প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, May 8, 2021

"কলঙ্ক, আমি ক্রোধের দেশে যেতে চাই।"

 "কলঙ্ক, আমি ক্রোধের দেশে যেতে চাই।"

 

বাক্যটিকে লক্ষ্য করিঃ

"কলঙ্ক, আমি ক্রোধের দেশে যেতে চাই।"

কি বলে বাক্যটি? ইশারায়? এ'কি কবিজনের কলঙ্ক যে তিনি ক্রোধের দেশে যেতে চান? না'কি কলঙ্ককেই ডেকে বলা কবিকে নিয়ে পাড়ি দিতে ক্রোধের দেশে?

"ক্রোধ" সত্যই "কলঙ্ক"। তবে লোভের,ঈর্ষার,জিগীষার... চেয়েও কি? হয়তো না নতুবা কবি, কলঙ্ক জেনেও, তার দেশে যেতে চাইবেন কেন? কবি কলঙ্কিত হতে চান ক্রোধের দেশে গিয়ে। ... কেন? ... কেমন এই ক্রোধ? ... আমার মনে আসে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণদৃশ্য। ভীমের আদেশ, সহদেবকেঃ "সহদেবাগ্নিমানয়" - ওরে সহদেব আগুন নিয়ে আয় - "বাহূ তে সংপ্রধক্ষ্যামি" ... রে যুধিষ্ঠির তোর হাত আজ আমি পুড়িয়েই ফেলব " কেননা "ত্বৎকৃতে ক্লিশ্যতে" ... তোর জন্য আর তোর জুয়ারি হাতের জন্যই আজ দ্রৌপদীর এই দশা ..."

এই যে ক্রোধ যা সর্বময় অশুভের প্রতিপক্ষে তা নয় কলঙ্ক, কদাপি। সেই সর্বাত্মক অশুভের বিপরীতেই আদতে এ এক যুদ্ধ ঘোষনা, কবির। সর্বদা। এই কবি, গৌতম বসু, কবিতায় - প্রতিটি কবিতায়ই -

তিনি একই সঙ্গে ব্যক্তি আর গোষ্ঠী অথবা বলা যায় প্রতিটি কবিতার গহনেই কবির এক দ্বান্বিক গমনাগমন - ব্যক্তি আর গোষ্ঠী - অস্ত্বিত্বের এই দুই সংলগ্ন-বৃত্তে। যাদের পাপে একদা অশ্রুও লোহা হয়েছিল - সেই 'অন্নপূর্ণা ও শুভকাল' যুগে ... যে পাপে মগ্ন হয়েছিল কৃষ্ণ-বংশীয়রা, অন্তিমে, যে পাপের মর্মে লোভ আর তজ্জনিত ক্ষমতার আড়ম্বর, আস্ফালন ... সেই সর্বাত্মক পাপের দাহে পুড়তে থাকা ব্যক্তি, ব্যক্তির পুড়েযাওয়ার আগুনে ক্রমে পুড়েওঠা সমাজ, গোষ্ঠী - এই কবির কবিতায় সতত সমান্তরালপথগামী। ... "মঞ্জুশ্রী" ... ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থটির "শূন্যে ব'সে লেখা" শীর্ষক কবিতার এই অন্তিম পংক্তিদুটি আমার মনে এনেদেয় আরেক কবিকে যিনি লিখেছিলেন, ১৯৬৮ সাল নাগাদঃ "আমার নিজস্ব রাজনীতি আজ গোপন সন্ত্রাস" ... সেই কবি, যুগান্তর চক্রবর্তীর কবিতা রচনার কক্ষপথের সঙ্গে, কবিতাভাষার সঙ্গে - এই কবি গৌতম বসু'র সামান্যতম সংশ্রব নেই । কবিতায় যুগান্তর মূলতঃ 'ব্যক্তি'। তবু সর্বাত্মক পাপ আর ক্ষমতার আস্ফালনে বিদ্ধ হয়ে তাঁকেও বলে উঠতে হয় "আমার নিজস্ব রাজনীতি আজ গোপন সন্ত্রাস" তথাপি সেখানেও মিশে থাকে এক রকমের আত্মসমালোচনা, দ্রষ্টব্য 'পৃথিবীর গরীবেরা', গ্রন্থঃ 'স্মৃতি বিস্মৃতির চেয়ে কিছু বেশী'। ... পক্ষান্তরে এই মহাজাগতিক দুঃসময়ের করাল ছায়ায় দাঁড়িয়ে কবি গৌতম বসু নিশ্চিত তাঁর নিজ অবস্থান বিষয়ে। তিনি "আকাশের এক কোণে অপেক্ষা" করছেন "যুদ্ধজাহাজের মতো" ... এখানে তিনি গোষ্ঠীর আবার "যুদ্ধ" শব্দের অন্তর্গত "ক্রোধ" তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে বলছে "কলঙ্কের" কথা। - তথাপি আত্মসমালোচনায় স্তব্ধ না হয়ে, অন্তর্গত এই দ্বন্দ্বটি নিয়েই তিনি চান যুদ্ধে যেতে, গোষ্ঠীকে নিত্য ব্যবহার করে যে মুষ্টিমেয় লোভী, ক্ষমতাবান 'ব্যক্তি'রা তাহের প্রতিপক্ষে নিজেকেই একটি গোষ্ঠী করে তুলতে চাওয়া ...

এ'ই গৌতম। এই সময়ের।


ঘুম ঘর