কাহিনী
'সাইমন, সাইমন' বলে
দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ।
কাঠের দোতলা বাড়ি। অচেনা শহরে
মধ্যরাত। মেঘ। তাতার বাতাস
ফিরছে , নিশিডেকে গলিতে, সড়কে।
এমত আবহে 'সাইমন, সাইমন' বলে
দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ।
মোমবাতি হাতে নিয়ে কাঠের সিঁড়িটি বেয়ে
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি নামতে গিয়েও।
আমি কি 'সাইমন' না'কি
অন্য কেউ? ভাবি, সাইমনই
খুলে দিয়েছিল নাকি
দরজাটি? না'কি সে খোলেনি?
যে ডাকছে সে ফিরে গিয়েছিল না'কি
ঘাতকের ছুরি তার পিঠে বিঁধেছিল?
মোমবাতি হাতে ফিরে এসে
হাতড়াতে থাকি গ্রন্থগুলি।
এই পর্বে কোন গ্রন্থ থেকে কোন দৃশ্য
অভিনীত হবে, আমি কোন চরিত্র – সকলই
বলে দিয়েছিল কেউ, কোনোদিন,
কোনো এক পান্থশালাতে।
এখন কিছুতে আমি
মনে আনতে পারছিনা গ্রন্থনাম এবং আমার
চরিত্র, ভূমিকা কিংবা
কাহিনীর পরিণতি। তবু
'সাইমন, সাইমন' বলে
দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ।
কাঠের দোতলা বাড়ি। অচেনা শহরে
মধ্যরাত। মেঘ। তাতার বাতাস
ফিরছে, নিশিডেকে গলিতে, সড়কে …
৯/২/২০২১
[ আমার স্বপ্নগুলি সচরাচর অদ্ভুত রকমেরই হয়। আজকের স্বপ্নটা যেন আরোও অদ্ভুত। এই স্বপ্নে
আমার বাস্তব স্ত্রী'ই আমার পত্নী। আমাদের শিশুপুত্র আছে একজন। তাকে, একজন আয়ার দায়িত্বে রেখে
বেড়াতে বেরিয়েছি। কিন্তু সঙ্গে যে যুবতীটি সে আমার পত্নী নয়। … বেড়াতে বেরিয়েছি। অচেনা শহর। মেঘলা ঘোধূলি। আমার সঙ্গিনী মেয়েটির পরনে কিরিস্তানি বিবাহ-পোশাক। আমরা শহরের সমস্ত কবরে যাচ্ছি। ফুল রাখছি, বোকে রাখছি। সামান্য পেছনে আমার বাবা ও মা। স্বপ্নে বাবা-মা'র বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। আমিও যুবক। সঙ্গের রমণীটি অত্যন্ত কামোদ্দীপক। গরম যুবতী।
এক সময় স্থির হলো বাড়ি ফেরা হবে। বাড়ি মানে পাহাড়ি শহরের কোনো বাজার রাস্তার কোনে আসাম-টাইপ, তবে দোতলা একটি বাড়ি। একতলায় মা-বাবা থেমে গেলো। দোতলায় ওঠামাত্র ফরাসী আয়াটি আমার সঙ্গিনীটিকে ঝামড়ে উঠলোঃ 'এতো কম বেতনে কি এসব পোষায়? এরপরে, ডিউটি আওয়ার শেষে বাচ্চা দেখলে এক ঘন্টায় এক গিনি...' সঙ্গিনীও কিছু বল্লো তাকে। অতঃপর বিছানায়, ঘুমন্ত শিশুর পাশে শুয়ে পড়লো সে'ও। তখনো সন্ধ্যা হয়নি। নোংরা মেঘে আকাশ আবৃত। দোতলার জানলা থেকে আমি গলীর মোড়ের দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছিলাম যেন কারো। … সে এলো। সে আমার বাস্তবের স্ত্রী। স্বপ্নে সেই কলেজ বয়সী। আমার সঙ্গিনীর সাথে এখন যে ঘুমন্ত শিশু সে আমার আর আমার পত্নীরই ছেলে। পত্নী তাকে দেখতে এসেছে। লুকিয়ে। আমিও চাই সে দেখুক। চাই সে'ই নিয়ে যাক আমাদের শিশুপুত্রটিকে। … তবু যদি অধুনা ঘুমন্ত এই যুবতীটি দেখে ফেলে, তবে …
তবে ঠিক কি হবে কেজানে। তখুনি খেয়াল হল এরপরে কি যে হবে সবই লেখা আছে হুগো'র উপন্যাসে, 'লা মিজারেবল্' এ। কিন্তু কোথায় পাই 'লা মিজারেবল্'? ভাবছি আর শুনতে পাচ্ছি ফিসফিস স্বরে বৌ আমাকে ডাকছে নিচ থেকে। ভয়ে ভয়ে আমি দেখছি যুবতীটির ঘুম ভাঙ্গলো কিনা। না, ভাঙ্গেনি। আমি ছেলে কোলে করে পেছনের লোহা-সিঁড়ি বেয়ে আমার বৌ'এর দিকে যেতে ভাবছি - কি হবে? আমাকে কি আমরণ থাকতে হবে না'কি এই রতিপটিয়সী তবু বদমেজাজ যুবতীর সাথে? আমার বৌ'এর সাথে পুনর্মিলন হবে না'কি কোনোদিন আর? তখন আবারো মনে এলো এরপরে কি যে হবে সবই লেখা আছে হুগো'র উপন্যাসে, 'লা মিজারেবল্' এ। কিন্তু কোথায় পাই 'লা মিজারেবল্'?
এরপরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘোর কাটলে ধীরে ধীরে লেখা হলো কবিতাটি ]