কার্তিক চন্দ্র সাহা'র অন্তিম কবিতা
আমি
শ্রী কার্ত্তিক চন্দ্র সাহা। জেলা করিমগঞ্জ। পোষ্ট অফিস ফকিরাবাজার। ব্যবসায় বাবার
আমদানী ভালো তাই কলেজে গেছি, বি.এ পাশ করতে পারছি। বেকারত্বের দুশ্চিন্তাও নাই
মনে। এখনো বিয়া শাদি করিনাই। দিন কাটাই পথে পথে ঘুইরা। আড্ডা দিয়া আর বিড়ি সিগারেট
টাইন্যা।
একেকদিন
ভাবি যাই গিয়া। যাই গিয়া এই ঘরবাড়ি ছাইড়া, এই গ্রামগঞ্জ ছাইড়া। যাইগিয়া এই বাজার,
শ্মশান, হাসপাতাল, কবরিস্থান সব পার হইয়া। যাই গিয়া 'নিরুদ্দেশ' হইয়া। কিন্তু আমি
জানিনা 'নিরুদ্দেশ' ঠিক কুন দেশ তবে আমি জানি আমি নিরুদ্দেশ হইলে আমার মা'বাপের
কষ্ট হইব। বড়দা,মেজদারো হইব। বৌদির হইব। ছুট বইনটা আমার ন্যাওটা। তার কষ্ট বেশী
হইব। কিন্তু হেইটাও জানি, যে, আমি শ্রী
কার্ত্তিক চন্দ্র সাহা, আমার লেইগ্যা আটকাইয়া থাকতোনা কিচ্ছুই। তে’ও একেকদিন ভাবি যাই
গিয়া। যাই গিয়া ই ঘরবাড়ি ছাইড়া, এই গ্রাম গঞ্জ ছাইড়া। যাইগিয়া এই বাজার, শ্মশান,
হাসপাতাল, কবরিস্থান সব পার হইয়া। যাই গিয়া 'নিরুদ্দেশ' হইয়া।
আমি
জানিনা 'নিরুদ্দেশ' ঠিক কুন দেশ , আমি জানি ‘নিরুদ্দেশ’ এমন এক দেশ যেখানো দিনের
বেলা যাওন যাইত না।
ছুটো
জেগাত সবে সবরে চিনে। বাসো-গাড়িত উঠলে চিনা মাইনষের হাজার সওয়াল। 'কিউরিসিটি'। 'কই
যাও', 'কেনে যাও', 'কবে আইবায়'... ই সমস্ত কারণে গঞ্জ, গ্রাম, মফস্বলো মানুষ, হয়
নিরুদ্দেশ যায়না আর যুদি যায়, তে তারে লইয়া মাতামাতি করলেও, পোস্টার লাগায় না,
পত্রিকাত বিজ্ঞাপন দেয় না।
একদিন
শেষে আমি ঠিক-অই বাইর হইয়া গেলাম। মনে মনে ই ঘরবাড়ি ছাইড়া, এই গ্রাম গঞ্জ ছাইড়া। এই
বাজার, শ্মশান, হাসপাতাল, কবরিস্থান সব পার হইয়া গেলাম হাটতে হাটতে। হাটতে হাটতে
আমার চুল লম্বা অইল, দাড়ি লম্বা অইল, হাতের, পাউএর নউখ লম্বা অইল। হাটতে হাটতে
হাটতে হাটতে পকেটের পয়সাকড়িও ফুরাইল আস্তে আস্তে।
তারপরে
একদিন আমি আর হাটলাম না। আমি রাস্তার সবচেয়ে কাছের জঙ্গলো ঢুইক্যা পছন্দমতো একটা
গাছের কিনারো দুই হাত মেইল্যা দাড়াইলাম আর মনে মনে, দিনে, রাইতে, দুফরে,
বিকালে,রইদে, বিষ্টি এ, ঝড় এ,তুফানে আমার শরীর অ গজাইল শক্ত বাকল। আমার হাতে পায়ে
হইল পাতা আর ফুলের সংসার। আমার ডালো আইয়া ব’য়, জিরায়, ঝগড়া দরবার করে হাজার কিসমের
কাকপক্ষী আর মনোহয় একেকদিন, যে কুনুদিন হই পাখিটাও আইব ...
আইব,
আইয়া বইয়া, জিরাইয়া আবার যাইব গিয়া উইড়া অই পাখিটাও যেটার জেলা করিমগঞ্জ।
পোষ্ট অফিস ফকিরাবাজার আর যেটা থাকে অই সপড়িগাসো যে বাসার ছুটো ছেলের নাম আসিল
শ্রী কার্ত্তিক চন্দ্র সাহা।
যে অনেক
বচ্ছর ধইরা সপড়ি গাছ হইয়া আসে হই পুকুরপাড়ো।
১২
/০২/২০২১ – ২৯/০৩/২০২৩
বেঙ্গালোর