প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Wednesday, April 6, 2022

আমার লেখালেখি ও নন্দদুলালের ভূমিকা

 আমার লেখালেখি ও নন্দদুলালের ভূমিকা

 


জানালা, আলো বাতাসের আসা যাওয়ার অনেক না হলেও এখনো একাধিক তবে নিজের কোঠার থেকে নিজস্ব পারাবতগুলিকে উড়িয়ে দেওয়ার জানালা, অনেকদিন, একটাই। ওই ব্লগ। 'আমার সোনার বাংলা'। উড়িয়ে দেবার জানালা , অনেক, নিজহাতেই বন্ধ করেছি। কিছু আপনাআপনি বন্ধ হয়েছে। শোকতাপ নেই আমার। নেই, কেননা জানালা বলতে পত্রিকা, ই-পত্রিকা যা'ই হোক, এমন একটিতেও দেখিনি, এখনো, এমন কোনো মুখ, যে শুধুমাত্র লেখার মূল্যে বিচার করে বা লেখার মূল্য বোঝার ইস্কেলে যার মাপদাগ আছে। যাদের দেখি, তাদেরই, মনে হয় হাতে একটি ইস্কেল আছে যার সব গুলি সংখ্যাই মুছে গেছে। এদের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে গেলে এদের সঙ্গে ফেবুত্ব পাতাতে হয়, লাইকাতে হয় ... ওরে ব্বাবা! আরো এক সমস্যা আমার, দু ছত্র লিখতে পারার দৈব ক্ষমতা যদিবা কারোর আছেই, সে ক্ষমতার দামে মাছ বাজারেও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং ইচ্ছা, হ্যাঁ, আমি ঘৃণা করি। অতএব, অবশেষে, ফেবু-পাতাও দিয়েছি ফুটো করে। ডুবিয়ে। তুলে এনে পুড়িয়ে ফেলার সাহস জোটাচ্ছি।

শরদিন্দুর 'মাকড়সার রস' গল্পের নন্দদুলাল কে মনেপড়ে?কালির দোয়াতে মাকড়সার রস থাকতো? কলম চুবিয়ে কলমের নিব চুষে সেই রস খেয়ে নেশা করতো? কিন্তু কালি কেন? দোয়াত কেন? সন্দিহান পুত্রেরা প্রশ্ন তুল্লে নন্দদুলাল বল্লো সে লিখবে। অতএব কালি লাগবে। কলম লাগবে এবং কাগজও। সবই এলো। চলতে লাগলো মাকড়সার রসের নেশাও কালির আড়ে। এবার প্রশ্ন দোয়াত খালি করা কি করে? অবশ্যই কাগজে লিখে। অতএব নন্দদুলালকে সত্যি কলম ধরতে হল। কলম ধরে কি লিখল নন্দদুলাল? অজিত, বকলমে শরদিন্দুর বর্ণনায়ঃ " লিখিত কাগজপত্রগুলো অবিন্যস্ত ভাবে চারিদিকে ছড়ানো। মোহন যাহা বলিয়াছিল তাহা সত্য। এ লেখা পড়িলে ফরাসী বস্তুতান্ত্রিক এমিল জোলারো বোধহয় গা ঘিনঘিন করিত। শুধু তাই নয়, লেখার বিশেষ বিশেষ রসালো স্থলগুলিতে লাল কালির দাগ দিয়া লেখক মহাশয় সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। বস্তুত এমন জঘন্য মনের পরিচয় আর কোথাও পাইয়াছি বলিয়া স্মরণ হইল না।" -- বিকৃত, অর্থাৎ ইরোটিকা নয়। সেই অর্থে জর্জ বাটালির 'স্টোরি অফ আই' ও নয়। বস্তুত কিছুই নয়। লোকটির লেখবার কিছু নেই। তব্র কালি খরচ করতে হবে যাতে নতুন কালির বোতল আনানোর নামে আমদানী করাযায় তার নেশার কালি, মাকড়সার রস।

বঙ্গে যাকে 'সাহিত্য' বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকেই তা এই সকল নন্দদুলাল দিগের কালি খরচ। এদের ৯৯.৯৯ শতাংশের লেখবার কিছু নেই বলবার কিছু নেই কেননা ভাবনার কিছু নেই 'কবি', 'লেখক' এই সকল আলখাল্লার লোভ এবং পুরষ্কার বা রাজ দরবারে কলমচি হয়ে বেতনের সঙ্গে আরো কিছু ভোগের কামনা ছাড়া। এর কারণ এরা, ক্রমে, ভুলে গিয়েছে, যে, কবিতা বা যে কোনো শিল্পই আদতে জীবনের সঙ্গে মহাজীবনের মর্মযোগ স্থাপনের একটি যানের একটি চাকা মাত্র। পরিবর্তে ওই শকটটিকেই ভেবে নিয়েছে জীবিত বলে। ফলে এদের শকট হয়ে গিয়েছে মাটির শকট। হয়ে গিয়েছে কারণ প্রকৃত শিল্প যাদের শত্রু, যাদের কবেই সাবড়ে দিয়েছে রাক্ষুসী মুদ্রা, সেই মৃতেরা, প্রেতেরাই বিশ্বের দখলে বহুযুগ। ক্রমে সেই দখন হয়েছে নিরংকুশ। এরা চেয়েছে, অনুভবের প্রকাশের নামে বিজ্ঞাপনের জিংগল আর ওনুভব, অনুভুতি, বোধ সমস্তকে গুলিয়ে দিতে শিল্পকে করেছে কমোডিটি, ওই 'কবি', 'সাহিত্যিক', 'শিল্পী'দের দ্বারা লিখিত, অংকিত, শুটিত জিংগলেরই দ্বারা।ইচ্ছায় কিম্বা অনিচ্ছায় সালভাদোর দালি কি করেন নি বড়লোক বাড়ির চেয়ারের ডিজাইন?দালির মুখ কি নয় আজ বিজ্ঞাপন? চে'র ছবিওলা টি শার্ট আর ফুর্তির হাট প্রকাশিত মেকী সাহিত্য ক্রমে ঢুকে গিয়েছে দঙ্গলে ছোট কাগজ করা 'প্রতিভা'দের মগজে। যেন 'স্টার্ট আপ'। সামান্য ব্যবসা জমালেই বেচে দেওয়া বৃহৎ পুঁজির হাতে। সামান্য 'নাম টাম' হলেই মনে মনে অপেক্ষা ফুর্তির কোনো হাট থেকে আসেকিনা ডাক। যদি নিতান্ত না'ই আসে তখন পোঁতিষ্ঠান বিরোধী! কিন্তু পোঁতিষ্ঠানই হোক আর বিরোধীই হোক আগাগোড়া বিকিয়ে যাওয়া এই সকল নন্দদুলালেরা "এ লেখা পড়িলে ফরাসী বস্তুতান্ত্রিক এমিল জোলারো বোধহয় গা ঘিনঘিন করিত। শুধু তাই নয়, লেখার বিশেষ বিশেষ রসালো স্থলগুলিতে লাল কালির দাগ দিয়া লেখক মহাশয় সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। বস্তুত এমন জঘন্য মনের পরিচয় আর কোথাও পাইয়াছি বলিয়া স্মরণ হইল না।" এর বেশী কি করতে পারে?

আমার অহং তাই এদের থেকে আমাকে সড়ে আসতে বলেছে। সড়ে এসেছি।

লিখি, প্রথম থেকেই, নিজের আনন্দে। এখন ব্লগে রাখি। আশা যদি কোনোদিন চোখে পড়েযায় কোনো প্রকৃত পাঠকের, পাঠিকার। হ্যাঁ, ওই এক আশা, এক লোভ 'প্রকাশিত' হওয়ার পক্ষে, আমার। যদি পাই আরো একজন প্রকৃত পাঠকের, পাঠিকার সাক্ষাৎ, জীবদ্দশায়...

আর কিছু নয়।

 

 

 

ঘুম ঘর