প্রবেশিকা

**************************
আমি অত্র। আমি তত্র।
অন্যত্র অথবা –
আমার আরম্ভে আমি
নিশীথিনী, প্রভাতসম্ভবা।
**************************


[ পাঠক /পাঠিকার নিজস্ব বানানবিধি প্রযোজ্য ]

Saturday, June 14, 2014

যে সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে ...




যে সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে ...



যে সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে
তুমি একা চুপে চুপে
টুকে রেখো তার সব ডালপালা এবং পত্রালী,
টুকে রেখো ঝোপঝাড় –
টুকিটাকি –
নুড়ি ও পাথর ...

অচিরেই লুপ্ত হবে যে পরিখা এবং প্রাসাদ
তুমি তার উর্দিহীন শেষ কথাকার –
অতএব লেখেরেখো
মর্মকথা ঝর্না আর দাহ্য পাখিদের...।

শিলাগাত্রে এঁকে রেখো
শান্ত মুখ –
হারানো রাজার...


১।
সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে

পাখিগুলি টেরপায় না’কি
এ নিবিড় বিপদসংকেত?
নাহলে বাগানে তুমি একা নেমে এলে
পাখিসব কিহেতু নীরব?
মরে যাওয়া পাতারাও ঝরেনা সহজে ...

দূরের বন্যার ধ্বনি যেন এক সঙ্গীতের মত
তোমার পরিধি ঘিরে
শব্দহীন ঝরে ...

২।
যে সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে
সে রাজার উঠানেই আজ
বৃষ্টি নেমেএলো পুনরায়।

বছরের এ অকাল বর্ষনে
হয়ত আকাশ ভেঙ্গে ‘শিল’ নয় –
শিলা’ই পরেছে –
তবু চলো আমরা দুজনে
মর্মমূলে বৃষ্টিমেখে আজ
আনন্দিত তা’ই তুলে আনি –

লিখে রাখি শিলাগাত্রে
ভবিষ্যৎগত যত স্মৃতির কাহিনী ...

হারানো রাজার পৌত্র যাতে এই জলে নেমে এলে
চিনে নিতে পারে তার ঠিকানা, বাহিনী ...


৩।
যদিবা সম্বল হয় অন্ধতম অবিশ্বাসগুলি
তাতেও ক্র্যাচের মত ভর করে তুমি
একদিন ফিরে আসবে
অধুনা বিলুপ্ত এই তোমার প্রাসাদে –
পলাতক রাজা তুমি এ’ই সত্য জেনো
যেরকম জানে ঐ বাগানে বসত করা
ছোটো পাখিমা’টি।

সে তাই বন্যার কথা মুছেফেলে দেখো
খড়কুটো জড়োকরে আর
স্থির চোখে চেয়ে দেখে
সূর্য ধীরে ডুবেযায়
যে সভ্যতা ডুবে যাবে তার
মিনারের ছায়ার শিয়রে।

৪।
যে সভ্যতা অচিরেই লুপ্ত হয়েযাবে তার
বিপুল উদ্যানে এক পাতার মাদুরে শুয়েআছি।

এ আশ্রয় সে’ও আজ আবহের স্তিমিত সঙ্গীত।
তবু আমি ঝরাপাতাগড়া
ধূসর মাদুর ছেড়ে কোথাও যাবোনা।
নোয়াহ্‌’র নৌকা চড়ে যে পালাবে অপর বন্দরে
সে আমার ‘হাম্‌শক্‌ল্‌’, গর্ভস্রাব, আদার ব্যাপারী –
সে যেখানে যায়, যাক্‌, আমি এই পাতার মাদুরে
ততোদিন শুয়ে থাকবো যতোদিন হারানো রাজার
প্রকৃত প্রপৌত্র এসে
এখানে ডোবায় নৌকা – নিয়তি-আদেশে নয় –
নিজ ইচ্ছাবশে।






৫।
যে সভ্যতা অচিরেই জলমগ্ন হবে
হারানো কবিতা এক বহুজন্ম পরে আজ
পাওয়া গেছে তারই এক শ্যাওলা কোঠাতে।

সে ধূসর লিপিখানি হাতে নিয়ে ভাবি –
এখানে কবিতা ছিল,
কবিতার সাথে ছিল
ক্লান্তিহীন সমর ও সঙ্গম –
এ সভ্যতা জলমগ্ন হবে?
মনেহয় মিথ্যাকথা। বানানো বিভ্রম।

তবু ও বিভ্রম ছেড়ে নোয়াহ্‌’র না’য়ে আমি কখনো যাবোনা।
কাঁচের বোতলে পুরে সেই সব কবিতা ও সমর, সঙ্গম
অপেক্ষা করব এই শ্যাওলা-কোঠাতে।
সকল অপর কক্ষ জলমগ্ন হলে
সে বোতল নিজহাতে আকাশে ভাসিয়ে
জলমগ্ন হব আমি
ক্রমে এই সভ্যতারি মতো।

আমার শবের চিহ্ন শকুনে ও শিয়ালে পাবেনা।

৬।
যেন গ্রহান্তর থেকে এতাবৎ উড়েআসে চেনা পাখিগুলি।
পাতাগুলি নেচেওঠে আজো সেই দূরের বাতাসে।
কাক ডাকে। হাই তোলে আদুরে মার্জারী।
ঘাসফুল তোলে শিশু।
বয়স্ক বৃক্ষেরা দেয় ছায়া ও প্রশ্রয়...
হারানো রাজার খোঁজে ফ্যান্‌ভাত নিয়ে
রাজকন্যা চলেগেলে গঞ্জে, বাজারে
সারাদিন একা আমি রক্ষাকরি এই সভ্যতাকে –
কতবার কত কত মানচিত্র ছিঁড়ে
ছেঁড়া টুকরো গুলি তার নীরবে কুড়িয়ে
গড়েওঠে এরকম নির্বিরোধ প্রাসাদ, সভ্যতা-
বাবুই পাখিটি ছাড়া অন্যকোনো ইতিহাসবীদ
ঘূণাক্ষরে সে কাহিনী জানে?

রাত আসে। রাত যায়। কোনোভাবে ঘুমাতে পারিনা।
দূরের বন্যার শব্দ অবিরল বেজেযায় কানে...


৭।
গাছে গাছে বৃষ্টিফুল।
পুনরায় এসেছে বৈশাখ।
পরের বৈশাখে আর এ উদ্যান বৃষ্টিফুলে মুখর হবেনা।
পরের বৈশাখে মেঘ এ ভূগোলে এসে
খুঁজে ফিরবে সে জানালা যাতে একা বসে
রাখালের অপেক্ষার্ত রাজকন্যা একা
ঘুমিয়ে পরেছে বসে চুল বেঁধে বেঁধে ...

পরের বৈশাখ মাস আসার আগেই
সভ্যতা পূর্বাপর জলমগ্ন হবে ...।

অতএব তুমি একা
চুপে চুপে টুকে রেখো
তার সব ডালপালা এবং পত্রালী -
টুকে রেখো ঝোপঝাড় –
টুকিটাকি –
নুড়ি ও পাথর ...

অচিরেই লুপ্ত হবে যে পরিখা এবং প্রাসাদ
তুমি তার উর্দিহীন শেষ কথাকার –
অতএব লেখেরেখো
মর্মকথা ঝর্না আর দাহ্য পাখিদের...।

শিলাগাত্রে এঁকে রেখো
শান্ত মুখ –

হারানো রাজার...

ঘুম ঘর