উৎসব
"নিত্য কালের উৎসব তব বিশ্বের দীপালিকা
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ জ্বালাও তাহার শিখা"
১।
মাঝে মাঝে সাধ হয় মূঢ়ের উৎসবে
মিশে যাই। ভিড়ে যাই
সব ভিড়ে, ভাসান মিছিলে। রিক্সাভ্যান চালকটি-হেন
পকেট উজাড় করে, যা আমার দিনের সম্বল,
কিনে আনি তারাবাজি, মোমবাতি, মাটির প্রদীপ
ঠিক ওই মূঢ়দের মতো একদিন, এক সন্ধ্যা,
তিন রাত্রি, অর্ধেক বিকাল
শুধু তা'ই নিয়ে মেতে থাকি
যা আছে শৃঙ্খল ছাড়া
হারাবার ভয়হীন। তারাদের মতো।
কেননা মূঢ়ই হয় তারা-রাও।
দিনের সম্বল
রাত্রে পোড়ায় তারা
মদে, মাংসে,কখনো মেয়ের ফ্রকে,
বউ-এর শাড়িতে, বাপের দাবাই এ কিম্বা
ছেলের জ্যাকেটে। পরের সকালে
শৃঙ্খল ছাড়া ফের
হারাবার কিছুই থাকেনা।
অথচ কথা'ত ছিল
উৎসব নিত্যদিন হবে
অথবা
নিত্যদিনই
হবে উৎসবের।
২।
মাঝে মাঝে সাধ হয় মূঢ়ের উৎসবে
মিশে যাই। ভিড়ে যাই
সব ভিড়ে, ভাসান মিছিলে –---- লিখে ফেলে ভাবি
মূঢ় বলি, মূঢ় বলছি
কাকে? যারা ওই তারাবাজি, প্রদীপে, ফানুসে
পোড়ায় দেওয়ালি-রাত এবং নিজেকে?
প্যান্ডেল বেঁধে যারা মাইকে বাজায় গান,
চাঁদা তুলে মদ খায়, " সবই মা'র নামে",
মূঢ় কি এরাই? না-কি নয়?
অবশ্যই মূঢ় এরা, কেননা উৎসবের
উৎস থেকে লক্ষাধিক আলো-বর্ষ দূরে
শৃঙ্খল ছাড়া আর সকলই পুড়িয়ে
তারাহেন পাড়া বেঁধে
বাস করে
আকাশ-বস্তিতে। শেষ হাউই উড়ে গেলে,
শেষ দীপ নিভে গেলে পরে
ওইসব মূঢ় দের বুঝি মনে পড়ে
বাসা নয়, বাস ছিল,
বাড়ি ছিল, কোনোদিন,
কোনো গ্রহান্তরে।
৩।
উৎসব ছিল গ্রহান্তরে। আজো আছে।
ভাবি, ছায়াপথে গ্রহটিই না'কি
গ্রহ-পথ,
হারিয়ে গিয়েছে। সেই দূর গ্রহে
কথা ছিল
উৎসব নিত্যদিন হবে
অথবা
নিত্যদিনই
হবে উৎসবের।
উৎসব ধান রোয়া হলে।
উৎসব ধান পাকলে, তুলে রাখতে চাষার গোলাতে।
চাষি-বৌ, চাষিদের মেয়েটির হাতে
মেলায় নতুন চুড়ি, চোলি-ঘাঘরা। বড় নদী থেকে
জেলে-জন ঘাটে ফিরে এলে,
কখনো শূন্য হাতে, তবু
উৎসব। কেননা সকলে জানে
জাল আছে, নদী আছে, হাত খানি আছে।
পরের যাত্রায় নিশ্চিত
জালে মাছ হবে।
৪।
উৎসব ছিল নিত্যদিন।
নিত্যদিনই ছিল উৎসবের।
উৎসব ঋতু এলে। ঋতু গেলে পরের বছর
ঘুরে আসবে বলে। উৎসব
মেঘ করলে, রোদ উঠলে, সকাল-বাজারে
বিকিকিনি জমজমাট হলে
উৎসব
বটতলায়, হুঁকায়, আফিমে। আলকাপ-দল এনে
মেঠো-মঞ্চে, ঝোপের আড়ালে
সখী-রোল ছোকরাকে নিয়ে
টানাটানি। হানাহানি
হতো ঠিকই কখনো কখনো, তবু
উৎসবের নিয়ম মেনেই
মিটে যেতো দু বোতল মহুয়া, চোলাই-এ।
উৎসবের মন্ত্রগুলি
লেখা হতো
উদযাপনে, কুয়াশা-অক্ষরে।
উৎসব ছিল নিত্যদিন।
নিত্যদিনই ছিল উৎসবের।
৫।
কিসের দুঃখ কথা শোনাতে এসেছো? —- দেবাশিস তরফদার
কিসের যুক্তি-কথা শোনাতে এসেছো?
উৎসব আফিঙ্গ? আমি জানি। উৎস থেকে
আলো-বর্ষ দূরে বাস করে, বানানো উৎসব
আফিঙ্গ।অবশ্যই। অবশ্যই 'আম' জনতার।
তুমি 'খাস'। তোমার অনেক আছে। শস্তা আফিঙ্গে
কি হবে তোমার? তোমাদের গ্রহে এনেস্থিটিক আছে,
সম্মেলন, সরস্বতী পূজা, বিজয়ায়। সভা আছে,
সেমিনার আছে – আফিঙ্গের চেয়ে কড়া, চড়া দাম।
তাই কিনতে নিজগ্রহ নিলামে চড়িয়ে, নগরে এসেছো সাজতে
আমূল নাগরী। নাগর নগর, এই সব গুঢ় যুক্তি-কথা
শিখিয়ে তোমাকে, 'সভ্য' করে নিচ্ছে তার
সমিতি, সভাতে। আফিঙ্গ ছাড়াই তুমি নিজগ্রহ
গৃহপথ ভুলে গেছো। দেখো, আফিঙ্গ ছাড়াই
নিজমুখ অচিরাৎ নাগরের এ বাজারে বিকাবে।
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
২৪।১০।২২
প্রবেশিকা
**************************
[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
************************** [ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]