঁজি-প্রভুরা সেই রেলে বাহিত
হয়েই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছিল ইউরোপীয় চিন্তাবীদদের গ্রন্থাদি। ঠিক একই ভাবে একটি
কেরাণী প্রজন্মের জন্ম দেওয়ার নিমিত্ত ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার এবং শিক্ষা থেকে জাতপাতকে
যথা সম্ভব দূরে রাখবার চেষ্টা নেয় ইংরেজ-প্রভুরা আর সেই সকল চেষ্টাই তৎকালীন, তথাকথিত
এ দেশী 'নবজাগরণের' 'অব্জেকটিভ্ রিয়্যালিটি' । এর সঙ্গে অবশ্যই রামমোহন, বিদ্যাসাগর
প্রমুখদের 'সাবজেক্টিভ্ এফোর্ট' না থাকলে ঘটতে পারতো না ঘটনাটি। এ ক্ষেত্রে এ'ও সত্য,
যে, শিক্ষা বা ইংরেজি শিক্ষা'র পক্ষে রামমোহনের ওকালতি আর বিদ্যাসাগরের উদ্যমের অন্তর্গত
উদ্দেশ্য পরস্পর বিরোধী। বংগীয় তথা ভারতবর্ষীয়
বণিক শ্রেণীর প্রতিভূ, রামমোহন রায় ইত্যাদিরাও কিন্তু আদতে, সেই সময়ে, চাইছিল ইংরেজদের
ছত্রছায়াতলে থেকেই, গড়ে নিতে, যাকে সহজ কথায় বলাযায় 'জাতীয় পুঁজিপতি শ্রেণী' আর সেই
জাতীয় পুঁজিপতি দেরও প্রয়োজন ছিল ইংরেজি শিক্ষার। “শিক্ষা বিস্তারের”। পক্ষান্তরে বিদ্যাসাগর
পালন করেছিলেন সমাজ সচেতন সেই নেতার ভূমিকা যাঁর কাছে ব্যক্তির উন্নতি আর গোষ্ঠীর উন্নতি
অঙ্গাঙ্গী জড়িত।... না, এই কথাগুলিও নয় নতুন কিছু। 'ভারতে বৃটিশ শাসন' বিষয়ে কার্ল
মার্ক্সের অনতিবিস্তৃত রচনাগুলির কথা যদি বাদও দিই, হালের বিনয় ঘোষ, বদরুদ্দিন উমর প্রমুখদের কাছেও আমরা শুনেছি প্রায় একই বৃত্তান্ত,
যে বৃত্তান্তের মূল কথা 'শিক্ষা' ও তার 'ব্যবস্থা'ও আদতে নিয়ন্ত্রিত শাসক শ্রেণীর দ্বারা
আর শাসকশ্রেণীকে নির্মাণ করে কারা? সহজ উত্তর জগৎ শেঠেরা। অতএব সিরাজের বৃহত্তর স্বার্থের
সঙ্গে যখনই জগৎশেঠদের ক্ষুদ্র স্বার্থের সংঘাত ঘটে তখনই শোণিতধারায় ভেসে যায় পলাশীর
প্রান্তর।
অতএব এই 'সিরাজ-নির্মাতা' জগৎ শেঠেরাই
বকলমে নিয়ন্ত্রণ করে, মুদ্রা ও মুদ্রাস্ফীতির মতোই, শিক্ষাকেও।
২।
অতি সরলীকরণ এবং পদে পদে ফুট্নোট্
না দেওয়ার দোষ যে ধরবেন অনেকেই সে ব্যাপারে অভিহিত হয়েই আমি হাত দিয়েছি এই রচনায় তাই
এই ভাবেই এগিয়ে যাবো কেননা আমার এই অক্ষর চেষ্টা কোনো শিক্ষাবিদের নিমিত্ত নয়, গবেষকদিগের
নিমিত্তও নয় - কেননা আমরা দেখেছি প্রয়োগহীন, জনবিচ্ছিন্ন তত্ত্ব-প্রবক্তা ও ব্যাখ্যাতাদিগের
কারো কারো মর্মে সদিচ্ছা থাকলেও প্রয়োগহীন তত্ত্বচর্চা দ্বারা আদতে তাঁরা যা করেন,
অন্তিমে, তা সর্বদা এই বণিক-শাসক ঐক্যের পক্ষে না গেলেও পারেনা দাঁড়িয়ে থাকতে বিপক্ষেও।
আমি নিজেও নই, কোনো অর্থেই শিক্ষাবিদ আর আমার নিজস্ব যাপন অভিজ্ঞতা আমাকে অদ্যাপি বলে,
যে, “শিক্ষা”কে “শিক্ষাবিদ”দের থাবার বাইরে নিয়ে আসাই শিক্ষা ও তার ব্যবস্থাকে কোনো
সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রথম শর্ত। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথেরো মূল প্রতিপাদ্য তাঁর নিজস্ব
শিক্ষা ও শিক্ষার ব্যবস্থার আয়োজনক্ষেত্রে। … তবে কালের এবং পুঁজি সর্বস্ব সভ্যতার
যোগসাজশে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাটি যে বহু পূর্বেই বিচূর্ণ সে'ও আজ রাষ্ট্র
হয়েগেছে অনেকদিন।
পাওলো ফ্রাই'এ যাওয়ার আগে বলি,
যে, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ও তার ব্যবস্থা বিষয়ক ভাবনার অতলে আমি যে কথাটি বার বারই
টের পাই তা ১৮৬৯
সালের ১০ অগাস্ট জেনারেল কাইন্সিলের অধিবেশনে “শিক্ষা” ও “শিক্ষা ব্যবস্থা” প্রসঙ্গে
বলতে গিয়ে যা বলেছিলেন কার্ল মার্ক্সঃ “ … there was a peculiar difficulty
connected with this (Education)
question. On the one hand a change of social circumstances was required
to establish a proper system of education, on the other hand a proper system of
education was required to bring about a change of social circumstances; we must
therefore commence where we were.” এই পুনঃপৌনিকতার বৃত্ত থেকে বার হয়ে আসার
পথ হিসেবে শুধুমাত্র একটি ভিন্নধর্মী বিদ্যালয় বা বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপন করা নিশ্চয়ই
নয় অন্তিম তথাপি তৎসময়ের নিরিখে শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী একটি অনুধাবনীয় সূচনা । 'সূচনা'
বলছি, কেননা 'জার্মান আইডিওলোজি' বিষয়ে বলতে গিয়ে মার্ক্স-এঞ্জেলস্ বলেছিলেনঃ “The
ideas of the ruling class are in every epoch, the ruling ideas: i.e., the class
which is the ruling material force of society is at the same time its ruling
intellectual force. The class which has the means of material production at its
disposal, consequently also controls the means of mental production so that the
ideas of those who lack the means of mental production are on the whole subject
to it. The ruling ideas are nothing more than the idea the ideal expression of
the dominant material relations.”
সারাংশের ভাবার্থ করলে মোটামোটি
এই দাঁড়ায়, যে,
“ ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়েই শাসকেরা তাদের নিজেদের মতামত ও ধারণাগুলি দ্বারা
শুধুমাত্র সমাজের ভিতরের বস্তুগত, অর্থাৎ পণ্যোৎপাদনের শক্তিগুলিকে, নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ
করেই থামেনা। এই শাসকরাই নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে, উঠতে চায় চিন্তাগত, বুদ্ধিগত এবং মেধাগত
শক্তিরো। পণ্য বস্তুর উৎপাদনের মাধ্যমগুলি, অর্থাৎ নানাবিধ যন্ত্র ও নিয়মগুলির মতনই
, এই শাসকেরা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় জনতার দৈনন্দিন চিন্তা ভাবনা, মতামত, মেধা ও মানসিকতাকেও।
এই জনতার চেতনা ও চৈতন্যের নিয়ন্ত্রণের নিমিত্ত শাসকেরা আমদানী করে কিছু 'আদর্শ',
'সংজ্ঞা' বা 'রীতি'র। এইসব আদর্শ', 'সংজ্ঞা' এবং 'রীতি' আদতে শাসকদের শাসক হয়েই নিজের
টিঁকে থাকবার ও পণ্য বস্তুর উৎপাদনের উপর নিজ অধিকার বজায় রাখবার সহায়ক নামতা”,
চরিত্রপাঠ, সমাজবিদ্যা এমন কি সাহিত্যও। এই সকল ‘আদর্শ', 'সংজ্ঞা' বা 'রীতি' যা শাসক-বণিক
‘ইয়ারি’র সন্ততি এবং সহায়ক, তাকেই প্রচার করবার ব্যবস্থাটি, হয়, সেই কালের, সেই মানচিত্রের
“শিক্ষা ব্যবস্থা। রবীন্দ্রনাথের 'তোতাকাহিনী'র
খাঁচাটির মতন 'ব্যবস্থা'টির অন্তর্গত ছেঁড়া-ফাড়া পুঁথিগুলি, হয়, 'শিক্ষা'। বহিরঙ্গে
যা ঘটে, তা, সময়ে সময়ে খাঁচাটি সারানো, বড়জোর নতুন খাঁচার ‘ডিজাইন’ আমদানী, পুঁথির
হরফের, প্রচ্ছদের হেরফের। আর কিছু নয়।
এখানে এসে মনে আসছে একটি সাম্প্রতিক
বিজ্ঞাপনের কথা। সম্ভবতঃ 'রেমন্ড্স্' কোম্পানীর। এতে দেখা যায় একটি বড়লোকের বখে যাওয়া
ছেলের মতন দেখতে ছোকরা ইন্টারনেটে, অন্ লাইনে, ক্লিক্ করে করে বেছে নিচ্ছে তার স্যুটের
রঙ, কেতা, বোতাম, সূতো ইত্যাদি ইত্যাদি। সে এক একটি ক্লিক করছে আর সঙ্গে সঙ্গে পর্দায়
দেখা যাচ্ছে যে সে'ই কাঁচি দিয়ে কাটছে কাপড়, বোতাম সেলাই করছে এবং অবশেষে তোয়ের হয়ে
যাচ্ছে তার স্যুট। তখন বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে “এখন নিজের স্যুট নিজেই তৈরী করে নিন”।
এই গোটা বিজ্ঞাপনটি প্রকৃত
প্রস্তাবে একটি বড়লোকি স্যুটের হয়ে ওঠার প্রতিটি পর্য্যায়ের আবডালে, সূতো কাটা থেকে
বোতাম সেলাই অব্দি, যতো শ্রমিকজনের যতো শ্রম মিশে আছে সেই সমস্তকে অস্বীকার করে, অপমান
করে উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেতাকে দিচ্ছে আজব এক আত্মতুষ্টি। চিন্তাশক্তি বিরিহিত
‘আম্’ এর শূন্য মস্তিষ্কে বিজ্ঞাপনদাতা ভরে দিচ্ছে তার নিজের মতামত ঠিক যেভাবে “শিক্ষা”
নামক যন্ত্রকে ব্যবহার করে বৃহত্তর “আম্” এর মগজে শাসকদল পুরে দিচ্ছে শাসকের সহায়র
ভাবনা, চিন্তা, আদর্শ।
শ্রমের দ্বারা নির্মীত বস্তুর সঙ্গে শ্রমিকের সম্পর্ককে মুছে তো দেওয়া হয়েছে
বহু আগেই, এখন, এই বা এই রকমের বিজ্ঞাপনের দ্বারা জানা যাচ্ছে, যে, শ্রমের 'ইন্টেলেকচুয়াল
মালিকানা'ও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে উচ্চ ক্রয় ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেতাকে। - এটাই উদ্দেশ্য শাসক
গোষ্ঠীর কেননা এতেই মুনাফা তার বণিক বন্ধুর অতএব এই উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত তার প্রয়োজন
সততই এমন এক “তোতাকাহিনী'র খাঁচা যা “শিক্ষা ব্যবস্থা' হয়ে ‘আম্ তোতা'কে গিলিয়ে যাবে
সেই সকল পুঁথি পত্তর – দর্শন, ইতিহাস এমন কি বিজ্ঞানও যা “আম্ তোতা”কে করে তুলবে এই
শাসকদের উপর আরো নির্ভরশীল। অন্তিমে, গোটা পনেরো দেশী-বিদেশী ডিগ্রী নিয়ে বাজারে নামা
'শিক্ষিত'টি নিজেও ভাবে সে আদতেই বানিয়েছে বা বানাতে সক্ষম তার নিজের স্যুট, নিয়ন্ত্রণ
করতে সক্ষম, “ম্যানেজ” করতে সক্ষম তার “সাবোর্ডিনেট” দিগকে, তার পারিপার্শ্বকে। আর
একই ধারণা সে’ও যাবে প্রচার করে। ক্রমে সে হয়ে উঠবে নিজেই একজন ' নেক্সট্ জেন্ ' বিজ্ঞাপন বণিক-শাসক ‘সিন্ডিকেট’এর।
এই কথাটিই আমরা পূর্বাহ্নে শুনেছি মার্ক্স-এঞ্জেলসের মুখে, একটু অন্য ভাবে।
'শিক্ষা' বলতে এই বণিক
সভ্যতার লক্ষ্য মাত্র একটিইঃ 'শিক্ষিত' দালাল, পটু এবং 'বাধ্য' মজুর, জ্ঞান-বিজ্ঞান
মজুর ( যথা 'আইটি সেক্টর') ইত্যাদির জন্মদান, প্রসার ও প্রচার। 'Man
and Heredity' র লেখক G.W.Roderick এর
“Education and industry in the 19th Century” নিবন্ধে পাচ্ছি, যে ' In Britain, “The key issue in
education at the turn of the century was related to the spread of education for
the lower orders’. In this, the influence of religion was dominant. The aim was
to produce a god fearing, law-abiding and industrious workforce: sober, honest,
literate citizens imbued with a sense of duty… Training of the mind and
formation of character were paramount objectives of the private schools and
grammar schools, largely the preserve of the upper classes…”
বহিরঙ্গে যাই হোক, গহনে, Roderick বর্ণিত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি?
৩।
শিক্ষার সঙ্গে আর্থ সামাজিক শ্রেণীর সম্পর্কের জটিল দ্বান্দ্বিকতাকে নিবিড়
ভাবে অনুধাবন করেছেন Antonio Gramsci যাঁকে আমরা এর পর থেকে উল্লেখ করব ‘গ্রামসি’
বলে। গ্রামসির মতে শাসক শ্রেণী শাসিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে দুটি উপায়ে। প্রথমতঃ ক্ষমতার
স্পষ্ট বা অস্পষ্ট প্রদর্শনে ও প্রয়োগে। যেহেতু শাসকদল, তুমি-আমি তার বিপক্ষে দাঁরালে
কিংবা সেই রকম সম্ভাবনা দেখাদিলে, পারে, অবলীলায়কেড়ে নিতে আমার, তোমার জীবিকা নির্বাহের
উপায়, তার পুলিশ এবং মিলিটারি নামধেয় গুন্ডা বাহিনীর দ্বারা, আইন-আদালত-প্রহসনের দ্বারা,
কেলখানা নামক ব্যবস্থার দ্বারা পারে আমাদের নিঃশেষ করে দিতে, সুতরাং আমার-তোমার, আম্-জনতা-তোতা’র
উপায় থাকেনা শাসকের অনাচারের, লোভের, ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়াবার। তথাপি পরিস্থিতি বিষয়ে
জনতা অতিক্রমও করে, করেছে এই সকল ভীতিকে। পক্ষান্তরে শাসকদলের দ্বারা যারা সর্বাধিক
শোষিত ও নিপীড়িত তারাও, ইতিহাসের নানান পর্য্যায়ে, দেখা গেছে, সেই শাসকদলেরই ধ্বজাধারী
হয়ে উঠতে। এই ‘তথাপি’র রহস্য ভেদের ইঙ্গিত দিয়েছেন গ্রামসী।
জনতাকে নিয়ন্ত্রণের নিমিত্ত শাসকদল গ্রহণ করে আরেকটি সূক্ষ পন্থাও। সেই পন্থাটি
জনমনের মনস্তাত্ত্বিক দখলদারী। জনতার সমাজ চেতনাকে চালিত করে শাসকদলের স্বার্থে। এই
চালচিত্রটি’র নির্মাণে শাসকদল প্রচার করে, নানা উপায়ে, শাসকদলের পক্ষে সুবিধাজনক যাপনচিত্রটি।
এতে যা হয় তোতা-জনতা যে সকল সিদ্ধান্ত কে তার নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং তার পক্ষে
উপকারী সিদ্ধান্ত বলে ধরে নেয়, সেগুলি আদতে শাসকদলেরই সিদ্ধান্ত এবং শাসকদলের স্বাস্থের
জন্যই উপকারী। ক্রমে তোতা-জনতা যে সকল মতামত, ধ্যান ধারণাকে মনে করে নেয় তার সহজাত
চেতনা ( কমন্সেন্স্) তা আদতে শাসকদলেরই ইস্তাহারের সার। অতএব বল প্রয়োগ ছাড়াই বশ
মানে তোতা-জনতা। গণহত্যাকে, দাঙ্গাকে নির্ণয় করে নেয় ‘দেশপ্রেম’ বলে। ধর্ষনপটু সেনাদলকে
জানায় সালাম, শুভেচ্ছা – তাদের দ্বারাই নিপীড়িত হওয়া সত্ত্বেও। - শাসক শ্রেণীর দ্বারা
নির্মীত নিজেদের এই সুবিধাজনক চালচিত্রকেই যা
শাসকদলের “আদর্শ” কিংবা “অন্বিষ্ট”কে একটি সংস্কৃতি, একটি বিশ্ব দর্শনে পরিণত
করে তা জনতাকে গুলে খাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটিকেই hegemony বলেছেন গ্রামসি।এই প্রক্রিয়াটিতে “শিক্ষা” এবং তার “ব্যবস্থা” পালন করে কিছু কিছু
মুখ্য ভূমিকা। তবে এই ‘চালচিত্র’ স্থান কাল বিশেষে হয় ভিন্ন। মনেপড়ছে ‘দেশপ্রেম’ hegemony’র সেই গপ্প যা আমরা ইস্কুলের
নিচু কেলাসে পড়তাম। ‘লাচিত বরফুকন’ নামে একটা লোক তার মামাকে সর্ব সমক্ষে খুন করে বলে
উঠলো “দেশ হইতে মামা বড় নয়” আর সঙ্গে সঙ্গেই সে “খুনী” থেকে হয়ে গেলো “দেশপ্রেমিক”।
হায়! আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ে মোহম্মদ
বিন তুঘলককে স্রেফ ‘পাগলা রাজা’ই বলা হলো। বলা হলোনা প্রতিষ্ঠিত রাজ্য চালন ব্যবস্থার
ত্রুটিগুলি তিনিই যে পেরেছিলেন হৃদয়ঙ্গম করতে। পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতক হিসাবে পাঠ্য
বইয়ে লেখা রইলো শুধু মীর্জাফরের নাম, উমিচাঁদ, জগৎশেঠহেন হিন্দু বিশ্বাসঘাতকদের প্রসঙ্গ
হলো এড়িয়ে যাওয়া। …ভারতবর্ষের মতো দেশে, যেখানে, অতি অল্প শতাংশ শিশুরই সঙ্গতি থাকে
পাঠশালার গন্ডি পার হয়ে হাই স্কুলে যাওয়ার, আরো কম যায় কেলাস সেভেন থেকে উঁচুতে, আরো
কম শতাংশ … এমতাবস্থায় কেলাস সেভেন অব্দি পড়ানো ইতিহাসে, সমাজবিদ্যায়, চরিত্রপাঠে যা
সমস্ত তারা দেখে “ছাপার অক্ষরে” তা’ই তার পরবর্তী যাপনের “জ্ঞান”। হায়! আমি নিশ্চিত
প্রতিজন পাঠ পাঠিকা তাদের ইস্কুল কলেজের সিলেবাসে পঠিত বিষয়, কাহিনী গুলি ফিরে ভাবলে
এরকম উদ্দেশ্য প্রণোদিত অনেক কাহনই পারবেন শনাক্ত করতে। এই মুহুর্তে সিলেবাস বদলের
হিড়িক-রহস্য আরো সহজবোধ্য। ইদানীং শাসকদলের hegemony প্রক্রিয়ায় নিচু কেলাসের
সিলেবাসের সঙ্গে এসে জুতেছে “সোসাল মিডিয়া” – ফলতঃ পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে জটিলতর।
প্রতিষ্ঠিত র hegemony বিকল্প চালচিত্র অঙ্কনের
যে চেষ্টা, শিক্ষা ক্ষেত্রে পাওলো ফ্রাই তারই বাস্তবায়নের পথিকৃৎ। গ্রামসী’র প্রাথমিক
পরিচয় আমি উদ্ধৃত করেছি পূর্বেই। এইবার আসি তাঁর জীবনের সেই পর্বে যখন আমেরিকা্র মদতপুষ্ট
দক্ষিণপন্থীদের দ্বারা আক্রান্ত হল ব্রাজিল। পাওলো তখন ব্রাজিলে। স্কুল শিক্ষকতার পাশাপাশি
চলছের তাঁর বিকল্প শিক্ষাদান প্রণালী নিয়ে হাতে কলমে কাজ। ব্রাজিল আক্রান্ত হলে পাওলো
কারাবরণ করেন ১৯৬৪ সালে এবং সত্তর দিনের মতো কারাবাসের পরে তিনি বিতাড়িত হন ব্রাজিল
থেকে। এই নির্বাসনের কালেই তিনি চিলি এবং অন্যত্র নিরত থাকেন তাঁর কাজে। এই সময়কালেরই
ফসল তাঁর Pedagogy
of the Oppressed।
৪।
নিতান্তই ‘নিরীহ’ শিক্ষক পাওলো কে কেন করতে হয়েছিল কারাবরণ অথবা যেতে হয়েছিল
নির্বাসনে? কেননা তাঁর আবিষ্কৃত আদান-প্রদান প্রক্রিয়াটি ভীত করে তুলেছিল তদানীন্তন
শিক্ষা বণিকদের – যে শিক্ষা বণিকেরা মূলত শাসকদলেরই পৃষ্ঠ পোষক। পাওলো’র ‘ব্যবস্থা’কে
শিক্ষা ‘শিক্ষা দান’ বলে ‘আদান প্রদান’ বলাই শ্রেয় বলে মনেহয় আমার। পাওলো’র “ডায়ালগ”
কথাটিকেই আমি নিয়েছি ‘আদান-প্রদান’ অর্থে। পাওলোর মতেঃ ‘…dialogue is a way of knowing and
should never be viewed as a mere tactic to involve students in a particular
task. We have to make this point very clear. I engage in dialogue not
necessarily because I like the other person. I engage in dialogue because I
recognize the social and not merely the individualistic character of the
process of knowing. In this sense, dialogue presents itself as an indispensable
component of the process of both learning and knowing.’ … প্রথমেই লক্ষ্যণীয় ব্যক্তি
থেকে গোষ্ঠিতে পৌঁছানো, তাঁর, ব্যক্তিকে গভীরতর ভাবে জানার উদ্দেশে। নিজের মনোজগতের
বিবর্তন বিষয়ে পাওলো বলেনঃ Why
deny it? I was afraid of freedom. I am no longer afraid! … তাঁর এই ‘ফ্রিডম্’ এক সর্বাত্মক
‘স্বাধীন’। এই ‘স্বাধীন’ টিরই বিকাশ চায়না, চায়নি, চাইবেনা শাসকশ্রেণী কদাপি। শাসক
শ্রেণীর এই ‘না চাওয়ার’ প্রথম স্বরূপটি ধরা পড়ে তাদের দ্বারা চর্চিত “শিক্ষা দান” এর
প্রক্রিয়ায় যেখানেঃ
(a) the teacher
teaches and the students are taught; (b) the teacher knows everything and the
students know nothing; (c) the teacher thinks and the students are thought
about; (d) the teacher talks and the students listen—meekly; (e) the teacher
disciplines and the students are disciplined;(f) the teacher chooses and
enforces his choice, and the students comply;
(g) the teacher
acts and the students have the illusion of acting through the action of the
teacher; (h) the teacher chooses the program content, and the students (who
were not consulted) adapt to it; (i) the teacher confuses the authority of
knowledge with his or her own professional authority, which she and he sets in
opposition to the freedom of the students; (j) the teacher is the Subject of
the learning process, while the pupils are mere objects.
এই “শিক্ষা দান” প্রক্রিয়াকে পাওলো বলেছেন ‘banking
concept of education’ যেখানেঃ ‘ knowledge is a gift bestowed by those who
consider themselves knowledgeable upon those whom they consider to know
nothing. Projecting an absolute ignorance onto others, a characteristic of the
ideology)of oppression, negates education and knowledge as processes of inquiry.’
এর বিপরীতে পাওলো প্রতিষ্ঠা করেন Dialogic। সাধারণ অর্থে ‘ডায়লজিক’
বোঝায় এমন এক ‘কথোপকথন’, ভাবনার এমন এক ‘আদান প্রদান’ যার দ্বারা ক্রমশঃ স্পষ্ট হতে
থাকে, বলা ভালো অবয়ব নিতে থাকে, কোনো ধারণা, কোনো সংজ্ঞা, কোনো অন্বিষ্ট সত্য – কথোপকথনে
অংশগ্রহণকারীদের মর্মে। তারা সকলেই “অনুধাবন” করতে থাকে ‘আলোচ্য’টিকে, একত্রে। একত্রে
তবু ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। অর্থাৎ এখানে ‘মাস্টর-বাবু’ বা ‘দিদিমণি’ বা ‘পোবেচার স্যার’ আর থাকেন না, থাকতে
পারেন না জ্ঞানের ‘দাতা’র ভূমিকায়। সুতরাং ‘শিক্ষাবিদ’ বলে আর ‘তোতাকাহিনীর’ কোনো রাজশ্যালক
থাকা সম্ভব নয় এখানে। অতএব খাঁচাটিও হয় উধাও। ফলতঃ ‘ছাত্র-ছাত্রী’ও আর থাকেন না সেই
আম্ তোতা পাখি’ হয়ে বা থাকতে পারেন না ‘ অংক ভুল হলে ‘কান ধরে ওঠবোস করো, দশবার’ হয়ে।
এই ‘ডায়লজিক’কে অংশগ্রহণকারী প্রতিজনের মর্মেই, আদতে, রূপ নিতে থাকে এক ‘স্বাধীন’ যা
শাসকশ্রেণীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সাবেক ‘শিক্ষা ব্যবস্থা’ চায়না কদাপি।
মর্মে এই ‘অনুধাবন স্পৃহা’র জন্মদানই, আমার বোধ বুদ্ধি মতো, পাওলোর একটি মূল
অনুভব। অনুধাবন-স্পৃহা’কেই সর্বাগ্রে স্থাপিত করবার গহনে, তিনি উদ্ধৃত করেন লেনিন কথিত
বাক্যটিঃ
Lenin's famous
statement: "Without a revolutionary theory there can be no revolutionary
movement" বাক্যটি, পাওলোর অনুভবে, জ্ঞাপন করে,
যে “ means that a
revolution is achieved .... with reflection and action directed at the
structures to be transformed”
পাওলো ফ্রাই এর জীবন ও চিন্তা নিয়ে এই পরিসরে খুব বেশী কিছু আর লেখা সম্ভব
নয়। তাছাড়া আমার নিজের সীমিত, এতাবৎ অনুধাবনে, এর চেয়ে খুব বেশী বলতে যাওয়াও হয়তো অনুচিত।
তবে ‘শিক্ষা’ নিয়ে, শিক্ষার ‘ব্যবস্থা’ নিয়ে প্রকৃতই যাঁরা আন্দোলিত, গহনে, তাঁদের
প্রত্যেক কে অনুরোধ করবো গ্রন্থটি পাঠ করতে। অন্ততঃ একবার।
৫।
রচনা আর দীর্ঘ করবোনা। অন্তিমে এসে আবার একবার যাবো আরম্ভে, প্রেমেন্দ্র মিত্রের
সেই গল্পের শুরু-ভাগে …
হ্যাঁ। এই গল্পের মতনই “শিক্ষা”, “ব্যবস্থা”, “কল কারখানা”, “মালিকানা”, “মজুরী”,
“এন আর সি”, “কোভিড”, “শাহরুক খান”, “সানি লিয়োনী”, “রবীন্দ্রনাথ”, “চে গুয়েভারা”,
“সন্তোষ মোহন”, “অমিত শাহ্” সক্কলেই পরস্পরের সঙ্গে সংশ্রব বদ্ধ। এই সংশ্রবের সূত্রেই
“শিক্ষা” নিয়ে বলতে বসে এসে পড়েন আন্তোনিও গ্রামসী থেকে পাওলো ফ্রাই থেকে … আর এই যে
‘এসে পড়া’, ‘শিক্ষা’ নিয়ে ‘রচনা’য় ‘শিক্ষা, ব্যবস্থা ও শিক্ষাবিদ’ ভিন্ন আর সমস্তের
তা’ই প্রমাণ করে বর্তমান লেখজনের ‘অশিক্ষা’ এবং এই ‘অশিক্ষা’র চক্রবালে বর্তমান লেখক
আমন্ত্রণ করে প্রত্যেককে, ‘বক্তৃতা’ শুনতে নয় যোগ দিতে ‘ডায়লজিক’এ।
১০ই ডিসেম্বর, ২০২০, বেঙ্গালোর
কৃতজ্ঞতাঃ 'অস্তিত্ব' পত্রিকা, জয়শ্রী
ভূষণ