ইতিহাস
লক্ষ করো এই পর্বটিকে।
এই অসুস্থ তরুণী সখাকে নিজগৃহে নিয়ে আসছে একটি তরুণ। এই দৃশ্যে
সবই নাগরিক কেননা আমরাই
পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে, পিছে ফেলে রেখে সব প্রিয় নদী,
চেনামুখ, অপুর সংসার, যেন কালাজ্বর, মহামারী, কলেরা এড়াতে
পালিয়ে এসেছি রাত্রে, কৃতান্ত নগরে।
প্রকৃত প্রস্তাবে পালাতে কি পেরেছি কিংবা
পেরেছি এড়াতে কিছু? যিদি তা'ই হতো তবে
এই পর্বে ইতিহাস থেকে
কেন একগুচ্ছ পৃষ্ঠা উড়ে আসছে, বলো,
যেখানে তরুণী তুমি তোমার মফস্বল থেকে
বাসে চেপে এসেছিলে আমাদের মফস্বলে থাকা
তোমার বান্ধবী গৃহে, মূলত আমার সঙ্গে
ষড়যন্ত্র করে সাক্ষাতের । অতঃপর মহুয়ার বাড়িতে তোমার
জ্বর এলো। গেলো জ্বর থার্মোমিটারের প্রায় সব গুলি দাগ পার করে।
ডাক্তার, বদ্যি করতে মহুয়ার মা-বাবা কোনো কার্পণ্য বা ত্রুটি
রাখেননি । তথাপও জ্বর আবারো পেরিয়ে গেলো
প্রায় সব গুলি দাগ থার্মোমিটারের।
তরুণ প্রেমিক আমি কিভাবে কমাবো জ্বর? বরফ না জলপট্টি হয়ে
আরোগ্য ঘোষণা করব ভেবে ভেবে আর সারারাত বকে বকে
সিদ্ধার্থর সঙ্গে বসে আমাদের বারান্দা-সিঁড়িতে
যে রাত কেটেছে তার হেউঢেউ আজো
লেখা আছে কোনো বৃক্ষে, কোনোও পাতাতে।
পরদিন, অপূর্ব কুমার পাল, অমায়িক পিতাটি তোমার,
সশরীর দুশ্চিন্তা হয়ে এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে
মহুয়ার বাড়িতে গেলেন । স্থির হল পরদিন তুমি
চলে আসবে আমাদের বাড়ি । হবু শ্বশুরের সাথে
রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরলাম । আমার মা-বাবা
পরামর্শ, সান্তনা ও অভয় দিলেন । তাঁকে
খাইয়ে-দাইয়ে বিছানায় পাঠানোর পর
তুমুল বৃষ্টি নামল স্পষ্ট মনে আছে । হবু শ্বশুরের চোখে
স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুম তো ছিলই না । উঠে
আমার কোঠায় এসে বললেনঃ
"সিগারেট, চারমিনার সিগারেট আছে? " আমি চারমিনারপায়ী তাঁর জ্ঞাত। আমি
জানি তিনি ধূম্রপায়ী নন। তবু অপত্য-মায়াতে
স্নায়ু চেয়ে বসলো নিকোটিন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
হবু শশুরের সাথে সেই সিগারেট খাওয়া, কারেন্ট গিয়েছে, বিদ্যুচ্চমকে
দেখা পরস্পর মুখ, অসহায়। পরদিন ...
পরদিন, তার পরদিন, তারো পরে, আরো পরে কি কি ঘটেছিল
এই সবই অবান্তর আজ । শুধু ইতিহাস
দেখো ফিরে আসে, একটি তরুণ হয়ে
নিজগৃহ পথে আসে সঙ্গে নিয়ে
অসুস্থ তরুণী সখাকে।
দরজা খুলে এদেরকে ঘরে আনতে আনতে দেখি
আমাদেরও ছায়া গুলি তাদের এগিয়ে দিতে এসেছিল
চৌকাঠ অবধি। পৌঁছে দিয়ে ফিরে যাচ্ছে
মফস্বলগামী কোনো ট্রেইন ধরবে বলে।