প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, April 9, 2022

চরৈবেতি

 চরৈবেতি

 

কিনারের কোঠা থেকে

আসতে আসতে

বাবা চলে গেলো। হয়তো তুমিও

হাতমুছে আসতে আসতে

আমি যাবো। অথবা গেলাসে

জল ঢেলে নিয়ে এসে আমি

তুমি চলে গেছো, দেখবো, কিছুই না বলে।

হাত থেকে গ্লাস পড়ে যাবে। জল

মেঝেতে ছড়াবে। এ জীবন

এমনই চপল। জল

পদ্ম পাতাতেও

চঞ্চল

নয় এতো।

সম্ভবতঃ

৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে।

'যেতে হবে' এই বাক্য কখনো ভীতিতে

আর কখনো মন্ত্রে বেজে ওঠে।

#

যতো পথ,

মাঠ ঘাট, নদী, খাল, নগর, বন্দর

এতাবৎ

এসেছি পেরিয়ে

প্রতিটিই অভিযান,

প্রতিটিই দুজনের

গেরিলা বাহিনী।

ভ্রান্তি,ভুল,ক্রোধ, দ্বিধা,রক্তপাত,নিদ্রাহীন রাত

ইতিহাসে আছে, রয়েযাবে

তবুও সকল অভিযান

সফল রয়েছে

এতাবৎ।

#

আরো ভ্রান্তি, আরো ভুল, আরো রক্তপাত

আরো কিছু বিনিদ্রার রাত

বয়ে নিয়ে

আরো কোনো ব্যক্তিগত গেরিলা সমর, অভিযান,

আরম্ভ করেও

অসমাপ্ত রেখে মাঝপথে

যেতে হবে। চলে যেতে হবে

আমাকে বা তোমাকে

নিশ্চিত।

তারপর যে একা থাকবে তার

পরবর্তী অভিযানে আর

থাকবে কি

কোনো ভূমিকাই?

জানিনা নিশ্চিত, তবে

মনে হয়

এখনই সময়

পরস্পরের কাছে স্বীকার করবার

অভিযানদের সফলতা। এখন পাথেয়

বলতে নিভৃত উষ্ণ সম্ভাষণ

একমাত্র সহযোদ্ধার।

ভ্রান্তি,ভুল,ক্রোধ, দ্বিধা,রক্তপাত,নিদ্রাহীন রাত

ইতিহাসে আছে, রয়েযাবে

তবুও সকল অভিযান

সফল রয়েছে

এতাবৎ।

৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

'যেতে হবে' এই বাক্য কখনো ভীতিতে

আর কখনো মন্ত্রে বেজে ওঠে।

#

সব দ্বৈত অভিযান গুলি

সফল হয়েছে

এতাবৎ। এতাবৎ তবু

নয়টি দরজা আর আটটি কুঠুরী

একে অপরের খুলতে পারিনি।

আজ মনে হয় জানি

কেউই পারেনা খুলতে

সব দরজা

একে অপরের। তবু অভিনয় করে

অনেকেই। তালাবন্ধ দরজা ঢেকে তারা

লটকে দেয় হাসি আঁকা ফ্যামিলি পোর্ট্রেট,

ফুল, বাগান, দেবতা-পোস্টার।

তাদেরো কি ছিল কোনো

দ্বৈত বাহিনী? কোনো অভিযান? তারা

জয়ী নাকি পরাজিত? ৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

টের পাই

পরাজয় ও জয়ের কিছুই

এতাবৎ

বুঝিনি, শিখিনি। ৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

'যেতে হবে' এই বাক্য কখনো ভীতিতে

আর কখনো মন্ত্রে বেজে ওঠে।

অতএব আট কুঠুরীর

বন্ধ ছিল, আছে, থাকবে থাক। নয়টি দরজার

যে গুলি খোলেনি

সে গুলি খোলার

চেষ্টা নেওয়ারো কোনো

প্রয়োজন, অর্থ

দেখিনা। বরং সতত খোলা

আকাশের তলায়, উঠোনে

এসো আজ চড়িভাতি হোক

উদ্দীপনা আর উদ্‌যাপনে।

#

৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

'যেতে হবে' এই বাক্য যখন ভীতিতে

অথবা    

মন্ত্রে বেজে ওঠে

হয়তো তখনই শুধু

টের পাওয়া যায়

প্রেম

পক্ষীরাজ ঘোড়া। যা নেই

তা নিয়ে মেতে থাকা বালকের,

বালিকার

মতো। প্রেম আছে, প্রেম থাকে

বালক বালিকা আর

যুবক যুবতীদের

দ্বারা অধিকৃত

উপত্যকাটিতে যা আমরা

সগৌরবে

এসেছি পেরিয়ে। তারপর

ভালবাসা থাকে,ভ্রান্তি,ভুল,ক্রোধ, দ্বিধা,

রক্তপাত,নিদ্রাহীন রাত

সমস্ত আগলে থাকা

ভালবাসা, ভীতি। ভীতি

হারানোর। ঢোঁক গিলতে

গিয়ে তোমার হেঁচকি উঠলো। শ্বাস

আর না ফিরলে আমি

কি করবো, কাকে ডাকবো,

কিভাবে ফেরাবো? না ফেরানো

গেলে তারপর কি যে ঘটবে

এই ভীতি, হয়, ভালবাসা।

বালক বালিকা আর

যুবক যুবতীদল পক্ষীরাজ জানে।

তারা এই হেউঢেউ, ভীতি ও মমতা

এখনো জানেনা। তবে

জেনে যাবে

৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে। ৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

'যেতে হবে' ডাক থাকে তবু

'কেন যাব' এই প্রশ্ন, বেপরোয়া,

থাকে আর

৫০ ছুঁয়ে,পেরিয়েও

আরো বহু দ্বৈত অভিযান

বাকি থাকে

দ্বৈত গেরিলার।

#

শুধুমাত্র এই  ক'টি

পংক্তি লিখতে গিয়ে

পার হয়ে আসতে হলো ৫০ বছর।

শুধুমাত্র এই  ক'টি

পংক্তি লিখতে গিয়ে

কতোটুকু রক্তারক্তি, রক্তপাত

হলো, আমি জানি। শুধু আমি

জানি। পাঠক

জানেনা, জানবেনা। জানবেনা

তুমিও। আমিও

যেমন জানিনা

এ সকল খন্ড বাক্য কিংবা পংক্তিরা

স্থান, মাত্রা পেলো কিনা

অন্যের ও আমার লেখা

সংখ্যাতীত পংক্তিদের

ভিড়ে বা বাজারে।

তবুও পংক্তি লেখা, আর কাম,

আর ক্রোধ, বাঘনখ, ঘৃণা

হাসি আঁকা ফ্যামিলি পোর্ট্রেট আর

ফুল, বাগান, দেবতা-পোস্টার

দিয়ে গড়া 'সুশীল সমাজ' নামে

ঢোঁরা সাপটির প্রতি ।

এ টুকুই দেখতে পেরেছি, আছে,

ঝড়েজলে কোঠার জানালা

ফাঁক হলে

আমার আটটি কোঠার

কোনোটিতে, কোনো কোনোটিতে।

জানিনা ঝড়ের রাতে

আমার জানালা ফাঁক হলে

তুমিও কি দেখেছ এসবই, না'কি

দেখেছো ভিন্ন কিছু

যা আমি দেখিনি? হাওয়ার দাপটে

তোমার কোনোও জানালা

নড়েচড়ে গেলে

তোমার কোঠায় আমি

যা দেখেছি তুমি

নিজেও দেখেছো তা'ই?

সম্ভবতঃ না। দুই জোড়া

দৃষ্টি আদতে

কখনো মেলেনা। কেন বা

মিলবে বলো? কি হবে

মিলিয়ে? দ্বৈত গেরিলা যুদ্ধে

সহযোদ্ধা ছিলে কি ছিলে না

শুধু এই অভিজ্ঞান ছাড়া

আর সবই অর্থহীন, আর সবই

বিজ্ঞাপন। আর সবই

হাসি আঁকা ফ্যামিলি পোর্ট্রেট আর

বিবাহ নির্মীত হয় স্বর্গে অথবা

বিবাহ নির্মাণ করে

কোনোও স্বর্গকে

এবম্বিধ প্রচার, রটনা,

শুধু মুনাফার লোভে। বিবাহের

অপরাধহেতু ঈভ ও আদম

স্বর্গ থেকে বিতাড়িত। এই সত্য

তুমি কি জানোনা?

অতএব স্বর্গ রচনা কিংবা এ যাপনে

স্বর্গের কূটিল ভূমিকা ভুলে গিয়ে খোলা

আকাশের তলায়, উঠোনে

এসো আজ চড়িভাতি হোক

উদ্দীপনা আর উদ্‌যাপনে।

৫০ ছুঁয়ে বা পেরিয়ে

কাকে যে কখন যেতে হবে

সেই কথা

কেউ'ই তো জানেনা।

#

তবু যতক্ষণ শ্বাস, আশ

ততোক্ষণই। ততোক্ষণ প্রতিদিনই

অভিযান, গেরিলা সমর। ততোক্ষণই

ভ্রান্তি,ভুল,

ক্রোধ, দ্বিধা,

রক্তপাত,নিদ্রাহীন রাত, হেউঢেউ,

ভীতি ও মমতা

স্বর্গের বিজ্ঞাপনে আঁকা

সুশীল সমাজ-ছবি ছিঁড়ে

মর্ত্যের মানুষের মতো

দ্বৈত পথ হাঁটা।।

 

সপ্তর্ষি বিশ্বাস

০৮/০৪/২০২২ – ০৯/০৪/২০২২

বেঙ্গালোর

 

 

 

 

 

ঘুম ঘর